ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’- তোফায়েল আহমেদ আমরা যা করতে চাই, জনগণকে সাথে নিয়ে করতে চাই : তারেক রহমান বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

সিনওয়ার হত্যা: হামাস-হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের বাকি আছেন কে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ২৩ বার

৭ অক্টোবর ইসরাইলি সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।  এরপর গত ১ বছর ধরে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।  যা এখন বিস্তৃত হয়েছে লেবাননেও। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ৭ অক্টোবর হামলার নেপথ্যের নায়কদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।

এসব অভিযানে ইসরাইল পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া থেকে শুরু করে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে। শুধু তাই নয়, এই দুই গোষ্ঠীটির উত্তরসূরিদেরও হত্যা করেছে ইসরাইল।

সবশেষ ইসরাইলি অভিযানে নিহত হয়েছেন হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিনকেও হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। সবমিলিয়ে গত ১ বছরে হামাস এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের যে সব নেতা নিহত হয়েছেন তার দিকে নজর দেওয়া যাক।

সালেহ আল–আরোরি (হামাস)

চলতি বছরের শুরুতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল–আরোরি নিহত হন। তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান ছিলেন। ১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম নেওয়া আল-আরোরির দীর্ঘ ১৫ বছর কাটে ইসরাইলের কারাগারে।

আল–আরোরি দীর্ঘদিন ধরে লেবাননে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন। তিনি ছিলেন হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।  লেবাননে অবস্থান করে হামাস ও হেজবুল্লাহর মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করতেন এই হামাস নেতা। গাজা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হামাসের মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন।

তালেব সামি আবদুল্লাহ (হিজবুল্লাহ)

জুনে ইসরাইলি হামলায় নিহত হওয়া আরেক শীর্ষ কমান্ডার তালেব আবদুল্লাহ। জুন পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে নিহত কমান্ডারদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন এই কমান্ডার।

তার নিহতের ঘটনায় জেরুজালেম পোস্ট দাবি করেছিল, গত ২০ বছর ধরে, আব্দুল্লাহ কিরিয়াত শমোনা, গ্যালিলি প্যান হ্যান্ডেল এবং গোলান মালভূমিত রকেট হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তালেব আবদুল্লাহ। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে তালেব ছিলেন ‘সন্ত্রাসী হামলা বিষয়ে প্রচুর জ্ঞানের উৎস’।

আল নাসের (হিজবুল্লাহ)

জুলাইয়ের শুরুতে হিজবুল্লাহর তৃতীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মুহাম্মদ নিমাহ নাসেরকে হত্যা করে ইসরাইল।  যিনি হজ আবু নামেহ নামেও পরিচিত।  নাসেরের মৃত্যু কোথায় হয়েছে তা সম্পর্কে হিজবুল্লাহ বিস্তারিত কিছু জানায়নি।  ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছিল, নাসের হিজবুল্লাহর আজিজ ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন।  তাদের দাবি, ইসরাইলি ভূখণ্ডে দক্ষিণ-পশ্চিম লেবানন থেকে হামলা চালানোর পেছনে এই ইউনিটই দায়ী।

ফুয়াদ শুকর (হিজবুল্লাহ)

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত জুলাইয়ের শেষ দিকে লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে। ইসরাইল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে প্রাণঘাতি হামলার জন্য ফুয়াদকে দায় করেছিল ইসরাইল।  ওই হামলায় ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী ১২ জন ইসরাইলি শিশু ও কিশোর নিহত হয়। যদিও গোলান মালভূমির হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায় অস্বীকার করেছিল হিজবুল্লাহ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে শুকরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একইসঙ্গে ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন ব্যারাকে বোমা হামলায় অভিযুক্ত করেছিল। ওই হামলায় ২৪১ মার্কিন সামরিক সদস্যের মৃত্যু হয়।  তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হিজবুল্লাহর এই কমান্ডার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অপারেশন সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মোহাম্মদ দেইফ (হামাস)

১ আগস্ট, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার দাবি করে ইসরাইল।  দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, গত ১৩ জুলাই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায় বিমান হামলায় দেইফ নিহত হন। ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার খবর জানার এক দিন পর সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হওয়ার খবর জানা যায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল মোহাম্মদ ডিয়াব ইব্রাহীম আল-মাসরি। কিন্তু ইসরায়েলি বিমান হামলা হতে বাঁচতে তাকে যেভাবে সারাক্ষণ যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করতে হয়, পরে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন ‘দেইফ’ নামে, আরবিতে যার অর্থ ‘অতিথি’।

গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে।  এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এ ছাড়া তিনি হামাসের বোমা বানানোর প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন। তবে সচরাচর প্রকাশ্যে আসতেন না দেইফ।

ইসমাইল হানিয়া (হামাস)

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তেহরানের অভিজাত অতিথি ভবনে গুপ্ত হামলা চালিয়ে গত ৩১ জুলাই তেহরানে হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষীকে হত্যা করে ইসরাইল।

হাসান নাসরুল্লাহ

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন হাসান নাসরুল্লাহ।  গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরাইলের হামলায় নিহত হন তিনি। ওই দিন রাতে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। পরদিন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’

হাশেম সাফিয়েদ্দিন

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিতে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করে।

৯ অক্টোবর ইসরাইলি প্রধামন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরীদের নাম উচ্চারণ না করেই বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহ’র সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করেছি। আমরা নাসরুল্লাহকে এবং নাসরুল্লাহর বিকল্প ও তারও বিকল্প নেতাসহ হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে শেষ করে দিয়েছি।’

এদিকে প্রায় ১০ দিন পার হলেও সাফিয়েদ্দিনের অবস্থা নিয়ে হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার

হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানে ইসরাইলের সবশেষ বড় সাফল্য ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যাকাণ্ড। নতুন হামাসপ্রধান হিসেবে পাঁচমাসও দায়িত্ব চালিয়ে নিতে পারেননি সিনওয়ার।  বুধবার ইসরাইলি অভিযানে দক্ষিণ গাজার রাফায় নিহত হন তিনি।

গাজা যুদ্ধের শুরুতেই শিন বেথ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করেছিল।

ইউনিটটি গত এক বছর ধরে বিরামহীনভাবে কাজ করেও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। গাজায় যুদ্ধ শুরু করার সময় তেল আবিব হুমকি দিয়ে বলেছিল, তারা সিনওয়ারকে জীবিত কিংবা মৃত ধরে আনবে।  অবশেষে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুর মুখে পড়লেন ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই হামাস নেতা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

সিনওয়ার হত্যা: হামাস-হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের বাকি আছেন কে

আপডেট টাইম : ০২:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

৭ অক্টোবর ইসরাইলি সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।  এরপর গত ১ বছর ধরে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।  যা এখন বিস্তৃত হয়েছে লেবাননেও। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ৭ অক্টোবর হামলার নেপথ্যের নায়কদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।

এসব অভিযানে ইসরাইল পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া থেকে শুরু করে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে। শুধু তাই নয়, এই দুই গোষ্ঠীটির উত্তরসূরিদেরও হত্যা করেছে ইসরাইল।

সবশেষ ইসরাইলি অভিযানে নিহত হয়েছেন হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিনকেও হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। সবমিলিয়ে গত ১ বছরে হামাস এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের যে সব নেতা নিহত হয়েছেন তার দিকে নজর দেওয়া যাক।

সালেহ আল–আরোরি (হামাস)

চলতি বছরের শুরুতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল–আরোরি নিহত হন। তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান ছিলেন। ১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম নেওয়া আল-আরোরির দীর্ঘ ১৫ বছর কাটে ইসরাইলের কারাগারে।

আল–আরোরি দীর্ঘদিন ধরে লেবাননে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন। তিনি ছিলেন হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী।  লেবাননে অবস্থান করে হামাস ও হেজবুল্লাহর মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করতেন এই হামাস নেতা। গাজা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হামাসের মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন।

তালেব সামি আবদুল্লাহ (হিজবুল্লাহ)

জুনে ইসরাইলি হামলায় নিহত হওয়া আরেক শীর্ষ কমান্ডার তালেব আবদুল্লাহ। জুন পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে নিহত কমান্ডারদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন এই কমান্ডার।

তার নিহতের ঘটনায় জেরুজালেম পোস্ট দাবি করেছিল, গত ২০ বছর ধরে, আব্দুল্লাহ কিরিয়াত শমোনা, গ্যালিলি প্যান হ্যান্ডেল এবং গোলান মালভূমিত রকেট হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তালেব আবদুল্লাহ। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে তালেব ছিলেন ‘সন্ত্রাসী হামলা বিষয়ে প্রচুর জ্ঞানের উৎস’।

আল নাসের (হিজবুল্লাহ)

জুলাইয়ের শুরুতে হিজবুল্লাহর তৃতীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মুহাম্মদ নিমাহ নাসেরকে হত্যা করে ইসরাইল।  যিনি হজ আবু নামেহ নামেও পরিচিত।  নাসেরের মৃত্যু কোথায় হয়েছে তা সম্পর্কে হিজবুল্লাহ বিস্তারিত কিছু জানায়নি।  ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছিল, নাসের হিজবুল্লাহর আজিজ ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন।  তাদের দাবি, ইসরাইলি ভূখণ্ডে দক্ষিণ-পশ্চিম লেবানন থেকে হামলা চালানোর পেছনে এই ইউনিটই দায়ী।

ফুয়াদ শুকর (হিজবুল্লাহ)

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত জুলাইয়ের শেষ দিকে লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে। ইসরাইল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে প্রাণঘাতি হামলার জন্য ফুয়াদকে দায় করেছিল ইসরাইল।  ওই হামলায় ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী ১২ জন ইসরাইলি শিশু ও কিশোর নিহত হয়। যদিও গোলান মালভূমির হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায় অস্বীকার করেছিল হিজবুল্লাহ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে শুকরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একইসঙ্গে ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন ব্যারাকে বোমা হামলায় অভিযুক্ত করেছিল। ওই হামলায় ২৪১ মার্কিন সামরিক সদস্যের মৃত্যু হয়।  তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হিজবুল্লাহর এই কমান্ডার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অপারেশন সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মোহাম্মদ দেইফ (হামাস)

১ আগস্ট, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার দাবি করে ইসরাইল।  দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, গত ১৩ জুলাই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায় বিমান হামলায় দেইফ নিহত হন। ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার খবর জানার এক দিন পর সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হওয়ার খবর জানা যায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল মোহাম্মদ ডিয়াব ইব্রাহীম আল-মাসরি। কিন্তু ইসরায়েলি বিমান হামলা হতে বাঁচতে তাকে যেভাবে সারাক্ষণ যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করতে হয়, পরে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন ‘দেইফ’ নামে, আরবিতে যার অর্থ ‘অতিথি’।

গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে।  এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এ ছাড়া তিনি হামাসের বোমা বানানোর প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন। তবে সচরাচর প্রকাশ্যে আসতেন না দেইফ।

ইসমাইল হানিয়া (হামাস)

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তেহরানের অভিজাত অতিথি ভবনে গুপ্ত হামলা চালিয়ে গত ৩১ জুলাই তেহরানে হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষীকে হত্যা করে ইসরাইল।

হাসান নাসরুল্লাহ

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন হাসান নাসরুল্লাহ।  গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরাইলের হামলায় নিহত হন তিনি। ওই দিন রাতে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। পরদিন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’

হাশেম সাফিয়েদ্দিন

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিতে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করে।

৯ অক্টোবর ইসরাইলি প্রধামন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরীদের নাম উচ্চারণ না করেই বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহ’র সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করেছি। আমরা নাসরুল্লাহকে এবং নাসরুল্লাহর বিকল্প ও তারও বিকল্প নেতাসহ হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে শেষ করে দিয়েছি।’

এদিকে প্রায় ১০ দিন পার হলেও সাফিয়েদ্দিনের অবস্থা নিয়ে হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার

হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানে ইসরাইলের সবশেষ বড় সাফল্য ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যাকাণ্ড। নতুন হামাসপ্রধান হিসেবে পাঁচমাসও দায়িত্ব চালিয়ে নিতে পারেননি সিনওয়ার।  বুধবার ইসরাইলি অভিযানে দক্ষিণ গাজার রাফায় নিহত হন তিনি।

গাজা যুদ্ধের শুরুতেই শিন বেথ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করেছিল।

ইউনিটটি গত এক বছর ধরে বিরামহীনভাবে কাজ করেও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। গাজায় যুদ্ধ শুরু করার সময় তেল আবিব হুমকি দিয়ে বলেছিল, তারা সিনওয়ারকে জীবিত কিংবা মৃত ধরে আনবে।  অবশেষে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুর মুখে পড়লেন ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই হামাস নেতা।