অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমঃ
যে দিন হাতে তুলে কলম নারী অধিকারের পক্ষে লিখতে শিখেছি,সে দিনই নিজের জীবনে ডেকে আনি সর্বনাশ। বহুজন বির্তকিত নারী লেখক তসলিমা নাসরিনের সাথে তুলনা করে, ব্যাঙ করে মুখ ভ্যাংচি দিতে থাকে। আমি কি এ সব ডড়াই? হাঁটতে থাকি জিক জাক পথে। কিন্তু
কি হবে নারীর দুর্ভাগ্যের কথা কলমের আঁচড়ে তুলে এনে।
জাতীয় দৈনিকে, (নারী কথা কও,নারী তুমি পারবেই) কাব্য গ্রন্থে,কবিতা, প্রবন্ধ,অনলাইন মাধ্যমে নারী সচেতনতা তৈরী করার জন্য বহু লেখালেখি করে গেলাম। পারলাম কই নারীকে জাগ্রত করতে।নারী তো জেগে ঘুমায়, স্বামী সন্তানের সুখেই থাকে সুখী। তার নিজস্ব সত্তাকে নিয়ে ভাবতে চায় না। আর ভাববেই বা কি ভাবে।পরিবার ততাদের পড়াশোনা করাতে চায় না। চোখ কাল খোলার আগেই বিয়ে দিয়ে স্বামীর বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। এরপর টানতে থাকে স্বামী সন্তানের গরুর গাড়ী।চাল ডাল,লবণ এক সাথে করতে করতে চূলে পাক ধরে যায়।
অপর পক্ষে নারীরা স্বাবলম্বী হবে, ঘর থেকে বেরিয়ে চাকুরী করবে, আঙ্গুল তুলে নারী তার অধিকারের কথা বলবে, আমাদের সমাজ তা পছন্দ করে না। বরং কুয়ার ব্যাঙ কুয়ায় বসে করুক ঘ্যাং ঘ্যাং এই হলো অধিকাংশ জনগনের প্রত্যাশা।
আমাদের দেশের নারীরা তারপরও পিছিয়ে নেই।রাষ্ট্র পরিচালনা, ব্যবসা বানিজ্য, রাজনীতি, কর্মপরিকল্পনা, হিমালয় বিজয় থেকে শুরু করে সমাজ বির্নিমানে অবদান রেখে যাচ্ছে। আজকাল কর্ম, ধর্ম, মানানসই আড্ডা,এমন কোন অঙ্গন নেই, যেখানে নারীর প্রতিফলন নেই। গর্বময় হাতের ছোয়া নেই।
নারীর জন্য নেতিবাচক দিক হলো — জীবনের তিনটি অধ্যায়েই নারী থাকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল।শিশু বয়সে পিতার ঘাড়ে, বিয়ের পর স্বামীর উপর,বৃদ্ধ বয়সে পুত্রের নির্দেশনায় ওঠে বসে।নারীর কোন অর্থনৈতিক আয় নেই, সঞ্চয়ের ঘর থাকে শুণ্য।স্বামীর রাজ্যে কেবল সে পাহারদার। খায়, ঘুমায়,সন্তান জন্ম দেয় ও লালন পালন করে,রান্না ঘরে রাধিঁকা, শয়ন কক্ষে বাসরের ফুল ফোটায়। সংসারে রাজারহাল,মাথা বোজাই অর্থ,বিত্ত থাকলেও নারীর তাতে অংশিদারিত্ব নেই। নুনের বাটি,এমন কি জঠর নিসৃত সন্তানও তার নয়।একারণেই কপর্দকহীন বৃদ্ধ বয়সে নারীকে সহ্য করতে হয় নানা যন্ত্রণা।কখনও বৃদ্ধাশ্রমে হয় ঠাঁই বা গলা ধাক্কা খেয়ে নেমে আসতে হয় রাস্তায়।এই সমস্ত নীতিহীন অত্যাচার কারো কী কাম্য।
নারী নেত্রী,ঞ্জানী গুনী কলম যুদ্ধা,, সমাজ কর্মি,সরকার প্রনীত বিধি বিধান নারী মুক্তি ও অধিকারের কথা বলে।নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে না।শেষ বয়সে নারীর হাতে কিছু টাকা পয়সা থাকুক, তাও বলে না।বরং কর্মজীবি নারীর অর্জিত অর্থও কৌশলে পুরুষরা হাতিয়ে নেয় নিজের তহবিলে।নারী প্রতিবাদ করবে দুরের কথা, বরং নীরব দর্শক হয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে।পাছে ভয় সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে।
নারীর অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চাইলে, সামাজিক দৃস্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শুধু কাবিননামার দেনমোহরের টাকার কথা ভাবলে হবে না। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের দলিল পত্রে স্থায়ীভাবে মাসিক ভাতা বা সন্মানী প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে স্ত্রীর হাতে পারিবারিক বেতন তুলে দিবে।সে তার প্রয়োজনে ইচ্ছে মত খরচ করবে বা ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রেখে দিবে। সরকারকে একটি বিধি প্রবর্তন করে প্রঞ্জাপন জারির মাধ্যমে সুদৃঢ় আইনে পরিনত করতে হবে।
বৃদ্ধ বয়সে জমা খরচের খাতায় নারীর হাতে কিছু নগদ সঞ্চয় থাকলে , যদু মধু যে কেউ সেবার হাত প্রসারিত করবে। কেন না, টাকা থাকলে না কি কাঠের পুতুলও বাবা ডাকে।
য়ারা বাসার কাজ করানোর জন্য বুয়া রাখে, তারও কিন্তু একটা মাসিক বেতন নির্ধারিত থাকে।আমরা তো জানি পৃথিবীতে মা’য়ের চেয়ে আপন কেহ নেই। সেই মা’য়ের জন্য পারিবারিক বেতন নির্ধারিত থাকলে ক্ষতি কি?
বৃদ্ধ বয়সে নারীর অসয়াত্ব দুর করতে চাইলে অতি দ্রুত সার্বজনিন পেনশান স্কীমের ন্যায় পারিবারিক বেতন স্কীম চালু করার দাবি উত্তাপন করছি।তবে এই ভাতা কে দিবে, কি ভাবে তা ধার্ষ করা হবে। আয়ের উৎসের উপর ভিত্তি করে স্বামী জীবিত কালিন সময়ে তা স্ত্রীকে প্রদান করবে। সন্তানরা আয় রোজগার করতে সমর্থবান হলে — তারাও নিদিষ্ট ও নির্ধারিত হারে মা কে ভাতা প্রদান করবে।এ ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপ থাকতে হবে।
পরিশেষে– জাতি, ধর্ম, শ্রেণি,বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানব সত্তার প্রতি আবেদন রাখছি আসুন নারী জাতির প্রতি হই আন্তরিক। মেয়ে মানুষ নয়, মানুষ জাতি হিসেবে সর্ব শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে করি নারীকে অধিষ্ঠিত।