ঢাকা ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূসের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৭ বার

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত এবং উভয় দেশকে তাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে উভয়দেশকে আবারও জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায়, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং শিক্ষার্থী বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় তুরস্কের মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি অব্যাহত সহায়তা দেওয়ার জন্য তুরস্কের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদলের সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত গত বছর তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১০ হাজার তাঁবু পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসন্ন ওয়ার্ল্ড হালাল সামিট এবং ইস্তাম্বুলে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তুরস্ক বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরো জানান, তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে, যারা মূলত নতুন ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সুযোগ খুঁজে বের করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে চাই।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যার সময় তুরস্কের আরেকটি দল দেশটি সফর করেছে। তারা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে এক দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে উভয় দেশ থেকে রফতানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্কের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন।
রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের আহ্বান
এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস অ্যান্ড্রুজ গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার সময় ড. ইউনূস এই আহ্বান জানান। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অ্যান্ড্রুজ প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, সহিংসতার কারণে রাখাইন রাজ্যে একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে এবং রোহিঙ্গাসহ বাস্তুচ্যুত ও অনাহারী মানুষদের জন্য জরুরিভাবে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে কমপক্ষে ৩.১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে রাখাইন রাজ্যের শত হাজার মানুষ আছে, যেখানে বিদ্রোহীদের দলগুলো বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাদের বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কক্সবাজার সীমান্ত জেলাগুলোতে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য একটি জাতিসংঘ দ্বারা নিশ্চিত নিরাপদ অঞ্চল তৈরি এবং তাদের সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাদের সাহায্য পাওয়ার জন্য এটি হবে সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ, রাখাইন সংকট নিরসনে এটি একটি ভাল সূচনা হতে পারে এবং হাজার হাজার নতুন উদ্বাস্তু বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা রাখাইন সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিয়ে আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ দূতের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বে বিপ্লব নিয়ে আইসিসির তদন্ত নিয়েও আলোচনা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূসের

আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত এবং উভয় দেশকে তাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে উভয়দেশকে আবারও জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায়, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং শিক্ষার্থী বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় তুরস্কের মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি অব্যাহত সহায়তা দেওয়ার জন্য তুরস্কের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদলের সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত গত বছর তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১০ হাজার তাঁবু পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসন্ন ওয়ার্ল্ড হালাল সামিট এবং ইস্তাম্বুলে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তুরস্ক বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরো জানান, তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে, যারা মূলত নতুন ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সুযোগ খুঁজে বের করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে চাই।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যার সময় তুরস্কের আরেকটি দল দেশটি সফর করেছে। তারা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে এক দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে উভয় দেশ থেকে রফতানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্কের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন।
রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের আহ্বান
এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস অ্যান্ড্রুজ গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার সময় ড. ইউনূস এই আহ্বান জানান। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অ্যান্ড্রুজ প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, সহিংসতার কারণে রাখাইন রাজ্যে একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে এবং রোহিঙ্গাসহ বাস্তুচ্যুত ও অনাহারী মানুষদের জন্য জরুরিভাবে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে কমপক্ষে ৩.১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে রাখাইন রাজ্যের শত হাজার মানুষ আছে, যেখানে বিদ্রোহীদের দলগুলো বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাদের বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কক্সবাজার সীমান্ত জেলাগুলোতে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য একটি জাতিসংঘ দ্বারা নিশ্চিত নিরাপদ অঞ্চল তৈরি এবং তাদের সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাদের সাহায্য পাওয়ার জন্য এটি হবে সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ, রাখাইন সংকট নিরসনে এটি একটি ভাল সূচনা হতে পারে এবং হাজার হাজার নতুন উদ্বাস্তু বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা রাখাইন সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিয়ে আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ দূতের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বে বিপ্লব নিয়ে আইসিসির তদন্ত নিয়েও আলোচনা হয়।