ঢাকা ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজবুল্লাহ-হামাস-ইরানের যত নেতাকে হত্যা করেছে ইসরাইল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২৩ বার

সম্প্রতি ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে যে, তারা বৈরুতে বড় ধরনের এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে ইসরাইলি বাহিনী বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলায়। যা নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়।

হিজবুল্লাহ পরে এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তিনি ৩২ বছর ধরে সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছিলেন এবং লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

নাসরুল্লাহ ছাড়াও ইসরাইল সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে। যা গত বছরের ৭ অক্টোবরে পর থেকে গোটা অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক কিছু হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যের এসব রাজনৈতিক নেতা এবং সামরিক কমান্ডারদের বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানের নেতা। তাদের সম্পর্কে বিস্তারতি তুলে ধরা হলো-

হিজবুল্লাহ:

হাসান নাসরুল্লাহ: ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইব্রাহিম কুবাইসি: ২৪ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিম কুবাইসি নিহত হন। তিনি হিজবুল্লাহর রকেট বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ইব্রাহিম আকিল: ২০ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর অপারেশন কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল নিহত হন।

ফুয়াদ শুকুর: ৩০ জুলাই বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন। তিনি নাসরুল্লাহর ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

হামাস:

মোহাম্মদ দেইফ: ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, ১৩ জুলাই খান ইউনিসে হামলার সময় হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন। যদিও হামাস এ খবর উড়িয়ে দিয়েছে।

ইসমাইল হানিয়া: ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে এক গুপ্ত হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হন।

সালেহ আল-আরাউরি: জানুয়ারিতে বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় আরাউরি নিহত হন।

ইরান:

ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের এলিট কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং তার ডেপুটি মোহাম্মদ হাদি হাজরিয়াহিমি গত এপ্রিলে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। হামলাটি দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ধ্বংস করে দিয়েছিল।

ইসরাইলি বিমান হামলায় লেবাননে গত কয়েক মাসে শীর্ষ হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানি কমান্ডারদের হত্যার ফলে এই অঞ্চলে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া

নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর ইরান তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইরান তার কূটনৈতিক সম্পদ এবং প্রতিনিধিদের ওপর যে কোনো হামলা সহ্য করবে না এবং প্রয়োজন হলে তার জাতীয় এবং নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

লেবাননে চলমান সংঘাত

এদিকে ইসরাইলি হামলায় নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর লেবাননে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ইসরাইলি হামলায় লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু শনিবারের হামলাতেই ৩৩ জন নিহত এবং ১৯৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরাইলের অব্যাহত আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ ইসরাইল হামলা চালিয়ে যাবে। সূত্র: আল জাজিরা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হিজবুল্লাহ-হামাস-ইরানের যত নেতাকে হত্যা করেছে ইসরাইল

আপডেট টাইম : ০৬:১৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে যে, তারা বৈরুতে বড় ধরনের এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে ইসরাইলি বাহিনী বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলায়। যা নাসরুল্লাহকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়।

হিজবুল্লাহ পরে এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তিনি ৩২ বছর ধরে সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছিলেন এবং লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

নাসরুল্লাহ ছাড়াও ইসরাইল সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে। যা গত বছরের ৭ অক্টোবরে পর থেকে গোটা অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক কিছু হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যের এসব রাজনৈতিক নেতা এবং সামরিক কমান্ডারদের বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানের নেতা। তাদের সম্পর্কে বিস্তারতি তুলে ধরা হলো-

হিজবুল্লাহ:

হাসান নাসরুল্লাহ: ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইব্রাহিম কুবাইসি: ২৪ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিম কুবাইসি নিহত হন। তিনি হিজবুল্লাহর রকেট বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ইব্রাহিম আকিল: ২০ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর অপারেশন কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল নিহত হন।

ফুয়াদ শুকুর: ৩০ জুলাই বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন। তিনি নাসরুল্লাহর ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

হামাস:

মোহাম্মদ দেইফ: ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, ১৩ জুলাই খান ইউনিসে হামলার সময় হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন। যদিও হামাস এ খবর উড়িয়ে দিয়েছে।

ইসমাইল হানিয়া: ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে এক গুপ্ত হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হন।

সালেহ আল-আরাউরি: জানুয়ারিতে বৈরুতের দক্ষিণে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় আরাউরি নিহত হন।

ইরান:

ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের এলিট কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং তার ডেপুটি মোহাম্মদ হাদি হাজরিয়াহিমি গত এপ্রিলে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। হামলাটি দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ধ্বংস করে দিয়েছিল।

ইসরাইলি বিমান হামলায় লেবাননে গত কয়েক মাসে শীর্ষ হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানি কমান্ডারদের হত্যার ফলে এই অঞ্চলে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া

নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর ইরান তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইরান তার কূটনৈতিক সম্পদ এবং প্রতিনিধিদের ওপর যে কোনো হামলা সহ্য করবে না এবং প্রয়োজন হলে তার জাতীয় এবং নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

লেবাননে চলমান সংঘাত

এদিকে ইসরাইলি হামলায় নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর লেবাননে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ইসরাইলি হামলায় লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু শনিবারের হামলাতেই ৩৩ জন নিহত এবং ১৯৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরাইলের অব্যাহত আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ‘বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ ইসরাইল হামলা চালিয়ে যাবে। সূত্র: আল জাজিরা