ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে মিললো বিশাল সুখবর শরতে কাশফুলের রাজ্যে টানা ৪ দিনের ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ বাফুফে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন যারা শেখ হাসিনার ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এমন দেশ গড়তে চাই, সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা- জ্বালানি সংকট দূর করতে বাপেক্স আরও ১৫০ কূপ খনন করবে: জ্বালানি উপদেষ্টা ইংল্যান্ড আমাদের সঙ্গে ৮০০ করে, বাংলাদেশও হারায়

পোড়া মরদেহ দাফনের পর জানলেন, ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে’ ছেলে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১০ বার

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদরাসা ছাত্র মো. রিফাত হোসেন। সেদিনই জানা যায়, আশুলিয়া থানার সামনে একটি গাড়িতে পুড়ে গেছে কিছু মরদেহ। এরমধ্যে একজনকে নিজেদের ছেলে বলে চিহ্নিত করে রিফাতের বাবা-মা। সেই মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফনও করেন তারা। কিন্তু এর কয়েক দিন পর ফেসবুকে দেখতে পান তাদের ছেলে মাথায় বুলেট নিয়ে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে।

এরপর অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয় সেই বুলেট। হারিয়ে ফেলা ছেলেকে ফিরে পান বাবা-মা। তবে রিফাত হারিয়ে ফেলেছে তার পুরনো বেশিরভাগ স্মৃতি। রিফাতের চিকিৎসা ব্যয় ও নানাবিধ খরচের চাপে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

রিফাত আশুলিয়ার দারুল ইসলাম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে সে।

সম্প্রতি রিফাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস রিফাতের। ঘরের ভেতরে চৌকিতে শুয়ে এটাসেটা প্রশ্ন করছে পাশে বসা বাবা-মাকে। কখনও কখনও হাসছে, কখনও কখনও কাঁদছে। চেষ্টা করছে কিছু পড়তে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। পাশে বসে থাকা বন্ধুদের নামও মনে নেই তার। ছলছল চোখে ছেলের পাশে বসে থাকা বাবা-মা জানালেন রিফাতকে খুঁজে পাওয়ার গল্প।

পরিবার জানায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় যায় রিফাত। এরমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েকবার ফোনেও কথা হয়। কিন্তু বিকেলেন দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয় রিফাত। তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশের কয়েকটি হাসপাতালেও রিফাতের খোঁজ নেন বাবা-মাসহ স্থানীয় আরও অনেকেই। তবে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরদিন তারা জানতে পারেন, বাইপাইলে একটি গাড়িতে কয়েকটি মরদেহ রয়েছে। সেখানে গিয়ে একটি মরদেহের দাঁত ও পোশাক দেখে বাবা-মায়ের মনে হয় এটিই তাদের ছেলে রিফাত। সেই মরদেহ নিয়ে বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। লাশ দাফনের পর মিলাদ পড়িয়ে বাবা-মা ফিরে আসেন আশুলিয়ায়। এরপরই ফেসবুকে দেখতে পান, রিফাত বেঁচে আছে! হাসপাতালে ভর্তি।

নিখোঁজের পর মরদেহ পেয়ে শান্তনা পাওয়া বাবা-মা ছেলে জীবিত আছে শুনে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তবে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ছেলে পুরনো স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে জেনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

রিফাতের মা পোশাক শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, ‘ছেলের মুখে আবার মা ডাক শুনছি। ছেলেকে পাইলাম; কিন্তু ভালোমতন তো পাইলাম না।’

রিফাতের বাবা রাজমিস্ত্রী লুৎফর প্রামানিক বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে সব হারিয়ে ফেলেছিলাম। লাশ পেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু জীবিত ছেলেকে ফিরে পেয়ে সব ফিরে পেয়েছি। তবে আমার ছেলে তার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে।’

ছেলেকে ফিরে পেলেও শঙ্কায় দিন কাটছে রিফাতের পরিবারের। কাজকর্ম ছেড়ে ছেলের সেবায় দিন কাটছে তাদের।

রিফাতের বাবা লুৎফর প্রামাণিক বলেন, ‘আমার ছেলে তো এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইছিল। পড়তে পারবে কি না জানি না। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে পারব কি না, তা-ও জানি না। তাই সরকারের কাছে একটু সহযোগিতা চাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে

পোড়া মরদেহ দাফনের পর জানলেন, ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে’ ছেলে

আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদরাসা ছাত্র মো. রিফাত হোসেন। সেদিনই জানা যায়, আশুলিয়া থানার সামনে একটি গাড়িতে পুড়ে গেছে কিছু মরদেহ। এরমধ্যে একজনকে নিজেদের ছেলে বলে চিহ্নিত করে রিফাতের বাবা-মা। সেই মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফনও করেন তারা। কিন্তু এর কয়েক দিন পর ফেসবুকে দেখতে পান তাদের ছেলে মাথায় বুলেট নিয়ে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে।

এরপর অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয় সেই বুলেট। হারিয়ে ফেলা ছেলেকে ফিরে পান বাবা-মা। তবে রিফাত হারিয়ে ফেলেছে তার পুরনো বেশিরভাগ স্মৃতি। রিফাতের চিকিৎসা ব্যয় ও নানাবিধ খরচের চাপে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

রিফাত আশুলিয়ার দারুল ইসলাম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে সে।

সম্প্রতি রিফাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস রিফাতের। ঘরের ভেতরে চৌকিতে শুয়ে এটাসেটা প্রশ্ন করছে পাশে বসা বাবা-মাকে। কখনও কখনও হাসছে, কখনও কখনও কাঁদছে। চেষ্টা করছে কিছু পড়তে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। পাশে বসে থাকা বন্ধুদের নামও মনে নেই তার। ছলছল চোখে ছেলের পাশে বসে থাকা বাবা-মা জানালেন রিফাতকে খুঁজে পাওয়ার গল্প।

পরিবার জানায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় যায় রিফাত। এরমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েকবার ফোনেও কথা হয়। কিন্তু বিকেলেন দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয় রিফাত। তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশের কয়েকটি হাসপাতালেও রিফাতের খোঁজ নেন বাবা-মাসহ স্থানীয় আরও অনেকেই। তবে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরদিন তারা জানতে পারেন, বাইপাইলে একটি গাড়িতে কয়েকটি মরদেহ রয়েছে। সেখানে গিয়ে একটি মরদেহের দাঁত ও পোশাক দেখে বাবা-মায়ের মনে হয় এটিই তাদের ছেলে রিফাত। সেই মরদেহ নিয়ে বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। লাশ দাফনের পর মিলাদ পড়িয়ে বাবা-মা ফিরে আসেন আশুলিয়ায়। এরপরই ফেসবুকে দেখতে পান, রিফাত বেঁচে আছে! হাসপাতালে ভর্তি।

নিখোঁজের পর মরদেহ পেয়ে শান্তনা পাওয়া বাবা-মা ছেলে জীবিত আছে শুনে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তবে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ছেলে পুরনো স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে জেনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

রিফাতের মা পোশাক শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, ‘ছেলের মুখে আবার মা ডাক শুনছি। ছেলেকে পাইলাম; কিন্তু ভালোমতন তো পাইলাম না।’

রিফাতের বাবা রাজমিস্ত্রী লুৎফর প্রামানিক বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে সব হারিয়ে ফেলেছিলাম। লাশ পেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু জীবিত ছেলেকে ফিরে পেয়ে সব ফিরে পেয়েছি। তবে আমার ছেলে তার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে।’

ছেলেকে ফিরে পেলেও শঙ্কায় দিন কাটছে রিফাতের পরিবারের। কাজকর্ম ছেড়ে ছেলের সেবায় দিন কাটছে তাদের।

রিফাতের বাবা লুৎফর প্রামাণিক বলেন, ‘আমার ছেলে তো এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইছিল। পড়তে পারবে কি না জানি না। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে পারব কি না, তা-ও জানি না। তাই সরকারের কাছে একটু সহযোগিতা চাই।’