ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজার্ভ টেকসই হওয়া নিয়ে শঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২২:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫ বার
বিদেশি ঋণের মাধ্যমে বাড়া রিজার্ভও ফের কমতে শুরু করেছে। আইএমএফ, এডিবি, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কোরিয়ার ঋণ ও রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে জুন শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২৭.১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। আগস্ট শেষে ওই গ্রস রিজার্ভ ২৫.৬৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, আইএমএফের হিসাবে যা ২০.৫৯ বিলিয়ন (বিপিএম-৬) আর ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলার। দেশের এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

পাশাপাশি ঋণনির্ভর রিজার্ভ টেকসই হবে না বলেও মত বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা আহরণ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, রিজার্ভ ২০.৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আগামী সপ্তাহে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) বিল পরিশোধে যাবে। তখন আবারও নিট রিজার্ভ কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা দিয়ে টেকসই রিজার্ভ গঠন করা সম্ভব নয়। এর জন্য রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে।’ রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্সে যতক্ষণ পর্যন্ত আড়াই শতাংশের ভূত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত রেমিট্যান্স বাড়বে না। কারণ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা মধ্যস্বত্বভোগীরা খেয়ে ফেলে।

প্রতিবছর কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে আট থেকে ১২ লাখ লোক বিদেশে যায়। কিন্তু রেমিট্যান্সে তার কোনো প্রতিফলন নেই। প্রণোদনা না দিয়ে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা গেলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের রিজার্ভ নিয়ে কিছু চিন্তা তো আছেই। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য বিপদগ্রস্ত দেশের মতো অবস্থা বাংলাদেশে কখনোই হবে না।

যেমন—শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান।’

গত ২৪ জুন আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তি, যা পরিমাণে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন দফায় আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি ডলার আরো চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯.৩০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার, গত ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ১০০.৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৩৪ কোটি ডলার। নতুন করে ঋণ নিলে আবার ১০০ বিলিয়ন ছাড়াবে বিদেশি ঋণ।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, গড়ে জিডিপির ৪০ শতাংশ ঋণ মানসম্মত। এখন বাংলাদেশের ঋণের হার ৩৫ শতাংশ হয়ে গেছে। ঋণের এই হার বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আমাদের সক্ষমতার চেয়ে ঋণের বোঝা কম নয়। এই চাপ কতটা সামলে সামনে এগোনো যাবে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই ভাবা উচিত বলে মত দেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে হলে প্রবাসীদের সহজে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। উচ্চ শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বন্ড তৈরি করতে হবে। তাঁরা রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী নন। তাই তাঁরা যাতে বিশ্বের যেকোনো দেশে বসে ডিজিটালি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন আবার উঠিয়েও নিতে পারেন, সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। এখন বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য যেসব ইনস্ট্রুমেন্ট আছে সেগুলোর জন্য অনেক কাগজপত্র লাগে। পাশাপাশি বিনিয়োগপ্রক্রিয়াও খুব জটিল। এই প্রক্রিয়া সহজ করা গেলে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং দেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে হলে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এটা স্থিতিশীল না হলে সব দিকেই সমস্যা হয়। অস্থিরতা থাকলে ভবিষ্যতের পেমেন্টগুলো অনেক আগেই করতে হয়। তখন রিজার্ভ ক্ষয় হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রিজার্ভ টেকসই হওয়া নিয়ে শঙ্কা

আপডেট টাইম : ১১:২২:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিদেশি ঋণের মাধ্যমে বাড়া রিজার্ভও ফের কমতে শুরু করেছে। আইএমএফ, এডিবি, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কোরিয়ার ঋণ ও রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে জুন শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২৭.১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। আগস্ট শেষে ওই গ্রস রিজার্ভ ২৫.৬৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, আইএমএফের হিসাবে যা ২০.৫৯ বিলিয়ন (বিপিএম-৬) আর ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলার। দেশের এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

পাশাপাশি ঋণনির্ভর রিজার্ভ টেকসই হবে না বলেও মত বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা আহরণ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, রিজার্ভ ২০.৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আগামী সপ্তাহে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) বিল পরিশোধে যাবে। তখন আবারও নিট রিজার্ভ কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা দিয়ে টেকসই রিজার্ভ গঠন করা সম্ভব নয়। এর জন্য রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে।’ রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্সে যতক্ষণ পর্যন্ত আড়াই শতাংশের ভূত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত রেমিট্যান্স বাড়বে না। কারণ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা মধ্যস্বত্বভোগীরা খেয়ে ফেলে।

প্রতিবছর কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে আট থেকে ১২ লাখ লোক বিদেশে যায়। কিন্তু রেমিট্যান্সে তার কোনো প্রতিফলন নেই। প্রণোদনা না দিয়ে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা গেলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের রিজার্ভ নিয়ে কিছু চিন্তা তো আছেই। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য বিপদগ্রস্ত দেশের মতো অবস্থা বাংলাদেশে কখনোই হবে না।

যেমন—শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান।’

গত ২৪ জুন আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তি, যা পরিমাণে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন দফায় আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি ডলার আরো চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯.৩০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার, গত ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ১০০.৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৩৪ কোটি ডলার। নতুন করে ঋণ নিলে আবার ১০০ বিলিয়ন ছাড়াবে বিদেশি ঋণ।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, গড়ে জিডিপির ৪০ শতাংশ ঋণ মানসম্মত। এখন বাংলাদেশের ঋণের হার ৩৫ শতাংশ হয়ে গেছে। ঋণের এই হার বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আমাদের সক্ষমতার চেয়ে ঋণের বোঝা কম নয়। এই চাপ কতটা সামলে সামনে এগোনো যাবে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই ভাবা উচিত বলে মত দেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে হলে প্রবাসীদের সহজে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। উচ্চ শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বন্ড তৈরি করতে হবে। তাঁরা রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী নন। তাই তাঁরা যাতে বিশ্বের যেকোনো দেশে বসে ডিজিটালি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন আবার উঠিয়েও নিতে পারেন, সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। এখন বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য যেসব ইনস্ট্রুমেন্ট আছে সেগুলোর জন্য অনেক কাগজপত্র লাগে। পাশাপাশি বিনিয়োগপ্রক্রিয়াও খুব জটিল। এই প্রক্রিয়া সহজ করা গেলে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং দেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে হলে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এটা স্থিতিশীল না হলে সব দিকেই সমস্যা হয়। অস্থিরতা থাকলে ভবিষ্যতের পেমেন্টগুলো অনেক আগেই করতে হয়। তখন রিজার্ভ ক্ষয় হয়।