ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

আরও সংকোচন হচ্ছে মুদ্রানীতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
  • ২১ বার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও এ নিষ্ফল পদক্ষেপেই ভরসা রাখতে চাচ্ছেন গভর্নর। নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি আরও সংকোচনের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ধাক্কা সামাল দিতে এসএমই খাতকে শক্তিশালী করার কৌশল থাকছে এবারের মুদ্রানীতিতে।

বুধবার এক বৈঠকে এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা, বিআইবিএমের ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, রেপিডের ড. মো. আবু ইউসুফ, ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম, এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন, সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করীম, সিনিয়র সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। তবে বৈঠকে অনেক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অংশ নেননি বলে জানা গেছে।

অংশীজনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এবারের মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পথনির্দেশনা আসছে। কারণ গত মুদ্রানীতিতেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন গভর্নর। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। কবে নাগাদ কাজ শুরু করবে তাও বলা যাচ্ছে না। তাই নীতি সুদ হার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল এবং খেলাপি ঋণ কমানোর মতো পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই আবারও আসছে নতুন অর্থবছরের প্রথম অধ্যায়ের মুদ্রানীতিতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে গত বছর দেশে কর্মসংস্থান কমেছে। এর প্রধান কারণ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ঠিকমতো ঋণ পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের কর্মসংস্থান ঠিক রেখেই সংকোচনের চিন্তায় হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য এবারের মুদ্রানীতিতে এসএমই খাতকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত-মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে মুদ্রানীতিতে।

সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। ব্যাংক ঋণের সুদহার এরই মধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপরও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য ধারাবাহিকভাবে এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হবে। যদিও শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য সূচকও কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়তে পারে নীতি সুদহার। তবে এখনই ক্রলিং পেগ তুলে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

রীতি ভেঙে মুদ্রানীতি ওয়েবসাইটে প্রকাশের সিদ্ধান্ত : দীর্ঘদিনের রীতি উপেক্ষা করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকেদের বয়কটের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ জুলাই বেলা ৩টায় ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র।

এর আগে মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বের অবস্থানে থেকেই মুদ্রানীতি কাভার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আগের মতো প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাংবাদিক সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু মুদ্রানীতির প্রোগ্রাম তারা কাভার করবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাই আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করে পুনরায় অপমানিত হতে চাই না। সাংবাদিকরা রাজি হলে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতো। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ১৮ তারিখ বেলা ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কল্যানমুখী দেশ গড়তে সর্বশ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান- এড.জুবায়ের

আরও সংকোচন হচ্ছে মুদ্রানীতি

আপডেট টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও এ নিষ্ফল পদক্ষেপেই ভরসা রাখতে চাচ্ছেন গভর্নর। নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি আরও সংকোচনের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ধাক্কা সামাল দিতে এসএমই খাতকে শক্তিশালী করার কৌশল থাকছে এবারের মুদ্রানীতিতে।

বুধবার এক বৈঠকে এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা, বিআইবিএমের ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, রেপিডের ড. মো. আবু ইউসুফ, ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম, এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন, সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করীম, সিনিয়র সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। তবে বৈঠকে অনেক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অংশ নেননি বলে জানা গেছে।

অংশীজনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এবারের মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পথনির্দেশনা আসছে। কারণ গত মুদ্রানীতিতেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন গভর্নর। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। কবে নাগাদ কাজ শুরু করবে তাও বলা যাচ্ছে না। তাই নীতি সুদ হার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল এবং খেলাপি ঋণ কমানোর মতো পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই আবারও আসছে নতুন অর্থবছরের প্রথম অধ্যায়ের মুদ্রানীতিতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে গত বছর দেশে কর্মসংস্থান কমেছে। এর প্রধান কারণ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ঠিকমতো ঋণ পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের কর্মসংস্থান ঠিক রেখেই সংকোচনের চিন্তায় হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য এবারের মুদ্রানীতিতে এসএমই খাতকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত-মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে মুদ্রানীতিতে।

সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। ব্যাংক ঋণের সুদহার এরই মধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপরও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য ধারাবাহিকভাবে এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হবে। যদিও শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য সূচকও কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়তে পারে নীতি সুদহার। তবে এখনই ক্রলিং পেগ তুলে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

রীতি ভেঙে মুদ্রানীতি ওয়েবসাইটে প্রকাশের সিদ্ধান্ত : দীর্ঘদিনের রীতি উপেক্ষা করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকেদের বয়কটের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ জুলাই বেলা ৩টায় ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র।

এর আগে মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বের অবস্থানে থেকেই মুদ্রানীতি কাভার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আগের মতো প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাংবাদিক সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু মুদ্রানীতির প্রোগ্রাম তারা কাভার করবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তাই আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করে পুনরায় অপমানিত হতে চাই না। সাংবাদিকরা রাজি হলে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতো। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ১৮ তারিখ বেলা ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে।