ঢাকা ০৮:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত হাওর জেলার সাতপাঁচ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
  • ৭৩ বার

হাওর হলো পিরিচ আকৃতির ভূ-গাঠনিক [টেকটোনিক] প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবনমিত একটি অববাহিকা। মেঘনা ও এর শাখানদীসমূহের দ্বারা গঠিত প্লাবনভূমির স্থায়ী ও মৌসুমী হ্রদ নিয়ে এ অববাহিকা গঠিত। সুরমা-বাউলাই, কালনী-কুশিয়ারা ও কংশ-ধনু নদী-প্রণালী [রিভার সিস্টেম] এ অঞ্চলের জীবন-রেখা স্বরূপ। সীমান্তের ওপারের [ট্র্যানসবাউন্ডারি] নদী বরাক থেকে সুরমা-কুশিয়ারার মাধ্যমে প্রাপ্ত পানিতে বহমান এ নদীপ্রণালীত্রয়। শীতকালে হাওর অঞ্চল দেখায় দিগন্ত বিস্তৃত শ্যামল প্রান্তর, কিন্তু বর্ষাকালে [জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস] ধারণ করে কূলহীন সমুদ্রের রূপ। ধারণা করা হয়, সমুদ্রের সংস্কৃত শব্দ সাগর-এর কথ্য রূপ সায়র থেকে হাওর শব্দটি উদ্ভূত।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্তরে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে ত্রিপুরার পাহাড়, পূর্বে মণিপুরের উচ্চভূমি ও পশ্চিমে বাংলাদেশের মধুপুরের উচ্চভূমি দ্বারা ঘেরা সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার ৪৩ শতাংশ এলাকা নিয়ে হাওর অববাহিকাটি গঠিত। সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের এ সাতটি জেলার মোট আয়তন ১.৯৯ মিলিনিয়ন হেক্টর  এবং এর মধ্যে ৮,৫৯,০০০ হেক্টর হাওর অঞ্চল। এ সাত জেলায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন  অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৮৭ জন লোক বাস করে। কৃষি ও মৎস্য এ অঞ্চলবাসীর প্রধান পেশা। বাংলাদেশের ২০ শতাংশ [মতান্তরে ১৮ শতাংশ] ধান এবং বিপুল পরিমাণ মৎস্য এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।

সুনামগঞ্জ

১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সবক’টি হাওরাঞ্চলে অবস্থিত। উপজেলাগুলো হলো: ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, বিশ^ম্ভরপুর, শাল্লা ও সুনাগঞ্জ সদর।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৫,৬৪,৫৪০ জন [নারী ১২,৮০,০২১ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৩.৪৩%, কৃষি শ্রমিক ২৪.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৫৮% মৎস্যজীবী ৩.৩৪%, ব্যবসা ৭.৪৪%,  চাকুরি ৩.৮%, অন্যান্য ১২.৩১% জন।

শিক্ষার হার: ৩৫% শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: বাগবাড়ি টিলা [ছাতক], সেলবরষ জামে মসজিদ [ধর্মপাশা], সুখাইড়, কাহালা ও মহেষকলা  কালীবাড়ি [ধর্মপাশা], রাজা বিজয় সিংহের [ষোড়শ শতক] বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ [তাহিরপুর], হাসন রাজার বাড়ি, টাঙ্গঙয়ার হাওর, লাউড়ের গড়।

ঐতিহাসিক ঘটনা: সুখাইড়ে নানকার [ভূমিদাস] বিদ্রোহ।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: অদ্বৈত আচার্য [অদ্বৈত  মহাপ্রভু, বৈষ্ণব সাহিত্যিক], রাজা দিব্য সিংহ [লাউড়িয়া কুষ্ণদাস, অদ্বৈত আচার্যের ‘বাল্যলীলাসূত্র’ রচনাকারী], দেওয়ান হাসন রাজা [মরমী কবি], কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী [মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি], কাঁকন বিবি [বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধা],দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ [দার্শনিক], দূরবীন শাহ [সঙ্গীতকার], রাধারমণ দত্ত [ধামাইল ও লোক সঙ্গীতকার[, রামকানাই দাস [ধ্রুপদ সঙ্গীত শিল্পী], কৈলাশচন্দ্র রায় [রাজনীতিক], করুণাসিন্ধু রায় [রাজনীতিক], প্রসূনকান্তি [বরুণ] রায় [কমিউনিস্ট জননেতা]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক হাওর বার্তা

প্রধান ফসল: ধান …

ফল-ফলাদি: আম, কমলা লেবু

শিল্প: ছাতক সিমেন্ট কারখানা [১৯৪০], ছাতক ম- ও কাগজের কল [১৯৫৯], লাফাজ-সুরমা সিমেন্ট কারখানা, আকিজ ফুড ও বেভারেজ লি. টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প,রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, বরফকল, করাতকল, কোল্ড স্টোর, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, প্রিন্টিং প্রেস।

কুঠির শিল্প: তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, সেলাই, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস, পাথর, চুনাপাথর।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, মাছ, শুটকি, কমলালেবু, চুনাপাথর, সিমেন্ট, কাগজের ম-।

প্রধান নদী: সুরমা…

প্রধান হাওর: টাঙ্গুয়ার হাওর।

বিল/জলাশয়: আবদ্ধ [২০ একরের নিচে] ৬২৫টি, [২০ একরের উপরে ৪২০টি], উন্মুক্ত ৭৩টি।

সিলেট

১৭৮২ সালে পূর্ববঙ্গের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা হিসাবে সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সালে এটি নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশে যুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট পাকিস্তানে যোগদান করে ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে সিলেট নিজেই বিভাগে পরিণত হয়। বর্তমানে সিলেট জেলার উপজেলার সংখ্যা ১৩টি। এগুলো হলো: ওসমানী নগর, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ^নাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ও সিলেট সদর। সিলেট জেলার খুব সামান্য অংশই যথার্থ অর্থে হাওরাঞ্চল। এতদাঞ্চলের যে ৫টি উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে বিখ্যাত হাকালুকি হাওর গঠিত তার দুটি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ। এ ছাড়া কোম্পানিগঞ্জ ও বিশ^নাথ উপজেলার অতি সামান্য অংশ হাওরাঞ্চলে পড়েছে বলে ধরা হয়।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ৩৫,৬৭,১৩৯ জন [নারী ১৭,৭৩,২৮০ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৩০.৮২%, কৃষি শ্রমিক ১৫.৫৯%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৩৩%, পরিবহণ শ্রমিক ২.২১%, নির্মাণ শ্রমিক ১.৬৬%, মৎস্যজীবী ৩.৩৪%, ব্যবসা ১২.২%,  চাকুরি ৭.৫%, অন্যান্য ২৩.৪৮% জন।

শিক্ষার হার: ৪৪.৫ শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক  প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: জৈন্তাপুরের প্রস্তর স্মৃতি, গড়দোয়ার ঢিবি, গায়েবি মসজিদ, গড়দোয়ার নবাবী মসজিদ, শাহ্ জালাল [র.]-এর দরগাহ্ ও মাজারের শিলালিপি, শাহ পরাণ[র.]-এর দরগাহ্, গৌর গোবিন্দ কেল্লা, আবু তোরাব মসজিদ, আকালিয়ার মোগল মসজিদ, ঢাকা দক্ষিণ মন্দিন, তিন মন্দির, শাহী ইদগাহের শিলালিপি, বিশ^ম্ভরপুর আখড়ায় রক্ষিত কষ্টি পাথরের মূর্তি, কিন্ সেতু, আলি আমজাদের ঘড়ি, ওসমানী জাদুঘর,।

ঐতিহাসিক ঘটনা: হজরত শাহ্জালাল [র.] কর্তক সিলেট জয় ও ইসলাম প্রচার [চৌদ্দ শতক], পাঠান বীর খাজা ওসমানের সঙ্গে আক্রমনকারী মোগলদের লড়াই, নানকার বিদ্রোহ।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: হজরত জালালউদ্দি [শাহ্ জালাল], শাহ্ পরাণ, শ্রী শ্রী চৈতন্য দেব, স্বামী নিখিলানন্দ [নিউ ইয়র্ক রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠতা], ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব [শহিদ দার্শনিক], শাহ্ আবদুল করিম [লোক গীতিকার ও গায়ক], দিলওয়ার খান [কবি], হুমায়ুন রশিদ চেীধুরী আমলা-রাজনীতিক], জোবেদা রহিম চৌধুরী [রাজনীতিক], রুশেনারা আলি [ প্রথম বাংলাদেশী ব্রিটিশ এম.পি.]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক মানচিত্র, দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক সিলেট বাণী, দৈনিক আজকের সিলেট।

প্রধান ফসল: ধান, সরিষা, সুপারি।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, কমলালেব, লিচু।

শিল্প: চা কারখানা, সার কারখানা [ফেঞ্চুগঞ্জ], এলপি গ্যাস প্লান্ট

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, শীতল পাটি।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস, অশোধিত তেল।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, চা, সুপারি, সার।

নদী: সুরমা [৩৫০ কিমি], কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু।

প্রধান হাওর: হাকালুকি।

হাওর: ৮২টি। সিংগুয়া [১২.৬৫ বর্গ কিমি], চাতলা [১১.৮৬ বর্গ কিমি]

সংরক্ষিত বন: ২৩৬.৪২ কিমি।

টিলা: জৈন্তাপুর টিলা, শারি টিলা, লালাখাল টিলা, ঢাকা দক্ষিণ টিলা।

মৌলভিবাজার

১৮৮২ সালে সৃষ্ট মহকুমা ‘দক্ষিণ শ্রীহট্ট’ [পরে দক্ষিণ সিলেট] ১৯৬০ সালে নামাকরণ হয় মৌলভিবাজার যা ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। মৌলভিবাজার জেলার উপজেলা ৭টি। সেগুলি হলো: কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা, মৌলভিবাজার সদর, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল। মৌলভিবাজারও ঠিক হাওর জেলা নয়। জেলার কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখায় হাকালুকির অবস্থান বলে একে হাওর জেলার অন্তর্গত বলে ধরা হয়।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ১৯,৯৪,২৫২ জন [নারী ১০,১২,৪৬৮ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৩১.২১%, কৃষি শ্রমিক ১৫.০১%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৫৮%, শিল্প শ্রমিক ৩.৬১%, পরিবহণ শ্রমিক ১.৬৬%, মৎস্যজীবী ২.৬%, ব্যবসা ৯.১২%,  চাকুরি ৯.৭৩%, অন্যান্য ১৬.৪৮% জন।

শিক্ষার হার: ৩০.৮ শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: শাহ্ মোস্তফার দরগাহ ও মসজিদ, খোয়াজা মসজিদ [লঘাটি, বড়লেখা], মাধবকু-ু জল প্রপাত [বড়লেখা], খোজা মসজিদ [চতুর্দশ/পঞ্চদশ শতাব্দী, গয়ঘর], হুম হুম জলপ্রপাত [রাজকান্দি সংরক্ষিত বন, কমলগঞ্জ], হামিদুর রহমান মনুমেন্ট [কমলগঞ্জ], মাধবপুর হ্রদ, মাধব মন্দির, রঙ্গীরকুল বিদ্যাশ্রম [উনবিংশ শতাব্দী, কুলাউড়া], পৃথ্বিমপাশা নবাব বাড়ি [অষ্টাদশ শতাব্দী], সাধক অজ্ঞান ঠাকুরের মন্দির, নির্মাই শিববাড়ি [১৪৫৪], গায়েবি ইটের মসজিদ [ব্রাহ্মণগাঁও] এবং ফারসি লিপি [১৩০৩] ও অনন্ত নারায়ণ দেবতার বিগ্রহ [কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত]। লাউয়ারছড়া জাতীয় উদ্যান। ৯৩০ সালে পশ্চিমভাগে প্রাপ্ত তা¤্রলিপি [কপার প্লেটস]।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৮৫৭ সালে চট্টগ্রামের ৩০০ বিদ্রোহী সিপাহি পৃথ্বিমপাশার জমিদার গৌছ আলী খাঁর আশ্রয় গ্রহণ। ১৯২১ সালে মৌলভিবাজারে অনুষ্ঠিত খেলাফত সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা হোসেন আহমদ মদনী, সরোজিনী নাইডোর যোগদান। ভানুবিল প্রজা বিদ্রোহ [বাংলা ১৩০৭], নানকার বিদ্রোহ ১৯৩১-৩২]।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: গোপীনাথ দত্ত [বাংলা মহাভারত রচয়িতাদের অন্যতম], লীলা দত্ত নাগ [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, নারী শিক্ষা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা], মওলানা আবদুর রহিম সিংকাপনী [রাজনীতিক, সাংবাদিক],শচীন্দ্রলাল [লাক]ু দত্ত [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী], নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামী [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী], সৈয়দ মুজতবা আলী [সাহিত্যিক], ইসরাইল মিয়া [ভাষা সংগ্রামী], বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান [কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় আমবাসা গ্রামে শহিদ]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক মৌলভীবাজার বার্তা, দৈনিক বাংলার দিন, দৈনিক খোলা চিঠি।

প্রধান ফসল: ধান, কচু, তিল, রাবার, পান, সুপারি ও চা। দেশের ১৫৩টির মধ্যে ৯১টি চা বাগান ‘চা-রাজধানী’ বলে খ্যাত মৌলভিবাজারে অবস্থিত। শতকরা ৬৪ ভাগ চা এখানে উৎপাদিত হয়। এখানে প্রস্তুতকৃত এক কাপে সাত স্তরে, সাত রঙের, সাত স্বাদের চা এক অপূর্ব সৃষ্টি।

ফল-ফলাদি: কাঁঠাল, আনারস, লেবু,  কমলালেব, লিচু, জাম্বুরা, সাতকড়া , কামরাঙ্গা।

শিল্প: চা কারখানা।

কুঠির শিল্প: আগরবাতি, আগর, মণিপুরী তাঁত, বাঁশ, বেত, শীতল পাটি।

খনিজ সম্পদ: কয়লা, লিগনাইট, কাঁচ-বালি,  প্রাকৃতিক গ্যাস, অশোধিত তেল।

রপ্তানি দ্রব্য: চা, পান, বাঁশ, কাঁঠাল, আনারস, কমলালেবু, আম, রাবার, আগরবাতি, আগর, কাঁচ-বালি, সাতকড়া, লেবু, নাগা মরিচ, শাকসবজি।

নদী: মনু, ধলাই, জুড়ি।

প্রধান হাওর: হাকালুকি, হাইল, কাউয়াদিঘি, বিলাসছড়া হ্রদ।

বনভূমি: ৪১৩.৬৫ কিমি; পাথারিয়া, লংলা [ষাড়ের গজ], রাজকান্দি, ভানুগাছ প্রভৃতি।

হবিগঞ্জ

তরফের সৈয়দ হাবিবউল্লাহ্র নামানুসারে ক্রমে হাবিবগঞ্জ থেকে হাবিগঞ্জ ও পরে হবিগঞ্জের নামাকরণ হয়। ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে এলাকটি নাসিরাবাদ তথা ময়মনসিংহের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালে ঢাকা জেলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ থানা এবং ১৮৬৭ সালে মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৭৪ সালে হবিগঞ্জ আসামের সিলেট জেলায় যুক্ত হয়। ১৯১১ সালে হবিগঞ্জ পুনরায় পূর্ববঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়।  এ জেলার উপজেলা ৯টি। সেগুলি হলো: আজমিরিগঞ্জ, চুনারুঘাট, নবিগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল, মাধবপুর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর। এ জেলার নবিগঞ্জ, আজমিরিগঞ্জ ও লাখাইয়ের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চল।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২১,৭১,০৬৫ জন [১১,০৫,১৫৬ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪২.২৬%, কৃষি শ্রমিক ২০.৫৫%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৪৫%, শিল্প শ্রমিক ১.৭%, মৎস্যজীবী ২.৭৩%, ব্যবসা ৮.২%,  চাকুরি ৪.৬৯%, অন্যান্য ১৩.৪২% ভাগ।

শিক্ষার হার: ২২.৫১ শতাংশ।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: প্রাচীন রাজবাড়ি [১৭৩৭-৩৮; পুরানবাগ, বানিয়াচং], সাগরদিঘি [বানিয়াচং], বিথঙ্গল আখড়া [বানিয়াচং], ফুলতলী টিলা ও জলপ্রপাত [নবিগঞ্জ], কুড়ি টিলা, কৃষ্ণ পাথর ও প্রাচীন রাজবাড়ি [দিনারপুর, নবিগঞ্জ], কালীবাড়ি [সদর], সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের হুজরাখানা [মুড়ারবন্দর, চুনারুঘাট], পুঁটিজুড়ি জামে মসজিদ [বাহুবল]।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক-বাংলোতে ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসারদে সঙ্গে ওসমানীর বৈঠক।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: বাবু কালীপ্রসন্ন [রাজনীতিক], রায় বাহাদুর উমেশ দত্ত [রাজনীতিক], যোগেন্দ্রচন্দ্র রায় [চিকিৎসক], দেওয়ান মর্তুজা [কবি], জানকীনাথ [মনসা মঙ্গল রচয়িতা], বিপিনচন্দ্র পাল [সাংবাদিক ও কবি], সৈয়দ সুলতান [কবি], কেদারনাথ রায়, হেমাঙ্গ বিশ^াস [গণসঙ্গীতকার], দেওয়ান ফরিদ গাজী [রাজনীতিক], মেজর জেনারেল আবদুর রব [চিফ অব স্টাফ, লিবারেশন ফোর্স], মেজর জেনারেল, চিত্তরঞ্জন দত্ত [বীর উত্তম], জগৎজ্যোতি দাস [বীর বিক্রম;  ১৬ নভেম্বর’৭১ আজমিরিগঞ্জ যুদ্ধে শহিদ], শাহ্ এএমএস কিবরিয়া [আমলা কাম রাজনীতিক], সিরাজুল হুসেন খান [সাংবাদিক ও রাজনীতিক], সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন [প্রধান বিচারপতি], সৈয়দ হোসেন [প্রধান বিচারপতি], স্যার ফজলে হোসেন আবেদ [জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা ও জনঋণদানকারী ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা], জগলুল আহমেদ চেীধুরী [সাংবাদিক]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক প্রতিদিনের বাণী, দৈনিক প্রভাকর, দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস।

প্রধান ফসল: ধান, চা, রাবার, পান, গম, পাট, আখ, আলু চিনাবাদাম, তৈলবীজ।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লেবু,  কমলা লেব, লিচু, জাম, নারকেল।

শিল্প: টেকস্টাইল মিল, ছাতা করাখানা, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল, সাবন কারখানা, বিস্কুট কারখানা, বরফ কারখানা, এলপি গ্যাস প্লান্ট, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র।

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, শীতল পাটি, তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, সেলাই।

চা ও রাবার বাগান: চা বাগান ২৪টি, রাবার বাগান ৩টি।

খনিজ সম্পদ: গ্যাস [রশিদপুর (বাহুবল), বিবিয়ানা ও হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড]।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান,  চা, পান, আখের গুড়, বাঁশ ও অন্যান্য বনজ সম্পদ।

নদী: কালনী, কুশিয়ারা, খোয়াই, গোপালা, সুতাং, করোঙ্গী, রতœা, বালু ও বরাক।

প্রধান হাওর: ?

পালা-গীতিকা: ধুপার পাট [পূর্ববঙ্গ গীতিকা]।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

এক কালের সমতটের অংশ, ১৭৯০ সালে সৃষ্ট ত্রিপুরা জেলার অন্যতম মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে যোগ দেয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপজেলা ৯টি। সেগুলি হলো: আখাউড়া, আশুগঞ্জ, কসবা, নবিনগর, নাসিরনগর, বাঞ্ছারামপুর, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও সরাইল।  এ জেলার নাসিরনগর ও সরাইলের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,৫৫১ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৯,৫৩,২০৮ জন [নারী ১৫,৩২,২১৭ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৪.৭৯%, কৃষি শ্রমিক ১৫.৮২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৩%, পরিবহণ শ্রমিক ১.৮৫%, মৎস্যজীবী ২.০২%, তাঁতী ২.৩৯, ব্যবসা ১২.২৬%,  চাকুরি ৬.৮%, অন্যান্য ১০.৯৪% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৯.৪৬% শতাংশ।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: কাজী মাহমুদ শাহর [র] মাজার [চতুর্দশ শতক; কাজী পাড়া, সদর], কালভৈরব মন্দির [ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর], এন্ডারসন সমৃতিসৌধ [কাউতলী, সদর], আরফাইল মসজিদ ও জোড়া কবর [ষোড়শ শতাব্দী, সরাইল], আরফান্নেসা মসজিদ [১৬৬২, সরাইল], সর্বধর্ম সমন্বয় মন্দির [কালিকচ্ছ, সরাইল], ভাদুঘর শাহী মসজিদ [১০৮৪ হি.] উলচাপাড়া মসজিদ [ষোড়শ শতাব্দী], কল্লা শহিদের মাজার [চতুর্দশ শতক; খড়মপুর, আখাউড়া], শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম [সপ্তদশ শতাব্দী, কসবা], কৈলাগড় জাঙ্গাল [কসবা], সতীদাহ মন্দির [বিদ্যাকুট], শিব মন্দির [নাটঘর], জগন্নাথ মন্দির [নাসিরনগর], বিষ্ণু মূর্তি [বাঘাউড়া], বাসুদেব মূর্তি [কালিকচ্ছ], বৌদ্ধ বিহার [দেবগ্রাম], হাতির পুল [১৬৫০ সালে নির্মিত; বাড়ৈউড়া], নবিনগর মঠ।

প্রাপ্ত মুদ্রা: রানি এলিজাবেথের প্রতিকৃতি অঙ্কিত ১৮০৪, ১৪ ও ৩৬ সালের ৫০০ মুদ্রা।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৮২৪ সালে মনিপুর অধিকারের সময় এ শহরে ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক সসদর দফতর স্থাপিত হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে এখানে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে বিপ্লবী উল্লাস কর [অভিরাম] দত্তকে আন্দামানে দ্বীপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহিদ হন।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: মা আনন্দময়ী, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খাঁ, ওস্তাদ আবেদ হোসেন খাঁ, ওস্তাদ খাদেম হোসেন খাঁ, ওস্তাদ রাজা হোসেন খাঁ, ওস্তাদ খুরশিদ খাঁ, অমর পাল, ওস্তাদ সুবল দাস, ওস্তাদ আফজালুর রহমান, বিপ্লবী উল্লাসকর [অভিরাম] দত্ত [আন্দামানবন্দি], নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা [শিক্ষা ও রাজনীতিবিদ], ব্যরিস্টার আবদুর রসুল [রাজনীতিবিদ], নবাব কে.জি.এম. ফারুকী [রাজনীতিবিদ], ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত [রাজনীতিবিদ, শহিদ], মওলানা তাজুল ইসলাম, নবাব সিরাজুল ইসলাম, মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য [দানবীর], প্রবোধচন্দ্র সেন [ছন্দ বিজ্ঞানী], কৈলাসচন্দ্র সিংহ [ঐতিহাসিক], বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, অধ্যক্ষ দ্বিজদাস দত্ত, আবদুল কাদির [সাহিত্যিক], অলি আহাদ [ভাষা সংগ্রামী, রাজনীতিবিদ], আল মাহমুদ [কবি], সানাউল হক [কবি], এ.কে. লুৎফর রহমান [শহিদ বুদ্ধিজীবী] ।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দৈনিক প্রতিবেদন, দৈনিক আজকের হালচাল, দৈনিক তিতাস কণ্ঠ, দৈনিক সমতট বার্তা, দৈনিক দিনদর্পন,

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, আলু, তৈলবীজ, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, বেগুন, পটল, কাঁকরোল।।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, লিচু, নারকেল, পেয়ারা, জলপাই, বিলিম্বি, লেবু, টেরপই।

শিল্প: সার কারখানা, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল, বরফকল, করাতকল [স’মিল], প্রিন্টিং প্রেস, ওয়েল্ডিং।

কুঠির শিল্প: তাঁত, বাঁশ, বেত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, কাঠের কাজ। উনবিংশ শতাব্দীতে সরাইলের ‘তানজেব’ নামের মসলিন ছিল বিখ্যাত। নৌকা তেরি [বিশেষ করে বাইচের নৌকা], শীতল পাটি, তাঁত, সেলাই।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস [গ্যাস ক্ষেত্র তিতাস, মেঘনা, সালদা নদী]।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, পাট সরিষা, তাঁতদবস্ত্র, হস্তশিল্প, চামড়া, প্রাকৃতিক গ্যাস, শাকসব্জি

প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, বুড়ি, হাওড়া, কলকুলিয়া ।

প্রধান হাওর: মেহেদি ও আকাশি।

কিশোরগঞ্জ

১৮৬০ সালে সৃষ্ট মহকুমা কিশোরগঞ্জ ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা ১৩টি। সেগুলি হলো: অষ্ট্রগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, তাড়াইল, নিকলী, পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, ভৈরব, মিঠামইন ও হোসেনপুর। এ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা পুরোপুরি এবং ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, নিকলী, করিমগঞ্জ ও তাড়াইলের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,২৩২ মিমি।

জনসংখ্যা: ৩০,২৮,৭০৬ জন [নারী ১৫,৩৮,৯৬৮ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৫.৪৮%, কৃষি শ্রমিক ২১.০২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, পরিবহণ শ্রমিক ২.০৬%, মৎস্যজীবী ১.৮৭%, ব্যবসা ১১.২%,  চাকুরি ৪.৪৭%, অন্যান্য ১০.৬১% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৮.৩ শতাংশ।

পর্যটন আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: জঙ্গলবাড়ি দুর্গ [পঞ্চদশ শতক (১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে বিধ¦স্ত), করিমগঞ্জ], এগারসিন্দুর দুর্গ [ ইসা খাঁ-মানসিংহ দ্বৈরথ যুদ্ধক্ষেত্র; পঞ্চদশ শতক, পাকুন্দিয়া], শাহ্ মাহমুদ মসজিদ [১৬৮০, এগারসিন্দুর], সাদী মসজিদ [১৬৫২, এগারসিন্দুর], অধিকারীর মঠ [ষোড়শ শতক, পাকুন্দিয়া], সালংকা জামে মসজিদ [পাকুন্দিয়া], মঠখোলা কালীমন্দিন [সপ্তদশ শতক, পাকুন্দিয়া], গুড়–ই মসজিদ [১৬৮০, বাজিতপুর], ভাগলপুর দেওয়ানবাড়ি মসজিদ [অষ্টাদশ শতক, বাজিতপুর], কুতুবশাহ মসজি [১৫৩৮, অষ্টগ্রাম], জাওয়ার সাহেববাড়ি মসজিদ [১৫৩৪, তাড়াইল], সেকেন্দারনগর মসজিদ [অষ্টদশ শতক, তাড়াইল], বাদশাহী মসজিদ [সপ্তদশ শতক, ইটনা], পাগলা মসজিদ [কিশোরগঞ্জ সদর], দিল্লির আখড়া [মোগল জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত, মিঠামইন], মালিকের দরগাহ্ [ভরা, মিঠামইন], ভাটি ঘাগড়া গ্রামে প্রাপ্ত সুলতান নাসিরউদ্দিন [প্রথম] মাহমুদ শাহর সময়কালের আরবি শিলালিপি [মিঠামইন], চন্দ্রাবতী শিবমন্দির [ষোড়শ শতক, কিশোরগঞ্জ সদর]। নন্দকিশোর প্রামাণিককে দেওয়া কৃষ্ণদাসের দলিল [১৭৫৯, কিশোরগঞ্জ সদর]নটরাজ শিবমূর্তি [চৌদ্দশত শতক, শহরমূল, নিকলী], শামসুদ্দিন বোখারির মাজার/কুড়িখাই মেলা [কটিয়াদি]। শোলাকিয়া ইদগাহে ইদের জামাতয়াত। অষ্টগ্রামের মহররম মিছিল। নক্শী পিঠা ও শিকা।

ঐতিহাসিক ঘটনা: … মোগল সেনাপতি মানসিংহ ও বারভূঞাদের অন্যতম ইসা খাঁর মল্লযুদ্ধ। খাতক বিদ্রোহ [১৯৩০-৩১]

বিশিষ্ট ব্যক্তি: চন্দ্রাবতী [কবি, …শতক], ইসা খাঁ, আবদুর রহিম মুন্সী [উনবিংশ শতাব্দী ১৮০১-৯৯?; পুথিকার, হোসেনপুর], ইবরাহিম বক্স [মাধব মালঞ্চি কইন্যা পালা প্রণেতা], ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসু [১৮৪৭-১৯০৬; বাংলার প্রথম র‌্যাংলার, ভারতীয় ছাত্র আন্দোালন ও কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা], উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী [জ. ১৮৬৩ মৃ….; লেখক, অঙ্কন শিল্পী], ড. দেবেন্দ্রমোহন বসু [১৮৮৫-১৯৭৬; পরমাণু বিজ্ঞানী, [জগদীশ] বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অধ্যক্ষ], হেমেন্দ্রমোহন বসু [এইচএমবি গ্রামোফোন কোম্পানির মালিক এবং কুন্তলীন তেল ও দেলকোশ সুগন্ধির আবিস্কারক]. সুকুমার রায় [১৮৮৭-১৯২৩; সাহিত্যিক, ইলাস্ট্রেটর], মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী [১৮৮৯-১৯৭০], অমল হোম রায় [১৮৯৪-১৯৭৫; সাংবাদিক, লেখক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সচিব], নীরদ সি. চেীধুরী [জ. ১৮৯৭-], খান বাহাদুর সৈয়দ মিসবাহউদ্দিন হোসেন [১৮৯৮-১৯৬৭; রাজনীতিক, সমাজব্রতী], নগেন সরকার [১৯০০-৮২; বিপ্লবী রাজনীতিক], পদ্মভূষণ ড. নীহাররঞ্জন রায় [১৯০৩-৮১; ইতিহাসবিদ], ওয়ালী নেওয়াজ খান [১৯০৪-৮৫; বিপ্লবী রাজনীতিক ও শিক্ষাব্রতী], রেবতীমোহন বর্মণ [১৯০৫-৫২; সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ক্যাপিটাল (মার্কসের ক্যাপিটালের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ) প্রভৃতি রচয়িতা। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য [১৯০৯-৮৪; অধ্যাপক ও লেখক], দেবব্রত বিশ^াস [১৯১১-৮০; প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী], নিবারণ প-িত [১৯১২-৮৪; বঞ্চিত মানুষের গায়ক] ড. এম. ওসমান গনি [১৯১২-৮৯; শিক্ষাবিদ ও সংগঠক], ব্যারিস্টার ভূপেশচন্দ্র গুপ্ত [১৯১৪-৮১; শিক্ষাব্রতী, কমিউনিস্ট নেতা ও আইনপ্রণেতা], মনিরউদ্দীন ইউসুফ ১৯১৯-৮৭; [শাহনামা অনুবাদক], সত্যজিৎ রায় [১৯২১-৯২; চলচ্চিত্রকার], কেদারনাথ মজুমদার [১২২৭-১৩৩৩ বঙ্গাব্দ], মতিওর রহমান [জ. ১২৯৮ বাংলা মৃ. ১৯৬৫খ্রি.; দেওয়ান ঈসা খাঁ ও ঐতিহাসিক অভিধান রচয়িতা, পাকুন্দিয়া], অখিল গোস্বামী [জ. ১৩২০ বাংলা; লোক গায়ক। ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ তার অমর সৃষ্টি], গুরুদয়াল সরকার [শিক্ষাব্রতী], মুন্সী আজিমউদ্দিন [আজিমউদ্দিন হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা], নিবারণ চক্রবর্তী [আন্দামান ফেরত বিপ্লবী রানীতিক], সৈয়দ নজরুল ইসলাম [১৯২৫-৭৫; মক্তিযুদ্ধকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্টপতি], সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন [১৯২৫-; শিক্ষাবিদ, নাট্য আন্দোলন সংগঠক], অজয় রায় [১৯২৮-২০১৭; কমিউনিস্ট রাজনীতিক ও লেখক], আবদুর রউফ [জ. ১৯৩৩; আগরতলা মামলার আসামী, সমাজব্রতী] আবু তাহের খান পাঠান [১৯৩৫-; রাজনীতিবিদ, ভাষা সংগ্রামী], কাজী আবদুল বারী [১৯৩৫-৮৩; রাজনীতিক], জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, ডা. আলিম চেীধুরী, লে. ক. হায়দার, জহুরুল ইসলাম [ব্যবসায়ী, সমাজব্রতী], রাজিয়া হোসাইন [জ. ১৯৩৮; শিক্ষক ও লেখক] মওলানা আবুল খায়ের মো. নূরুল্লাহ্ [জ. ১৯৩৯; ধর্মীয় লেখক], রাহাত খান [১৯৪০-২০২১; সাংবাদিক ও লেখক], মোহাম্মদ সাইদুর [রহমান] [ ১৯৪১-; ফোকলোর সংগ্রাহক], অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ [১৯৪৪; রাষ্ট্রপতি], বীরবিক্রম সিরাজুল ইসলাম [১৯৫২-৭১; শহিদ মুক্তিযোদ্ধা], মু.আ. লতিফ. ড. নিয়াজউদ্দিন পাশা [১৯  – ২০১৬; কৃষি-প্রকেীশলী ও পরিবেশ কর্মী], ইলিয়াস কাঞ্চন [অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নেতা], শামীম আরা নিপা [নৃত্যশিল্পী], জাহঙ্গীর আলম জাহান [জ. ১৯৬০]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক আজকের দেশ, দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ, দৈনিক আমার বাংলাদেশ, দৈনিক আজকের সারদিন, দৈনিক গৃহকোণ, দৈনিক ভাটির দর্পণ, প্রাত্যহিক চিত্র।

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, মিষ্টিআলু, ডাল, ছোলা, বাদাম, ভুট্টা, আখ, তৈলবীজ [সরিষা] শাকসব্জি।

ফল-ফলাদি: আম, লিচু, কলা, তাল, তেঁতুল, লটকন, চালতা, জলপাই, কামরাঙ্গা, ক্ষীরা, জাম্বুরা, আমলকি, হরতকি, আতা।

শিল্প: আফতাব ফিড মিল [বাজিতপুর], অয়েল মিল, করাতকল, বরফকল, হোমিও শিমি কারখানা।

কুঠির শিল্প: পনির, বাঁশ, বেত, কামার, কাঠের কাজ, শীতল পাটি, মিষ্টিদ্রব্র,। উনবিংশ শতাব্দীতে বাজিতপুরের মসলিন ছিল বিখ্যাত।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, পাট, কলা, লিচু, সরিষা, বাদাম, মুরগি, শাকসব্জি

প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, কালনী, ধনু, বাউলাই,ঘোড়াউত্রা, সিঙ্গুয়া, পিয়াইন, দলেম্বরী, সোয়াজিানী, নরসুন্দা, ফুলেশ^রী, আড়িয়াল খাঁ।

প্রধান হাওর: বড় হাওর [অষ্টগ্রাম-নিকলী-মিটামইন-ইটনা-লাখাই], হুমাইপুর হাওর [বাজিতপুর[, সোমাই হাওর [অষ্টগ্রাম], বাড়ির হাওর [মিঠামইন], তল্লার হাওর [নিকলী-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম], সুরমা-বাউলার হাওর [নিকলী], মাহমুদপুর হাওর [নিকলী]।

বিল/জলাশয়: বেংলা অষ্টগ্রাম, ছানিয়া [ইটনা] …

পালা-গীতিকা: মৈমনসিংহ গীতিকার দশটি পালার মধ্যে চন্দ্রাবতী ও দস্যু কোনারামের ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ কিশোরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। মলুয়া ও দেওয়ানা মদিনার ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ যথাক্রমে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ-হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে হবিগঞ্জ নাসিরাবাদ তথা ময়মনসিংহের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালে ঢাকা জেলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ থানা এবং ১৮৬৭ সালে মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৭৪ সালে হবিগঞ্জ আসামের সিলেট জেলায় যুক্ত হয়। ১৯১১ সালে হবিগঞ্জ পুনরায় পূর্ববঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। দেওয়ানা মদিনার উৎপত্তিস্থল সীমান্তবর্তী বানিয়াচং [হবিগঞ্জ] হলেও পালার ভাষা হবিগঞ্জ তথা সিলেট অঞ্চলের নয়। ফলে পালাটি কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের বলেই মনে হয়।

নেত্রকোনা

১৮৮২ সালে সৃষ্ট মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। নেত্রকোনা জেলার উপজেলা ১০টি। সেগুলি হলো: আটপাড়া, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, খালিয়াজুড়ি, দূর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, বারহাট্টা, মদন ও মোহনগঞ্জ। জেলার খালিয়াজুড়ি সম্পূর্ণ এবং মোহনগঞ্জ ও মদন অংশত হওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,১৭৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৩,১৭,১৯০ জন [নারী ১১,৬২,২২৩ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৫২.০৫%, কৃষি শ্রমিক ২১.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৯%, মৎস্যজীবী ১.৮৭%, ব্যবসা ৭.৬১%, চাকুরি ২.৯৪%, অন্যান্য ১০.৪৭% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৯.৪৪% শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: গারো পাহাড় [দূর্গাপুর], বিরিশিরি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক একাডেমি [দূর্গাপুর],  শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমীর মাজার [মদনপুর, সদর], রোয়াইলবাড়ি দুর্গ [কেন্দুয়া], খোঁজার দিঘি, কমলরানির দিঘি, কৃষ্ণপুর বৌদ্ধমঠ [আটপাড়া], সালকি মাটিকাটা গ্রামের পুরাকীর্তি।

ঐতিহাসিক ঘটনা: পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, সর্বভারতীয় কৃষক সমো¥লন [১৯৪৫]

বিশিষ্ট ব্যক্তি: নলিনীরঞ্জন সরকার [অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী], সাহাবুদ্দিন আহমদ [সাবেক রাষ্টপতি], কমরেড মণিসিংহ [প্রখ্যাত কৃষক ও কমিউনিস্ট নেতা], কাহ্ন [দশম শতকের কবি], জালালউদ্দিন খাঁ মরমী [কবি ও গায়ক], উকিল মুন্সী [বাউল কবি], চন্দ্রকুমার দে [মৈমনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক], খালেকদাদ চৌধুরী [লেখক], রওশন ইজদানী [লেখক ও সংগ্রাহক], যতীন সরকার [লেখক ও সংগঠক], হুমায়ুন আহমেদ [লেখক ও নির্মাতা], জাফর ইকবাল [লেখক ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী], নির্মলেন্দু গুণ, মোস্তফা জব্বার [ বিজয় সফটওয়ার উদ্ভাবক], হেলাল হাফিজ [কবি], বারী সিদ্দিকী [বাঁশি বাদক ও গায়ক]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক বাংলার দর্পণ।

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, আলু, তৈলবীজ [সরিষা]।

ফল-ফলাদি: আম, জাম্বুরা, কাঁঠাল লেবু, কলা, পেঁপে, তাল, নারিকেল, বেল।

শিল্প: করাতকল, তেলকল, বরফকল।

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, বিড়ি, কুমার।

প্রাকৃতিক/খনিজ সম্পদ: চিনা মাটি

রপ্তানি দ্রব্য: মাছ, চামড়া, ডিম।

প্রধান নদী: সোমেশ^রী, কংস , মগরা, ধনু, ধলা তেওরখালী। সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালী [সিস্টেম]

প্রধান হাওর: ডিঙ্গাপোতা [মোহনগঞ্জ]।

পালা-গীতিকা: মৈমনসিংহ গীতিকার দশটি পালার মধ্যে মহুয়া, কমলা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা এবং কাজল রেখার ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ নেত্রকোনার এবং মলুয়া নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত।

হাওর মহাপরিকল্পনা

হাওর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ খ্রি. হাওর মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান অব হাওর এরিয়াস) নামে ২০১২-১৩ থেকে ২০৩১-৩২ অর্থ বছর পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদী একটি বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬টি বিষয়ের (থিমেটিক এরিয়া) অধীনে ১৮টি উন্নয়ন এলাকায় (ডেভেলপমেন্ট এরিয়া) ১৫৩টি স¦ল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী  প্রকল্পের জন্য ২৭ হাজার ৯৬৩ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকার বরাদ্ধ প্রস্তাব করা হয়। উন্নয়ন এলাকাসমূহ হল: ১.পরিবহন ও যোগাযোগ ২. মৎস্য ৩. বিদ্যুৎ ও শক্তি ৪. বন ৫. খনিজ সম্পদ ৬. কৃষি ৭. পানি সম্পদ ৮. স্বাস্থ্য ৯. জীব-বৈচিত্র ও জল-সিক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ১০. পানি সরবরাহ ও পয়ঃ ১১. প্রাণি সম্পদ ১২. শিল্প ১৩. শিক্ষা ১৪. সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ১৫. মুক্তা উৎপাদন ১৬. গৃহায়ণ ও বসতি ১৭. পর্যটন ও ১৮. সংস্থাপন। কিন্তু বাস্তবে এসবের বাস্তবায়ন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। বরং এর বাইরে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। অধিকন্তু বর্তমান আমলা-পরিবেষ্টিত সরকার এখন সারা দেশের জন্য অপর একটি শতবর্ষব্যাপী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণের দিকে যাচ্ছেন যা পরিশেবাদীগণ এদেশের জন্য অনুপযোগী বলে মনে করেন।

দ্রষ্টব্য: এ ধরনের লেখা কখনই পুর্ণতা ও সর্বজনগ্রাহ্যতা দাবি করতে পারে না। প্রতিটি জেলা/উপজেলার উদ্যমী লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও ফেইসবুকারদের নিজ নিজ জেলা ও উপজেলা বিষয়ে লেখা এবং ভুল সংশোধন ও বাদ পড়া তথ্য সম্ভব হলে ছবিসহ halimdadkhan1955@gmail.com-এ পাঠানোর জন্য জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ধন্যবাদ।

 

: লেখক ও গবেষক: ড. হালিম দাদ খান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাত হাওর জেলার সাতপাঁচ

আপডেট টাইম : ০৬:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

হাওর হলো পিরিচ আকৃতির ভূ-গাঠনিক [টেকটোনিক] প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবনমিত একটি অববাহিকা। মেঘনা ও এর শাখানদীসমূহের দ্বারা গঠিত প্লাবনভূমির স্থায়ী ও মৌসুমী হ্রদ নিয়ে এ অববাহিকা গঠিত। সুরমা-বাউলাই, কালনী-কুশিয়ারা ও কংশ-ধনু নদী-প্রণালী [রিভার সিস্টেম] এ অঞ্চলের জীবন-রেখা স্বরূপ। সীমান্তের ওপারের [ট্র্যানসবাউন্ডারি] নদী বরাক থেকে সুরমা-কুশিয়ারার মাধ্যমে প্রাপ্ত পানিতে বহমান এ নদীপ্রণালীত্রয়। শীতকালে হাওর অঞ্চল দেখায় দিগন্ত বিস্তৃত শ্যামল প্রান্তর, কিন্তু বর্ষাকালে [জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস] ধারণ করে কূলহীন সমুদ্রের রূপ। ধারণা করা হয়, সমুদ্রের সংস্কৃত শব্দ সাগর-এর কথ্য রূপ সায়র থেকে হাওর শব্দটি উদ্ভূত।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্তরে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে ত্রিপুরার পাহাড়, পূর্বে মণিপুরের উচ্চভূমি ও পশ্চিমে বাংলাদেশের মধুপুরের উচ্চভূমি দ্বারা ঘেরা সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার ৪৩ শতাংশ এলাকা নিয়ে হাওর অববাহিকাটি গঠিত। সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের এ সাতটি জেলার মোট আয়তন ১.৯৯ মিলিনিয়ন হেক্টর  এবং এর মধ্যে ৮,৫৯,০০০ হেক্টর হাওর অঞ্চল। এ সাত জেলায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন  অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৮৭ জন লোক বাস করে। কৃষি ও মৎস্য এ অঞ্চলবাসীর প্রধান পেশা। বাংলাদেশের ২০ শতাংশ [মতান্তরে ১৮ শতাংশ] ধান এবং বিপুল পরিমাণ মৎস্য এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।

সুনামগঞ্জ

১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সবক’টি হাওরাঞ্চলে অবস্থিত। উপজেলাগুলো হলো: ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, বিশ^ম্ভরপুর, শাল্লা ও সুনাগঞ্জ সদর।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৫,৬৪,৫৪০ জন [নারী ১২,৮০,০২১ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৩.৪৩%, কৃষি শ্রমিক ২৪.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৫৮% মৎস্যজীবী ৩.৩৪%, ব্যবসা ৭.৪৪%,  চাকুরি ৩.৮%, অন্যান্য ১২.৩১% জন।

শিক্ষার হার: ৩৫% শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: বাগবাড়ি টিলা [ছাতক], সেলবরষ জামে মসজিদ [ধর্মপাশা], সুখাইড়, কাহালা ও মহেষকলা  কালীবাড়ি [ধর্মপাশা], রাজা বিজয় সিংহের [ষোড়শ শতক] বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ [তাহিরপুর], হাসন রাজার বাড়ি, টাঙ্গঙয়ার হাওর, লাউড়ের গড়।

ঐতিহাসিক ঘটনা: সুখাইড়ে নানকার [ভূমিদাস] বিদ্রোহ।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: অদ্বৈত আচার্য [অদ্বৈত  মহাপ্রভু, বৈষ্ণব সাহিত্যিক], রাজা দিব্য সিংহ [লাউড়িয়া কুষ্ণদাস, অদ্বৈত আচার্যের ‘বাল্যলীলাসূত্র’ রচনাকারী], দেওয়ান হাসন রাজা [মরমী কবি], কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী [মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি], কাঁকন বিবি [বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধা],দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ [দার্শনিক], দূরবীন শাহ [সঙ্গীতকার], রাধারমণ দত্ত [ধামাইল ও লোক সঙ্গীতকার[, রামকানাই দাস [ধ্রুপদ সঙ্গীত শিল্পী], কৈলাশচন্দ্র রায় [রাজনীতিক], করুণাসিন্ধু রায় [রাজনীতিক], প্রসূনকান্তি [বরুণ] রায় [কমিউনিস্ট জননেতা]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক হাওর বার্তা

প্রধান ফসল: ধান …

ফল-ফলাদি: আম, কমলা লেবু

শিল্প: ছাতক সিমেন্ট কারখানা [১৯৪০], ছাতক ম- ও কাগজের কল [১৯৫৯], লাফাজ-সুরমা সিমেন্ট কারখানা, আকিজ ফুড ও বেভারেজ লি. টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প,রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, বরফকল, করাতকল, কোল্ড স্টোর, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, প্রিন্টিং প্রেস।

কুঠির শিল্প: তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, সেলাই, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস, পাথর, চুনাপাথর।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, মাছ, শুটকি, কমলালেবু, চুনাপাথর, সিমেন্ট, কাগজের ম-।

প্রধান নদী: সুরমা…

প্রধান হাওর: টাঙ্গুয়ার হাওর।

বিল/জলাশয়: আবদ্ধ [২০ একরের নিচে] ৬২৫টি, [২০ একরের উপরে ৪২০টি], উন্মুক্ত ৭৩টি।

সিলেট

১৭৮২ সালে পূর্ববঙ্গের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা হিসাবে সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সালে এটি নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশে যুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট পাকিস্তানে যোগদান করে ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে সিলেট নিজেই বিভাগে পরিণত হয়। বর্তমানে সিলেট জেলার উপজেলার সংখ্যা ১৩টি। এগুলো হলো: ওসমানী নগর, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ^নাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ও সিলেট সদর। সিলেট জেলার খুব সামান্য অংশই যথার্থ অর্থে হাওরাঞ্চল। এতদাঞ্চলের যে ৫টি উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে বিখ্যাত হাকালুকি হাওর গঠিত তার দুটি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ। এ ছাড়া কোম্পানিগঞ্জ ও বিশ^নাথ উপজেলার অতি সামান্য অংশ হাওরাঞ্চলে পড়েছে বলে ধরা হয়।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ৩৫,৬৭,১৩৯ জন [নারী ১৭,৭৩,২৮০ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৩০.৮২%, কৃষি শ্রমিক ১৫.৫৯%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৩৩%, পরিবহণ শ্রমিক ২.২১%, নির্মাণ শ্রমিক ১.৬৬%, মৎস্যজীবী ৩.৩৪%, ব্যবসা ১২.২%,  চাকুরি ৭.৫%, অন্যান্য ২৩.৪৮% জন।

শিক্ষার হার: ৪৪.৫ শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক  প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: জৈন্তাপুরের প্রস্তর স্মৃতি, গড়দোয়ার ঢিবি, গায়েবি মসজিদ, গড়দোয়ার নবাবী মসজিদ, শাহ্ জালাল [র.]-এর দরগাহ্ ও মাজারের শিলালিপি, শাহ পরাণ[র.]-এর দরগাহ্, গৌর গোবিন্দ কেল্লা, আবু তোরাব মসজিদ, আকালিয়ার মোগল মসজিদ, ঢাকা দক্ষিণ মন্দিন, তিন মন্দির, শাহী ইদগাহের শিলালিপি, বিশ^ম্ভরপুর আখড়ায় রক্ষিত কষ্টি পাথরের মূর্তি, কিন্ সেতু, আলি আমজাদের ঘড়ি, ওসমানী জাদুঘর,।

ঐতিহাসিক ঘটনা: হজরত শাহ্জালাল [র.] কর্তক সিলেট জয় ও ইসলাম প্রচার [চৌদ্দ শতক], পাঠান বীর খাজা ওসমানের সঙ্গে আক্রমনকারী মোগলদের লড়াই, নানকার বিদ্রোহ।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: হজরত জালালউদ্দি [শাহ্ জালাল], শাহ্ পরাণ, শ্রী শ্রী চৈতন্য দেব, স্বামী নিখিলানন্দ [নিউ ইয়র্ক রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠতা], ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব [শহিদ দার্শনিক], শাহ্ আবদুল করিম [লোক গীতিকার ও গায়ক], দিলওয়ার খান [কবি], হুমায়ুন রশিদ চেীধুরী আমলা-রাজনীতিক], জোবেদা রহিম চৌধুরী [রাজনীতিক], রুশেনারা আলি [ প্রথম বাংলাদেশী ব্রিটিশ এম.পি.]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক মানচিত্র, দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক সিলেট বাণী, দৈনিক আজকের সিলেট।

প্রধান ফসল: ধান, সরিষা, সুপারি।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, কমলালেব, লিচু।

শিল্প: চা কারখানা, সার কারখানা [ফেঞ্চুগঞ্জ], এলপি গ্যাস প্লান্ট

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, শীতল পাটি।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস, অশোধিত তেল।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, চা, সুপারি, সার।

নদী: সুরমা [৩৫০ কিমি], কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু।

প্রধান হাওর: হাকালুকি।

হাওর: ৮২টি। সিংগুয়া [১২.৬৫ বর্গ কিমি], চাতলা [১১.৮৬ বর্গ কিমি]

সংরক্ষিত বন: ২৩৬.৪২ কিমি।

টিলা: জৈন্তাপুর টিলা, শারি টিলা, লালাখাল টিলা, ঢাকা দক্ষিণ টিলা।

মৌলভিবাজার

১৮৮২ সালে সৃষ্ট মহকুমা ‘দক্ষিণ শ্রীহট্ট’ [পরে দক্ষিণ সিলেট] ১৯৬০ সালে নামাকরণ হয় মৌলভিবাজার যা ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। মৌলভিবাজার জেলার উপজেলা ৭টি। সেগুলি হলো: কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা, মৌলভিবাজার সদর, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল। মৌলভিবাজারও ঠিক হাওর জেলা নয়। জেলার কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখায় হাকালুকির অবস্থান বলে একে হাওর জেলার অন্তর্গত বলে ধরা হয়।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ১৯,৯৪,২৫২ জন [নারী ১০,১২,৪৬৮ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৩১.২১%, কৃষি শ্রমিক ১৫.০১%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৫৮%, শিল্প শ্রমিক ৩.৬১%, পরিবহণ শ্রমিক ১.৬৬%, মৎস্যজীবী ২.৬%, ব্যবসা ৯.১২%,  চাকুরি ৯.৭৩%, অন্যান্য ১৬.৪৮% জন।

শিক্ষার হার: ৩০.৮ শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: শাহ্ মোস্তফার দরগাহ ও মসজিদ, খোয়াজা মসজিদ [লঘাটি, বড়লেখা], মাধবকু-ু জল প্রপাত [বড়লেখা], খোজা মসজিদ [চতুর্দশ/পঞ্চদশ শতাব্দী, গয়ঘর], হুম হুম জলপ্রপাত [রাজকান্দি সংরক্ষিত বন, কমলগঞ্জ], হামিদুর রহমান মনুমেন্ট [কমলগঞ্জ], মাধবপুর হ্রদ, মাধব মন্দির, রঙ্গীরকুল বিদ্যাশ্রম [উনবিংশ শতাব্দী, কুলাউড়া], পৃথ্বিমপাশা নবাব বাড়ি [অষ্টাদশ শতাব্দী], সাধক অজ্ঞান ঠাকুরের মন্দির, নির্মাই শিববাড়ি [১৪৫৪], গায়েবি ইটের মসজিদ [ব্রাহ্মণগাঁও] এবং ফারসি লিপি [১৩০৩] ও অনন্ত নারায়ণ দেবতার বিগ্রহ [কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত]। লাউয়ারছড়া জাতীয় উদ্যান। ৯৩০ সালে পশ্চিমভাগে প্রাপ্ত তা¤্রলিপি [কপার প্লেটস]।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৮৫৭ সালে চট্টগ্রামের ৩০০ বিদ্রোহী সিপাহি পৃথ্বিমপাশার জমিদার গৌছ আলী খাঁর আশ্রয় গ্রহণ। ১৯২১ সালে মৌলভিবাজারে অনুষ্ঠিত খেলাফত সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা হোসেন আহমদ মদনী, সরোজিনী নাইডোর যোগদান। ভানুবিল প্রজা বিদ্রোহ [বাংলা ১৩০৭], নানকার বিদ্রোহ ১৯৩১-৩২]।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: গোপীনাথ দত্ত [বাংলা মহাভারত রচয়িতাদের অন্যতম], লীলা দত্ত নাগ [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, নারী শিক্ষা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা], মওলানা আবদুর রহিম সিংকাপনী [রাজনীতিক, সাংবাদিক],শচীন্দ্রলাল [লাক]ু দত্ত [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী], নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামী [ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী], সৈয়দ মুজতবা আলী [সাহিত্যিক], ইসরাইল মিয়া [ভাষা সংগ্রামী], বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান [কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় আমবাসা গ্রামে শহিদ]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক মৌলভীবাজার বার্তা, দৈনিক বাংলার দিন, দৈনিক খোলা চিঠি।

প্রধান ফসল: ধান, কচু, তিল, রাবার, পান, সুপারি ও চা। দেশের ১৫৩টির মধ্যে ৯১টি চা বাগান ‘চা-রাজধানী’ বলে খ্যাত মৌলভিবাজারে অবস্থিত। শতকরা ৬৪ ভাগ চা এখানে উৎপাদিত হয়। এখানে প্রস্তুতকৃত এক কাপে সাত স্তরে, সাত রঙের, সাত স্বাদের চা এক অপূর্ব সৃষ্টি।

ফল-ফলাদি: কাঁঠাল, আনারস, লেবু,  কমলালেব, লিচু, জাম্বুরা, সাতকড়া , কামরাঙ্গা।

শিল্প: চা কারখানা।

কুঠির শিল্প: আগরবাতি, আগর, মণিপুরী তাঁত, বাঁশ, বেত, শীতল পাটি।

খনিজ সম্পদ: কয়লা, লিগনাইট, কাঁচ-বালি,  প্রাকৃতিক গ্যাস, অশোধিত তেল।

রপ্তানি দ্রব্য: চা, পান, বাঁশ, কাঁঠাল, আনারস, কমলালেবু, আম, রাবার, আগরবাতি, আগর, কাঁচ-বালি, সাতকড়া, লেবু, নাগা মরিচ, শাকসবজি।

নদী: মনু, ধলাই, জুড়ি।

প্রধান হাওর: হাকালুকি, হাইল, কাউয়াদিঘি, বিলাসছড়া হ্রদ।

বনভূমি: ৪১৩.৬৫ কিমি; পাথারিয়া, লংলা [ষাড়ের গজ], রাজকান্দি, ভানুগাছ প্রভৃতি।

হবিগঞ্জ

তরফের সৈয়দ হাবিবউল্লাহ্র নামানুসারে ক্রমে হাবিবগঞ্জ থেকে হাবিগঞ্জ ও পরে হবিগঞ্জের নামাকরণ হয়। ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে এলাকটি নাসিরাবাদ তথা ময়মনসিংহের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালে ঢাকা জেলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ থানা এবং ১৮৬৭ সালে মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৭৪ সালে হবিগঞ্জ আসামের সিলেট জেলায় যুক্ত হয়। ১৯১১ সালে হবিগঞ্জ পুনরায় পূর্ববঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়।  এ জেলার উপজেলা ৯টি। সেগুলি হলো: আজমিরিগঞ্জ, চুনারুঘাট, নবিগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল, মাধবপুর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর। এ জেলার নবিগঞ্জ, আজমিরিগঞ্জ ও লাখাইয়ের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চল।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,৩৩৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২১,৭১,০৬৫ জন [১১,০৫,১৫৬ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪২.২৬%, কৃষি শ্রমিক ২০.৫৫%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৪৫%, শিল্প শ্রমিক ১.৭%, মৎস্যজীবী ২.৭৩%, ব্যবসা ৮.২%,  চাকুরি ৪.৬৯%, অন্যান্য ১৩.৪২% ভাগ।

শিক্ষার হার: ২২.৫১ শতাংশ।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: প্রাচীন রাজবাড়ি [১৭৩৭-৩৮; পুরানবাগ, বানিয়াচং], সাগরদিঘি [বানিয়াচং], বিথঙ্গল আখড়া [বানিয়াচং], ফুলতলী টিলা ও জলপ্রপাত [নবিগঞ্জ], কুড়ি টিলা, কৃষ্ণ পাথর ও প্রাচীন রাজবাড়ি [দিনারপুর, নবিগঞ্জ], কালীবাড়ি [সদর], সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের হুজরাখানা [মুড়ারবন্দর, চুনারুঘাট], পুঁটিজুড়ি জামে মসজিদ [বাহুবল]।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক-বাংলোতে ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসারদে সঙ্গে ওসমানীর বৈঠক।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: বাবু কালীপ্রসন্ন [রাজনীতিক], রায় বাহাদুর উমেশ দত্ত [রাজনীতিক], যোগেন্দ্রচন্দ্র রায় [চিকিৎসক], দেওয়ান মর্তুজা [কবি], জানকীনাথ [মনসা মঙ্গল রচয়িতা], বিপিনচন্দ্র পাল [সাংবাদিক ও কবি], সৈয়দ সুলতান [কবি], কেদারনাথ রায়, হেমাঙ্গ বিশ^াস [গণসঙ্গীতকার], দেওয়ান ফরিদ গাজী [রাজনীতিক], মেজর জেনারেল আবদুর রব [চিফ অব স্টাফ, লিবারেশন ফোর্স], মেজর জেনারেল, চিত্তরঞ্জন দত্ত [বীর উত্তম], জগৎজ্যোতি দাস [বীর বিক্রম;  ১৬ নভেম্বর’৭১ আজমিরিগঞ্জ যুদ্ধে শহিদ], শাহ্ এএমএস কিবরিয়া [আমলা কাম রাজনীতিক], সিরাজুল হুসেন খান [সাংবাদিক ও রাজনীতিক], সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন [প্রধান বিচারপতি], সৈয়দ হোসেন [প্রধান বিচারপতি], স্যার ফজলে হোসেন আবেদ [জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা ও জনঋণদানকারী ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা], জগলুল আহমেদ চেীধুরী [সাংবাদিক]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক প্রতিদিনের বাণী, দৈনিক প্রভাকর, দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস।

প্রধান ফসল: ধান, চা, রাবার, পান, গম, পাট, আখ, আলু চিনাবাদাম, তৈলবীজ।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লেবু,  কমলা লেব, লিচু, জাম, নারকেল।

শিল্প: টেকস্টাইল মিল, ছাতা করাখানা, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল, সাবন কারখানা, বিস্কুট কারখানা, বরফ কারখানা, এলপি গ্যাস প্লান্ট, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র।

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, শীতল পাটি, তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, সেলাই।

চা ও রাবার বাগান: চা বাগান ২৪টি, রাবার বাগান ৩টি।

খনিজ সম্পদ: গ্যাস [রশিদপুর (বাহুবল), বিবিয়ানা ও হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড]।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান,  চা, পান, আখের গুড়, বাঁশ ও অন্যান্য বনজ সম্পদ।

নদী: কালনী, কুশিয়ারা, খোয়াই, গোপালা, সুতাং, করোঙ্গী, রতœা, বালু ও বরাক।

প্রধান হাওর: ?

পালা-গীতিকা: ধুপার পাট [পূর্ববঙ্গ গীতিকা]।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

এক কালের সমতটের অংশ, ১৭৯০ সালে সৃষ্ট ত্রিপুরা জেলার অন্যতম মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে যোগ দেয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপজেলা ৯টি। সেগুলি হলো: আখাউড়া, আশুগঞ্জ, কসবা, নবিনগর, নাসিরনগর, বাঞ্ছারামপুর, বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও সরাইল।  এ জেলার নাসিরনগর ও সরাইলের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,৫৫১ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৯,৫৩,২০৮ জন [নারী ১৫,৩২,২১৭ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৪.৭৯%, কৃষি শ্রমিক ১৫.৮২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৩%, পরিবহণ শ্রমিক ১.৮৫%, মৎস্যজীবী ২.০২%, তাঁতী ২.৩৯, ব্যবসা ১২.২৬%,  চাকুরি ৬.৮%, অন্যান্য ১০.৯৪% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৯.৪৬% শতাংশ।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: কাজী মাহমুদ শাহর [র] মাজার [চতুর্দশ শতক; কাজী পাড়া, সদর], কালভৈরব মন্দির [ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর], এন্ডারসন সমৃতিসৌধ [কাউতলী, সদর], আরফাইল মসজিদ ও জোড়া কবর [ষোড়শ শতাব্দী, সরাইল], আরফান্নেসা মসজিদ [১৬৬২, সরাইল], সর্বধর্ম সমন্বয় মন্দির [কালিকচ্ছ, সরাইল], ভাদুঘর শাহী মসজিদ [১০৮৪ হি.] উলচাপাড়া মসজিদ [ষোড়শ শতাব্দী], কল্লা শহিদের মাজার [চতুর্দশ শতক; খড়মপুর, আখাউড়া], শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম [সপ্তদশ শতাব্দী, কসবা], কৈলাগড় জাঙ্গাল [কসবা], সতীদাহ মন্দির [বিদ্যাকুট], শিব মন্দির [নাটঘর], জগন্নাথ মন্দির [নাসিরনগর], বিষ্ণু মূর্তি [বাঘাউড়া], বাসুদেব মূর্তি [কালিকচ্ছ], বৌদ্ধ বিহার [দেবগ্রাম], হাতির পুল [১৬৫০ সালে নির্মিত; বাড়ৈউড়া], নবিনগর মঠ।

প্রাপ্ত মুদ্রা: রানি এলিজাবেথের প্রতিকৃতি অঙ্কিত ১৮০৪, ১৪ ও ৩৬ সালের ৫০০ মুদ্রা।

ঐতিহাসিক ঘটনা: ১৮২৪ সালে মনিপুর অধিকারের সময় এ শহরে ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক সসদর দফতর স্থাপিত হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে এখানে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে বিপ্লবী উল্লাস কর [অভিরাম] দত্তকে আন্দামানে দ্বীপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহিদ হন।

বিশিষ্ট ব্যক্তি: মা আনন্দময়ী, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খাঁ, ওস্তাদ আবেদ হোসেন খাঁ, ওস্তাদ খাদেম হোসেন খাঁ, ওস্তাদ রাজা হোসেন খাঁ, ওস্তাদ খুরশিদ খাঁ, অমর পাল, ওস্তাদ সুবল দাস, ওস্তাদ আফজালুর রহমান, বিপ্লবী উল্লাসকর [অভিরাম] দত্ত [আন্দামানবন্দি], নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা [শিক্ষা ও রাজনীতিবিদ], ব্যরিস্টার আবদুর রসুল [রাজনীতিবিদ], নবাব কে.জি.এম. ফারুকী [রাজনীতিবিদ], ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত [রাজনীতিবিদ, শহিদ], মওলানা তাজুল ইসলাম, নবাব সিরাজুল ইসলাম, মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য [দানবীর], প্রবোধচন্দ্র সেন [ছন্দ বিজ্ঞানী], কৈলাসচন্দ্র সিংহ [ঐতিহাসিক], বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, অধ্যক্ষ দ্বিজদাস দত্ত, আবদুল কাদির [সাহিত্যিক], অলি আহাদ [ভাষা সংগ্রামী, রাজনীতিবিদ], আল মাহমুদ [কবি], সানাউল হক [কবি], এ.কে. লুৎফর রহমান [শহিদ বুদ্ধিজীবী] ।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দৈনিক প্রতিবেদন, দৈনিক আজকের হালচাল, দৈনিক তিতাস কণ্ঠ, দৈনিক সমতট বার্তা, দৈনিক দিনদর্পন,

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, আলু, তৈলবীজ, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, বেগুন, পটল, কাঁকরোল।।

ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, লিচু, নারকেল, পেয়ারা, জলপাই, বিলিম্বি, লেবু, টেরপই।

শিল্প: সার কারখানা, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল, বরফকল, করাতকল [স’মিল], প্রিন্টিং প্রেস, ওয়েল্ডিং।

কুঠির শিল্প: তাঁত, বাঁশ, বেত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, কাঠের কাজ। উনবিংশ শতাব্দীতে সরাইলের ‘তানজেব’ নামের মসলিন ছিল বিখ্যাত। নৌকা তেরি [বিশেষ করে বাইচের নৌকা], শীতল পাটি, তাঁত, সেলাই।

খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক গ্যাস [গ্যাস ক্ষেত্র তিতাস, মেঘনা, সালদা নদী]।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, পাট সরিষা, তাঁতদবস্ত্র, হস্তশিল্প, চামড়া, প্রাকৃতিক গ্যাস, শাকসব্জি

প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, বুড়ি, হাওড়া, কলকুলিয়া ।

প্রধান হাওর: মেহেদি ও আকাশি।

কিশোরগঞ্জ

১৮৬০ সালে সৃষ্ট মহকুমা কিশোরগঞ্জ ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা ১৩টি। সেগুলি হলো: অষ্ট্রগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, তাড়াইল, নিকলী, পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, ভৈরব, মিঠামইন ও হোসেনপুর। এ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা পুরোপুরি এবং ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, নিকলী, করিমগঞ্জ ও তাড়াইলের অংশ বিশেষ হাওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,২৩২ মিমি।

জনসংখ্যা: ৩০,২৮,৭০৬ জন [নারী ১৫,৩৮,৯৬৮ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৪৫.৪৮%, কৃষি শ্রমিক ২১.০২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, পরিবহণ শ্রমিক ২.০৬%, মৎস্যজীবী ১.৮৭%, ব্যবসা ১১.২%,  চাকুরি ৪.৪৭%, অন্যান্য ১০.৬১% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৮.৩ শতাংশ।

পর্যটন আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: জঙ্গলবাড়ি দুর্গ [পঞ্চদশ শতক (১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে বিধ¦স্ত), করিমগঞ্জ], এগারসিন্দুর দুর্গ [ ইসা খাঁ-মানসিংহ দ্বৈরথ যুদ্ধক্ষেত্র; পঞ্চদশ শতক, পাকুন্দিয়া], শাহ্ মাহমুদ মসজিদ [১৬৮০, এগারসিন্দুর], সাদী মসজিদ [১৬৫২, এগারসিন্দুর], অধিকারীর মঠ [ষোড়শ শতক, পাকুন্দিয়া], সালংকা জামে মসজিদ [পাকুন্দিয়া], মঠখোলা কালীমন্দিন [সপ্তদশ শতক, পাকুন্দিয়া], গুড়–ই মসজিদ [১৬৮০, বাজিতপুর], ভাগলপুর দেওয়ানবাড়ি মসজিদ [অষ্টাদশ শতক, বাজিতপুর], কুতুবশাহ মসজি [১৫৩৮, অষ্টগ্রাম], জাওয়ার সাহেববাড়ি মসজিদ [১৫৩৪, তাড়াইল], সেকেন্দারনগর মসজিদ [অষ্টদশ শতক, তাড়াইল], বাদশাহী মসজিদ [সপ্তদশ শতক, ইটনা], পাগলা মসজিদ [কিশোরগঞ্জ সদর], দিল্লির আখড়া [মোগল জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত, মিঠামইন], মালিকের দরগাহ্ [ভরা, মিঠামইন], ভাটি ঘাগড়া গ্রামে প্রাপ্ত সুলতান নাসিরউদ্দিন [প্রথম] মাহমুদ শাহর সময়কালের আরবি শিলালিপি [মিঠামইন], চন্দ্রাবতী শিবমন্দির [ষোড়শ শতক, কিশোরগঞ্জ সদর]। নন্দকিশোর প্রামাণিককে দেওয়া কৃষ্ণদাসের দলিল [১৭৫৯, কিশোরগঞ্জ সদর]নটরাজ শিবমূর্তি [চৌদ্দশত শতক, শহরমূল, নিকলী], শামসুদ্দিন বোখারির মাজার/কুড়িখাই মেলা [কটিয়াদি]। শোলাকিয়া ইদগাহে ইদের জামাতয়াত। অষ্টগ্রামের মহররম মিছিল। নক্শী পিঠা ও শিকা।

ঐতিহাসিক ঘটনা: … মোগল সেনাপতি মানসিংহ ও বারভূঞাদের অন্যতম ইসা খাঁর মল্লযুদ্ধ। খাতক বিদ্রোহ [১৯৩০-৩১]

বিশিষ্ট ব্যক্তি: চন্দ্রাবতী [কবি, …শতক], ইসা খাঁ, আবদুর রহিম মুন্সী [উনবিংশ শতাব্দী ১৮০১-৯৯?; পুথিকার, হোসেনপুর], ইবরাহিম বক্স [মাধব মালঞ্চি কইন্যা পালা প্রণেতা], ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসু [১৮৪৭-১৯০৬; বাংলার প্রথম র‌্যাংলার, ভারতীয় ছাত্র আন্দোালন ও কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা], উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী [জ. ১৮৬৩ মৃ….; লেখক, অঙ্কন শিল্পী], ড. দেবেন্দ্রমোহন বসু [১৮৮৫-১৯৭৬; পরমাণু বিজ্ঞানী, [জগদীশ] বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অধ্যক্ষ], হেমেন্দ্রমোহন বসু [এইচএমবি গ্রামোফোন কোম্পানির মালিক এবং কুন্তলীন তেল ও দেলকোশ সুগন্ধির আবিস্কারক]. সুকুমার রায় [১৮৮৭-১৯২৩; সাহিত্যিক, ইলাস্ট্রেটর], মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী [১৮৮৯-১৯৭০], অমল হোম রায় [১৮৯৪-১৯৭৫; সাংবাদিক, লেখক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সচিব], নীরদ সি. চেীধুরী [জ. ১৮৯৭-], খান বাহাদুর সৈয়দ মিসবাহউদ্দিন হোসেন [১৮৯৮-১৯৬৭; রাজনীতিক, সমাজব্রতী], নগেন সরকার [১৯০০-৮২; বিপ্লবী রাজনীতিক], পদ্মভূষণ ড. নীহাররঞ্জন রায় [১৯০৩-৮১; ইতিহাসবিদ], ওয়ালী নেওয়াজ খান [১৯০৪-৮৫; বিপ্লবী রাজনীতিক ও শিক্ষাব্রতী], রেবতীমোহন বর্মণ [১৯০৫-৫২; সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ক্যাপিটাল (মার্কসের ক্যাপিটালের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ) প্রভৃতি রচয়িতা। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য [১৯০৯-৮৪; অধ্যাপক ও লেখক], দেবব্রত বিশ^াস [১৯১১-৮০; প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী], নিবারণ প-িত [১৯১২-৮৪; বঞ্চিত মানুষের গায়ক] ড. এম. ওসমান গনি [১৯১২-৮৯; শিক্ষাবিদ ও সংগঠক], ব্যারিস্টার ভূপেশচন্দ্র গুপ্ত [১৯১৪-৮১; শিক্ষাব্রতী, কমিউনিস্ট নেতা ও আইনপ্রণেতা], মনিরউদ্দীন ইউসুফ ১৯১৯-৮৭; [শাহনামা অনুবাদক], সত্যজিৎ রায় [১৯২১-৯২; চলচ্চিত্রকার], কেদারনাথ মজুমদার [১২২৭-১৩৩৩ বঙ্গাব্দ], মতিওর রহমান [জ. ১২৯৮ বাংলা মৃ. ১৯৬৫খ্রি.; দেওয়ান ঈসা খাঁ ও ঐতিহাসিক অভিধান রচয়িতা, পাকুন্দিয়া], অখিল গোস্বামী [জ. ১৩২০ বাংলা; লোক গায়ক। ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ তার অমর সৃষ্টি], গুরুদয়াল সরকার [শিক্ষাব্রতী], মুন্সী আজিমউদ্দিন [আজিমউদ্দিন হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা], নিবারণ চক্রবর্তী [আন্দামান ফেরত বিপ্লবী রানীতিক], সৈয়দ নজরুল ইসলাম [১৯২৫-৭৫; মক্তিযুদ্ধকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্টপতি], সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন [১৯২৫-; শিক্ষাবিদ, নাট্য আন্দোলন সংগঠক], অজয় রায় [১৯২৮-২০১৭; কমিউনিস্ট রাজনীতিক ও লেখক], আবদুর রউফ [জ. ১৯৩৩; আগরতলা মামলার আসামী, সমাজব্রতী] আবু তাহের খান পাঠান [১৯৩৫-; রাজনীতিবিদ, ভাষা সংগ্রামী], কাজী আবদুল বারী [১৯৩৫-৮৩; রাজনীতিক], জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, ডা. আলিম চেীধুরী, লে. ক. হায়দার, জহুরুল ইসলাম [ব্যবসায়ী, সমাজব্রতী], রাজিয়া হোসাইন [জ. ১৯৩৮; শিক্ষক ও লেখক] মওলানা আবুল খায়ের মো. নূরুল্লাহ্ [জ. ১৯৩৯; ধর্মীয় লেখক], রাহাত খান [১৯৪০-২০২১; সাংবাদিক ও লেখক], মোহাম্মদ সাইদুর [রহমান] [ ১৯৪১-; ফোকলোর সংগ্রাহক], অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ [১৯৪৪; রাষ্ট্রপতি], বীরবিক্রম সিরাজুল ইসলাম [১৯৫২-৭১; শহিদ মুক্তিযোদ্ধা], মু.আ. লতিফ. ড. নিয়াজউদ্দিন পাশা [১৯  – ২০১৬; কৃষি-প্রকেীশলী ও পরিবেশ কর্মী], ইলিয়াস কাঞ্চন [অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নেতা], শামীম আরা নিপা [নৃত্যশিল্পী], জাহঙ্গীর আলম জাহান [জ. ১৯৬০]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক আজকের দেশ, দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ, দৈনিক আমার বাংলাদেশ, দৈনিক আজকের সারদিন, দৈনিক গৃহকোণ, দৈনিক ভাটির দর্পণ, প্রাত্যহিক চিত্র।

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, মিষ্টিআলু, ডাল, ছোলা, বাদাম, ভুট্টা, আখ, তৈলবীজ [সরিষা] শাকসব্জি।

ফল-ফলাদি: আম, লিচু, কলা, তাল, তেঁতুল, লটকন, চালতা, জলপাই, কামরাঙ্গা, ক্ষীরা, জাম্বুরা, আমলকি, হরতকি, আতা।

শিল্প: আফতাব ফিড মিল [বাজিতপুর], অয়েল মিল, করাতকল, বরফকল, হোমিও শিমি কারখানা।

কুঠির শিল্প: পনির, বাঁশ, বেত, কামার, কাঠের কাজ, শীতল পাটি, মিষ্টিদ্রব্র,। উনবিংশ শতাব্দীতে বাজিতপুরের মসলিন ছিল বিখ্যাত।

রপ্তানি দ্রব্য: ধান, পাট, কলা, লিচু, সরিষা, বাদাম, মুরগি, শাকসব্জি

প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, কালনী, ধনু, বাউলাই,ঘোড়াউত্রা, সিঙ্গুয়া, পিয়াইন, দলেম্বরী, সোয়াজিানী, নরসুন্দা, ফুলেশ^রী, আড়িয়াল খাঁ।

প্রধান হাওর: বড় হাওর [অষ্টগ্রাম-নিকলী-মিটামইন-ইটনা-লাখাই], হুমাইপুর হাওর [বাজিতপুর[, সোমাই হাওর [অষ্টগ্রাম], বাড়ির হাওর [মিঠামইন], তল্লার হাওর [নিকলী-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম], সুরমা-বাউলার হাওর [নিকলী], মাহমুদপুর হাওর [নিকলী]।

বিল/জলাশয়: বেংলা অষ্টগ্রাম, ছানিয়া [ইটনা] …

পালা-গীতিকা: মৈমনসিংহ গীতিকার দশটি পালার মধ্যে চন্দ্রাবতী ও দস্যু কোনারামের ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ কিশোরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। মলুয়া ও দেওয়ানা মদিনার ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ যথাক্রমে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ-হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে হবিগঞ্জ নাসিরাবাদ তথা ময়মনসিংহের অংশ ছিল। ১৭৯০ সালে ঢাকা জেলার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ থানা এবং ১৮৬৭ সালে মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৭৪ সালে হবিগঞ্জ আসামের সিলেট জেলায় যুক্ত হয়। ১৯১১ সালে হবিগঞ্জ পুনরায় পূর্ববঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। দেওয়ানা মদিনার উৎপত্তিস্থল সীমান্তবর্তী বানিয়াচং [হবিগঞ্জ] হলেও পালার ভাষা হবিগঞ্জ তথা সিলেট অঞ্চলের নয়। ফলে পালাটি কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের বলেই মনে হয়।

নেত্রকোনা

১৮৮২ সালে সৃষ্ট মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। নেত্রকোনা জেলার উপজেলা ১০টি। সেগুলি হলো: আটপাড়া, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, খালিয়াজুড়ি, দূর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, বারহাট্টা, মদন ও মোহনগঞ্জ। জেলার খালিয়াজুড়ি সম্পূর্ণ এবং মোহনগঞ্জ ও মদন অংশত হওরাঞ্চলে অবস্থিত।

বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ২,১৭৪ মিমি।

জনসংখ্যা: ২৩,১৭,১৯০ জন [নারী ১১,৬২,২২৩ জন]।

পেশাভিত্তিক জনবণ্টন: কৃষি ৫২.০৫%, কৃষি শ্রমিক ২১.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৯%, মৎস্যজীবী ১.৮৭%, ব্যবসা ৭.৬১%, চাকুরি ২.৯৪%, অন্যান্য ১০.৪৭% ভাগ।

শিক্ষার হার: ৩৯.৪৪% শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রতœসম্পদ: গারো পাহাড় [দূর্গাপুর], বিরিশিরি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক একাডেমি [দূর্গাপুর],  শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমীর মাজার [মদনপুর, সদর], রোয়াইলবাড়ি দুর্গ [কেন্দুয়া], খোঁজার দিঘি, কমলরানির দিঘি, কৃষ্ণপুর বৌদ্ধমঠ [আটপাড়া], সালকি মাটিকাটা গ্রামের পুরাকীর্তি।

ঐতিহাসিক ঘটনা: পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, সর্বভারতীয় কৃষক সমো¥লন [১৯৪৫]

বিশিষ্ট ব্যক্তি: নলিনীরঞ্জন সরকার [অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী], সাহাবুদ্দিন আহমদ [সাবেক রাষ্টপতি], কমরেড মণিসিংহ [প্রখ্যাত কৃষক ও কমিউনিস্ট নেতা], কাহ্ন [দশম শতকের কবি], জালালউদ্দিন খাঁ মরমী [কবি ও গায়ক], উকিল মুন্সী [বাউল কবি], চন্দ্রকুমার দে [মৈমনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক], খালেকদাদ চৌধুরী [লেখক], রওশন ইজদানী [লেখক ও সংগ্রাহক], যতীন সরকার [লেখক ও সংগঠক], হুমায়ুন আহমেদ [লেখক ও নির্মাতা], জাফর ইকবাল [লেখক ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী], নির্মলেন্দু গুণ, মোস্তফা জব্বার [ বিজয় সফটওয়ার উদ্ভাবক], হেলাল হাফিজ [কবি], বারী সিদ্দিকী [বাঁশি বাদক ও গায়ক]।

দৈনিক পত্রিকা: দৈনিক বাংলার দর্পণ।

প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, আলু, তৈলবীজ [সরিষা]।

ফল-ফলাদি: আম, জাম্বুরা, কাঁঠাল লেবু, কলা, পেঁপে, তাল, নারিকেল, বেল।

শিল্প: করাতকল, তেলকল, বরফকল।

কুঠির শিল্প: বাঁশ, বেত, বিড়ি, কুমার।

প্রাকৃতিক/খনিজ সম্পদ: চিনা মাটি

রপ্তানি দ্রব্য: মাছ, চামড়া, ডিম।

প্রধান নদী: সোমেশ^রী, কংস , মগরা, ধনু, ধলা তেওরখালী। সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালী [সিস্টেম]

প্রধান হাওর: ডিঙ্গাপোতা [মোহনগঞ্জ]।

পালা-গীতিকা: মৈমনসিংহ গীতিকার দশটি পালার মধ্যে মহুয়া, কমলা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা এবং কাজল রেখার ঘটনা ও বর্ণিত স্থানসমূহ নেত্রকোনার এবং মলুয়া নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত।

হাওর মহাপরিকল্পনা

হাওর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ খ্রি. হাওর মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান অব হাওর এরিয়াস) নামে ২০১২-১৩ থেকে ২০৩১-৩২ অর্থ বছর পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদী একটি বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬টি বিষয়ের (থিমেটিক এরিয়া) অধীনে ১৮টি উন্নয়ন এলাকায় (ডেভেলপমেন্ট এরিয়া) ১৫৩টি স¦ল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী  প্রকল্পের জন্য ২৭ হাজার ৯৬৩ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকার বরাদ্ধ প্রস্তাব করা হয়। উন্নয়ন এলাকাসমূহ হল: ১.পরিবহন ও যোগাযোগ ২. মৎস্য ৩. বিদ্যুৎ ও শক্তি ৪. বন ৫. খনিজ সম্পদ ৬. কৃষি ৭. পানি সম্পদ ৮. স্বাস্থ্য ৯. জীব-বৈচিত্র ও জল-সিক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ১০. পানি সরবরাহ ও পয়ঃ ১১. প্রাণি সম্পদ ১২. শিল্প ১৩. শিক্ষা ১৪. সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ১৫. মুক্তা উৎপাদন ১৬. গৃহায়ণ ও বসতি ১৭. পর্যটন ও ১৮. সংস্থাপন। কিন্তু বাস্তবে এসবের বাস্তবায়ন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। বরং এর বাইরে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। অধিকন্তু বর্তমান আমলা-পরিবেষ্টিত সরকার এখন সারা দেশের জন্য অপর একটি শতবর্ষব্যাপী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণের দিকে যাচ্ছেন যা পরিশেবাদীগণ এদেশের জন্য অনুপযোগী বলে মনে করেন।

দ্রষ্টব্য: এ ধরনের লেখা কখনই পুর্ণতা ও সর্বজনগ্রাহ্যতা দাবি করতে পারে না। প্রতিটি জেলা/উপজেলার উদ্যমী লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও ফেইসবুকারদের নিজ নিজ জেলা ও উপজেলা বিষয়ে লেখা এবং ভুল সংশোধন ও বাদ পড়া তথ্য সম্ভব হলে ছবিসহ halimdadkhan1955@gmail.com-এ পাঠানোর জন্য জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ধন্যবাদ।

 

: লেখক ও গবেষক: ড. হালিম দাদ খান