বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার পর এবার কোন্দল ও বিভাজনে বিপর্যস্ত নিজ জেলার দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের ১১ জন নেতা। যারা এখন তৃণমূলের দাবীর প্রেক্ষিতে দলকে সুসংগঠিত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে অতীতের মত মুখে ঐক্যের কথা বললেও বাস্তবে আদৌ নেতাদের মধ্যে ঐক্য হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ আগষ্ট বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকার। কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হন আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদিউজ্জামান খসরু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আড়াইহাজারের নজরুল ইসলাম আজাদ, কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, সহ-সভাপতি শাহ আলম, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক রেজাউল করিম, সোনারগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাধারন সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা রূপগঞ্জের মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূইয়া ও আড়াইহাজারের এ এফ এম ইকবাল। কিন্তু কে›¤্রীয় কমিটিতে নিযুক্ত এই ১১ নেতার মধ্যে অধিকাংশের মাঝে প্রকাশ্য কোন্দল রয়েছে। যার কারনে নারায়ণগঞ্জে জেলা থেকে মহানগর, উপজেলা থেকে থানা, ইউনিয়ন এমনি ওয়ার্ড পর্যায়েও দলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপি ছেড়ে এখন নেতা পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে এড. তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কাজী মনিরুজ্জামান সাধারন সম্পাদক হলেও বহু আগেই ভেঙ্গে পড়েছে ‘চেইন অব কমান্ড’। যেই কারনে দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম কোন্দল বিরাজ করছে। দলীয় সূত্র জানায়, মূলত জেলার সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকারের সাথে মতনৈক্যের কারনে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তৈমূর আলম খন্দকার দলীয় কার্যালয় রেখে বেশীরভাগ সময়ই তার বাসভবন মাসদাইরের মজলুম মিলনায়তনে দলীয় সভা করেন। ফলে যারা দলকে ভালবাসেন তারা মূলত সেই বাসভবনের রাজনীতিতে আর সম্পৃক্ত হতে চাননা। তাই তৈমূর বিরোধীরা কেউ কাজী মনিরুজ্জামান, কেউবা সাবেক এমপি এড. আবুল কালামের পক্ষে কাজ করছেন।
জেলা বিএনপির নেতাকমীরা জানিয়েছে, শুধু জেলা বিএনপিতেই নয় উপজেলা পর্যায়েও কোন্দলের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলের মাঝে। রূপগঞ্জ উপজেলায় এক পক্ষ তৈমূর পন্থী, এক পক্ষ কাজী মনিরুজ্জামান, আরেক পক্ষ সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া কার্যকরী সদস্য দিপু ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করছে। যার কারনে একই দল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। সোনারগাঁওয়ে সাবেক এনপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম এবং তৈমূর পন্থী বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নানের মধ্যে বিরোধ থাকার কারনে এখানেও বিএনপির কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু এবার এই দুইজন সেই কোন্দল ভুলে ঐক্যের চিন্তা করছেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক রেজাউল করিম জানান, এই মূহুর্তে দলকে সুসংগঠিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। অপর সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো। এর আগে, আরেক সদস্য ও সাবেক এমপি এড. আবুল কালামও বলেছেন, এখন দলকে সুসংগঠিত করতে ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই কোন্দল বিভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ্য করতে হবে। যদিও নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বিএনপিতে চলে আসা কোন্দল বিভাজন নিরসনে ইতিমধ্যেই ঐক্যের প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় বিএনপিতে নিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার ১১ নেতাকে নিয়ে একটেবিলে বসে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষে পর্যায়ক্রমে নেতাদের সাথে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এখন বিভাজন ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতীত কোন বিকল্প নেই। আর খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে সদ্য নিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকার দলকে সুসংগঠিত করতে, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে শীর্ষ নেতাদের ত্যাগের মনমানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।