অস্থিরতার মধ্যেই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন। যার মাধ্যমে টানা ১৪ বছরের শাসনাবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার কিয়ার স্টারমার। এদিকে ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির এবার ভরাডুবি হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছে বিভিন্ন জরিপ সংস্থা। দুদলের উত্থন-পতন নিয়ে এবারের নির্বাচন ঘিরে বেশ কিছু দিন ধরেই উদ্বেগ চলছে দেশটিতে। একাধিক কারণে বিশ্ব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে এ নির্বাচন। বিশেষ কয়েকটি কারণে এই নির্বাচনে গভীর মনোযোগ দিচ্ছেন বিশ্ব পর্যবেক্ষকরা। বলছেন, যুক্তরাজ্যের নির্বাচন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে। এছাড়াও নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি, ন্যাটোর মতো জোটের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তায় তার ভূমিকাকে সফল রূপ দেবে। ফাস্টপোস্ট।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য বিশ্বব্যাপী একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ-বৃহত্তর অর্থনীতি হিসাবে স্থান পেয়েছে দেশটি। এই অবস্থা বিশ্ববাজারে তার অর্থনৈতিক নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যা ২০২৩ সালের শেষার্ধে সংকোচনের হারকে পুনরুদ্ধার করে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন বিশ্ব নজরে থাকার আরেকটি বিশেষ কারণ অতি ডানপন্থিদের উত্থান। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীল শাসনের পর এবার ডানপন্থি দল ক্ষমতায় এলে দেশটির সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কৌশলগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক মডেল দিতে পারবে। সর্বোপরি, যুক্তরাজ্য জাতিসংঘে ভেটো-চালিত শক্তি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্তের বিশ্বব্যাপী প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন এবং গাজার মতো চলমান সংঘাতের ক্ষেত্রে।
যুদ্ধক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ইউক্রেনের জন্য সামরিক, আর্থিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন বজায় রাখতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দলটি যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দায়বদ্ধ রাখার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। লেবার পার্টি ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট পথ প্রদানের পক্ষেও কাজ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দলটি বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা হবে তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার। এছাড়াও লেবার পার্টি একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান অর্জনের লক্ষ্যে পুনর্নবীকরণ শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৈশ্বিক সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কিভাবে যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার অর্থনৈতিক নীতিগুলো গঠন করবে। বিশেষ করে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য সম্পর্ক, আর্থিক কৌশল এবং শাসক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। নতুন সরকার কিভাবে বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে কী অবস্থান নেবে তা নিয়েই চলছে আলোচনা।