ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিছ চৌধুরী জীবিত না মৃত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২০:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৬
  • ২৯৭ বার

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি আবুল হারিছ চৌধুরী জীবিত না মৃত? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ‘হাওয়া ভবনের’ আশীর্বাদপুষ্ট এই নেতা ছিলেন বিএনপি সরকারের দাপুটে ব্যক্তি। বিএনপি সরকারের আমল শেষে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেন ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়িতে। সেখান থেকে ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে ইরানে চলে যান তিনি। দুই বছর পর ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হারিছ চৌধুরী চিকিৎসার জন্য চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। চিকিৎসা শেষে থেকে যান সেখানেই। এরপর কয়েকবার ইরান ও ভারতের করিমগঞ্জ যাতায়াত করেন হারিছ চৌধুরী। এমন তথ্য পাওয়া গেছে হারিছ চৌধুরীর স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় আত্মীয়স্বজন ও সিলেট বিএনপির একান্ত আস্থাভাজন কয়েক নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে প্রায় দুই বছর ধরে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই আলোচিত-সমালোচিত এই নেতার। ফলে হারিছ চৌধুরী বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন— এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র কৌতূহল। সিলেট বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, হারিছ চৌধুরী যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে কারও না কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকত। যদি হারিছ চৌধুরী জীবিত তাহলে তিনি কোথায়? ভারতের করিমগঞ্জ, ইরান না যুক্তরাজ্যে— কেউই তা বলতে পারছেন না।

হারিছ চৌধুরী উধাওয়ের পরও বিভিন্ন উপলক্ষে নগরীতে তার পক্ষ থেকে পোস্টারিং করতেন তার অনুসারীরা। কিন্তু বছরখানেক ধরে এরকম কোনো পোস্টারিংও দেখা যাচ্ছে না। কোনো আলোচনায়ও নেই তিনি। হারিছ অনুসারীদের একসময় ধারণা ছিল, তিনি দেশে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। তাদের সেই ধৈর্য ধরে অপেক্ষার শেষ হয়নি। তবে বর্তমানে কোনো নেতা-কর্মীর আলোচনাতে নেই হারিছ চৌধুরী। এখন আর তার জন্য কোনো নেতা-কর্মীও নেই অপেক্ষায়। তাদের ধারণা, হারিছ চৌধুরী জীবিত থাকলেও রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়ার মতো শারীরিক সুস্থতা বা মানসিক অবস্থাও নেই। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, হারিছ চৌধুরী জীবিত থাকলে ভারতের করিমগঞ্জে তার নানাবাড়িতে অবস্থান করার সম্ভাবনাই বেশি। নিজের গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের দর্পনগর থেকে তার নানাবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সেখানেই তিনি আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। হারিছ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, জীবিত নাকি মৃত— তার কোনোটাই জানা নেই তার স্বজনদের। তার চাচাতো ভাই ফখর উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হারিছ কোথায় আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সে বিষয়েও আমরা কিছু জানি না।

দোর্দণ্ড প্রভাব : চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হারিছ চৌধুরী ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারেক রহমান ও ওই সময়ের ব্যাপক আলোচিত ‘হাওয়া ভবন’-এর মদদপুষ্ট এই নেতার দাপটে বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই ছিলেন কোণঠাসা। ক্ষমতার দম্ভে হারিছ চৌধুরী ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তখন। বড় বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায় তার নাম। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগর গ্রামে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন আরেক ‘হাওয়া ভবন’। প্রভাব খাটিয়ে বাড়িতে অবৈধভাবে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী পুষতে শুরু করেন তিনি। বাড়িতেই ব্যাংকের শাখা, পোস্ট অফিস ও নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে নেন হারিছ চৌধুরী। ওই সময় হারিছ চৌধুরীর দাপুটে অবস্থানের কারণে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে ঘেঁষতে পারেননি।

দেশ ছেড়ে পলায়ন : ক্ষমতার পটপরিবর্তনে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিপাকে পড়েন হারিছ চৌধুরী। দেশের শীর্ষ ৫০ দুর্নীতিবাজের একজন হিসেবে নাম প্রকাশিত হয় হারিছ চৌধুরীর। এ ছাড়া বিভিন্ন আলোচিত মামলা তথা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও নাম আসে হারিছ চৌধুরীর। বিপাকে পড়া হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার প্রথম গন্তব্য ছিল ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়ি।

ইরান থেকে যুক্তরাজ্য : ভারত থেকে ইরানে ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে আশ্রয় নেন হারিছ চৌধুরী। রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত এই নেতাকে প্রতি ১০ বছর পর পর শরীরের সব রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। এ জন্য ইরান থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। সেখানেই দীর্ঘদিন অবস্থান করেন তিনি।

দেশে নেই ছেলেমেয়েরাও : হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী ও সন্তানরা কেউই দেশে নেই। মাঝে-মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে স্ত্রী দেশে এলেও আবার ফিরে যান সেখানে। যুক্তরাজ্যে নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কোম্পানিতে চাকরি করেন হারিছ চৌধুরীর ছেলে। মেয়েও কর্মরত যুক্তরাজ্যে। মাঝে-মধ্যে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে অস্ট্রেলিয়ায় যান তিনি। হারিছ চৌধুরী দেশ ছাড়ার পর ছেলেমেয়েরাও দেশে আসেন না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হারিছ চৌধুরী জীবিত না মৃত

আপডেট টাইম : ১১:২০:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৬

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি আবুল হারিছ চৌধুরী জীবিত না মৃত? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ‘হাওয়া ভবনের’ আশীর্বাদপুষ্ট এই নেতা ছিলেন বিএনপি সরকারের দাপুটে ব্যক্তি। বিএনপি সরকারের আমল শেষে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেন ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়িতে। সেখান থেকে ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে ইরানে চলে যান তিনি। দুই বছর পর ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হারিছ চৌধুরী চিকিৎসার জন্য চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। চিকিৎসা শেষে থেকে যান সেখানেই। এরপর কয়েকবার ইরান ও ভারতের করিমগঞ্জ যাতায়াত করেন হারিছ চৌধুরী। এমন তথ্য পাওয়া গেছে হারিছ চৌধুরীর স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় আত্মীয়স্বজন ও সিলেট বিএনপির একান্ত আস্থাভাজন কয়েক নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে প্রায় দুই বছর ধরে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই আলোচিত-সমালোচিত এই নেতার। ফলে হারিছ চৌধুরী বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন— এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র কৌতূহল। সিলেট বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, হারিছ চৌধুরী যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে কারও না কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকত। যদি হারিছ চৌধুরী জীবিত তাহলে তিনি কোথায়? ভারতের করিমগঞ্জ, ইরান না যুক্তরাজ্যে— কেউই তা বলতে পারছেন না।

হারিছ চৌধুরী উধাওয়ের পরও বিভিন্ন উপলক্ষে নগরীতে তার পক্ষ থেকে পোস্টারিং করতেন তার অনুসারীরা। কিন্তু বছরখানেক ধরে এরকম কোনো পোস্টারিংও দেখা যাচ্ছে না। কোনো আলোচনায়ও নেই তিনি। হারিছ অনুসারীদের একসময় ধারণা ছিল, তিনি দেশে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। তাদের সেই ধৈর্য ধরে অপেক্ষার শেষ হয়নি। তবে বর্তমানে কোনো নেতা-কর্মীর আলোচনাতে নেই হারিছ চৌধুরী। এখন আর তার জন্য কোনো নেতা-কর্মীও নেই অপেক্ষায়। তাদের ধারণা, হারিছ চৌধুরী জীবিত থাকলেও রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়ার মতো শারীরিক সুস্থতা বা মানসিক অবস্থাও নেই। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, হারিছ চৌধুরী জীবিত থাকলে ভারতের করিমগঞ্জে তার নানাবাড়িতে অবস্থান করার সম্ভাবনাই বেশি। নিজের গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের দর্পনগর থেকে তার নানাবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সেখানেই তিনি আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। হারিছ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, জীবিত নাকি মৃত— তার কোনোটাই জানা নেই তার স্বজনদের। তার চাচাতো ভাই ফখর উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হারিছ কোথায় আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সে বিষয়েও আমরা কিছু জানি না।

দোর্দণ্ড প্রভাব : চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হারিছ চৌধুরী ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারেক রহমান ও ওই সময়ের ব্যাপক আলোচিত ‘হাওয়া ভবন’-এর মদদপুষ্ট এই নেতার দাপটে বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই ছিলেন কোণঠাসা। ক্ষমতার দম্ভে হারিছ চৌধুরী ধরাকে সরা জ্ঞান করেন তখন। বড় বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায় তার নাম। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগর গ্রামে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন আরেক ‘হাওয়া ভবন’। প্রভাব খাটিয়ে বাড়িতে অবৈধভাবে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী পুষতে শুরু করেন তিনি। বাড়িতেই ব্যাংকের শাখা, পোস্ট অফিস ও নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে নেন হারিছ চৌধুরী। ওই সময় হারিছ চৌধুরীর দাপুটে অবস্থানের কারণে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে ঘেঁষতে পারেননি।

দেশ ছেড়ে পলায়ন : ক্ষমতার পটপরিবর্তনে ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিপাকে পড়েন হারিছ চৌধুরী। দেশের শীর্ষ ৫০ দুর্নীতিবাজের একজন হিসেবে নাম প্রকাশিত হয় হারিছ চৌধুরীর। এ ছাড়া বিভিন্ন আলোচিত মামলা তথা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও নাম আসে হারিছ চৌধুরীর। বিপাকে পড়া হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার প্রথম গন্তব্য ছিল ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়ি।

ইরান থেকে যুক্তরাজ্য : ভারত থেকে ইরানে ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে আশ্রয় নেন হারিছ চৌধুরী। রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত এই নেতাকে প্রতি ১০ বছর পর পর শরীরের সব রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। এ জন্য ইরান থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। সেখানেই দীর্ঘদিন অবস্থান করেন তিনি।

দেশে নেই ছেলেমেয়েরাও : হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী ও সন্তানরা কেউই দেশে নেই। মাঝে-মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে স্ত্রী দেশে এলেও আবার ফিরে যান সেখানে। যুক্তরাজ্যে নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কোম্পানিতে চাকরি করেন হারিছ চৌধুরীর ছেলে। মেয়েও কর্মরত যুক্তরাজ্যে। মাঝে-মধ্যে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে অস্ট্রেলিয়ায় যান তিনি। হারিছ চৌধুরী দেশ ছাড়ার পর ছেলেমেয়েরাও দেশে আসেন না।