সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরে ভরা মৌসুেেনই ইলিশ ।বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন নদ নদীতে শতশত জেলে প্রতিদিনই রূপালি ইলিশের আশায় জালসহ নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে শূণ্য হাতে ফিরে আসছেন। হাসি নেই জেলেদের মুখে।ইলিশের মৌসুম থাকা সত্ত্বেও জালে ধরা দিচ্ছে না ইলিশ।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ মৌসুম শুরু হতেই জীবিকার সন্ধানে প্রতিদিন শত শত জেলে সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন নদ নদীতে নামছেন। তবে জালে তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই হতাশ সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার জেলেরা। শুধু তাই নয়, মহাজনের ঋণের দায়ে মরণফাঁদে আটকে গেছেন এসব ইলিশ শিকারীরা।
জেলেরা জানায়, সাগর মোহনার বাইরেও সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পশুর, শিবশা, কাজিবাছা, বলেশ্বর, ভোলা, বিষখালি, পারসিয়াসহ বিভিন্ন নদীতে ইলিশ ধরতে জাল ফেলছেন। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং বৈঠা চালিত জেলে নৌকায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে উপকূলীবর্তী এসব নদীতে নামছেন। তবে এরমধ্যে শুধুমাত্র পশুর নদীতে নামছেন ৫ হাজার বৈঠাচালিত নৌকায় ২০ হাজার জেলে। এসব জেলেরা সাধারণত কয়রা, পাইকাগাছা, দাকোপ, মংলা, শরণখোলা, পিরোজপুর, তালা, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জাকির হোসেন জানান, গত ৩০ বছর ধরে তিনি পশুর নদীতে ইলিশ ধরছেন। তবে আগে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন তেমন একটা পাওয়া যায় না। এমন একটা সময় ছিলো যখন প্রচুর ইলিশ পেতেন। এমনকি গতবছরও তিনি দিনে ৪/৫টি ইলিশ ধরেছেন। আর এবার গত ১৫ দিন একটিও ইলিশ পাননি তিনি।
সালাউদ্দিন জানান, ‘মহাজনের কাছ থেকে দাদন (ঋণ) নিয়ে ইলিশ ধরতে এসেছি। তাই ইলিশ পাই আর না পাই মহাজনের দেনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই।’
মংলার পশুর নদীতে সাতীরা থেকে মাছ ধরতে আসা ইব্রাহিম জানান, অনেক জেলের নিজের জাল ও নৌকা থাকার পরও মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়। এ মৌসুমে তিনি ৬০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছেন। ইলিশ থেকে যে আয় হবে তা’ থেকে মহাজনের টাকা পরিশোধ করার কথা। তবে এবার ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ি ইজারাদার ইনুছ জানান, ‘যারা পলিশ ধরতে যান লাভের বিনিময়ে তাদের পুঁজি দিয়ে সহযোগিতা করি। তবে এবার এই খাতে জেলেদের পেছনে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা’ আদায় করতে বেশ বেগ পেতে হবে। কারণ মৌসুম শুরু হলেও জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরাই হতাশ। বাজারের মৎস্য আড়ত সমিতি জানায়, গত বছর একই সময়ে এখানে প্রতিদিন ইলিশ আসতো প্রায় দুই হাজার মণ। যা এখন নেমে এসেছে মাত্র দুইশ মণে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সারা বিশ্বে বছরে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয় যার ৬০ ভাগই হয় বাংলাদেশে। আর দেশে মাছ উৎপাদনে এককভাবে শুধু ইলিশের অবদান ১১ ভাগ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানায়, পানি দূষণ, ইলিশের গতি পরিবর্তন ও আবহাওয়াজনিত কারণে এ বছর তুলনামূলকভাবে ইলিশ কম ধরা পড়ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সারা দেশে ৫ লাখ জেলেসহ মোট ২০ লাখ লোকের জীবন জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ। বাগেরহাট পাইকারী মাছ ব্যবসায়ি শেখ কামরুজ্জামান জানান, প্রতিবছর এ সময়ে মাছঘাটে (আড়ৎ) ক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম থাকলেও এ বছর তা নেই। আড়তে খালি বাক্স নিয়ে বসে থাকে কর্মচারীরা। আর বেতন গুনছেন আড়তদাররা।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও আদ্রতার কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশের ঝাঁক এখনও উপরে উঠে আসেনি। এছাড়া সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উজানে স্রোত কম। স্রোতে মাছের খাবার বয়ে আনে। ঝড়ো হাওয়া না থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসছে না। কারণ তার মতে ঝড়ো আবহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত বাড়লেই ইলিশ পাওয়া যাবে।
এদিকে দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতে ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ায় মংলাসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বাজারে ইলিশের দাম চড়া। বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকার অনুসারে ইলিশের মূল্য কেজি আটশ থেকে এক হাজার দুই শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বাজারে একটাও দেখা যায় না।