আকাঙ্ক্ষিত ছবি হিসেবে দেশের সব মাল্টিপ্লেক্সে জায়গা করে নিয়েছে ‘তুফান’। আর সেখানে বিস্ময়কর রেকর্ডও গড়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের বিভিন্ন শাখায় শুরুতে ছবিটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২২টি শো। কিন্তু দর্শকের আগ্রহে সেই শো সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ৫৬-তে, যা বাংলা ছবির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
দেশের সিনেমায় বক্স অফিস নেই। তাই আয়ের সঠিক অঙ্ক বরাবরই রহস্যের আড়ালে থেকে যায়। তবে ‘তুফান’-এর প্রযোজক ও নির্মাতার দাবি, তাঁদের ছবিটি রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে। প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেছেন, মুক্তির আড়াই দিনে শুধু স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘তুফান’-এর এক কোটি ২০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। সিঙ্গেল স্ক্রিনের হিসাব আসতে আরো সময় লাগবে বলে জানান তিনি। নির্মাতা রাফীও জানান, সিনেপ্লেক্স থেকে প্রথম সপ্তাহে ‘তুফান’ যে পরিমাণ আয় করেছে, তা অন্য কোনো ছবি (বাংলা কিংবা অন্য যেকোনো ভাষার) পারেনি। বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য শাকিল-রাফীকে ফোন করা হলে তাঁরা সাড়া দেননি। অগত্যা স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা শো সংক্রান্ত তথ্য দিতে পারি। আয়ের ব্যাপারে কিছু বলার সুযোগ নেই আমাদের। এটা প্রযোজক বলতে পারবেন।’
সিঙ্গেল স্ক্রিনে উল্লাস-ভাঙচুর
হলভর্তি দর্শক ছবি দেখছে। এর মধ্যে গান বেজে ওঠায় আসন থেকে উঠে নাচানাচি আর উল্লাসে মেতে উঠেছে দর্শক। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না ঢাকাই ছবির ক্ষেত্রে। ‘তুফান’ সেই জৌলুসময় অধ্যায় যেন ফিরিয়ে এনেছে। ছবিটির ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ গানের সময় বিভিন্ন সিঙ্গেল প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে দর্শকের উল্লাসের চিত্র দেখা গেছে। শুধু তা-ই নয়, টিকিট না পেয়ে প্রেক্ষাগৃহে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ১৮ জুন সন্ধ্যায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হল মধুমিতায় ভিড় করে দর্শক। কিন্তু নির্ধারিত দামে টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা হলের পোস্টার ডিসপ্লে, দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলে। দর্শকের অভিযোগ, কাউন্টার বন্ধ রেখে কালোবাজারিতে দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। এর পরও অনেকে চড়া দামে টিকিট সংগ্রহ করে ‘তুফান’-এর অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। মধ্যরাতেও ছবির প্রদর্শনীর ঘটনা ফিরিয়ে এনেছে এই ছবি। ময়মনসিংয়ের ছায়াবাণী, সিরাজগঞ্জের রুটস সিনে ক্লাব, সৈয়দপুরের তামান্না ডিজিটাল সিনেমা হল ও গ্র্যান্ড সিলেট সিনেপ্লেক্সে রাত ১১টা ও ১২টায় ‘তুফান’ প্রদর্শনী হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের বৃহত্তম প্রেক্ষাগৃহ যশোরের মণিহারের ব্যবস্থাপক আলী আকবর সোহাগ বলেন, ‘ঈদের ছবি হিসেবে ‘তুফান’ চালাচ্ছি। বেশ ভালো যাচ্ছে। ছুটির দিনে মোটামুটি হাউসফুল হয়। অন্যান্য দিনে দর্শক একটু কম। আমাদের এত বড় হল, সহজে তো হাউসফুল হয় না। তবে হ্যাঁ, ছবিটা ভালো যাচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট।’
অন্তর্জালে ঘূর্ণিঝড়
এক মাস ধরে অন্তর্জালে শোবিজের যেসব বিষয় নিয়ে চর্চা হয়েছে, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে শীর্ষে ‘তুফান’। এর শুরুটা হয় ছবির টিজারের মাধ্যমে। সেখানে শাকিবের বিধ্বংসী রূপ আর চঞ্চলের এক সংলাপ ভাইরাল হয়ে যায় নেটপাড়ায়। অতঃপর ২৮ মে প্রকাশ্যে আসে ছবিটির গান ‘লাগে উরাধুরা’। যা আলোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। উঠে আসে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে। এখানেই শেষ নয়, ছবির ট্রেলার প্রকাশের পর আরেকটি গানের মাত্র ১০ সেকেন্ড শুনেই মাতোয়ারা হয়ে যায় দর্শক। ‘দুষ্টু কোকিল’ শিরোনামের ওই গানও প্রকাশের পর উঠে এসেছে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে। এগুলো ছাড়াও ‘তুফান’ নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে অসংখ্য প্রতিক্রিয়া ভিডিও এসেছে।তুফানে লণ্ডভণ্ড সব হিসাব-নিকাশ
বিশেষ প্রদর্শনীতে তারার হাট
সোমবার স্টার সিনেপ্লেক্সের মিরপুর শাখায় অনুষ্ঠিত হয় ‘তুফান’-এর বিশেষ প্রদর্শনী। সেখানে উপস্থিত হন শোবিজের অনেক তারকা ও গণমাধ্যমকর্মী। ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াও তারকার মধ্যে ছিলেন আরিফিন শুভ, আজিজুল হাকিম, আফসানা আরা বিন্দু, প্রিন্স মাহমুদ, রুনা খান, জিয়াউল রোশান, বিজরী বরকতুল্লাহ, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, নির্মাতা আশফাক নিপুণ, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীনসহ অনেকে। প্রদর্শনীতে একটি ঘটনা আলাদা করে উঠে এসেছে আলোচনায়। শাকিবের পা ছুঁয়ে সালাম করেছেন শুভ। তাৎক্ষণিক তাঁকে বুকে জড়িয়ে নেন ঢালিউড নবাব। এ সময় শুভর পরনে ছিল তাঁরই অভিনীত ‘নূর’ ছবির নামসংবলিত টি-শার্ট। প্রদর্শনী শেষে ‘মুজিব’ অভিনেতা বলেন, ‘দেশের সুপারস্টারকে ঠিকঠাক ব্যবহার করছেন নির্মাতা রায়হান রাফী। এমন শাকিব ভাইকে আগে দেখা যায়নি। আমরা এমন শাকিব ভাইকেই নিয়মিত পর্দায় চেয়েছি, এবার সেটি রাফী করে দেখালেন।’
সীমানা ছাড়িয়ে তুফান
বিদেশেও ‘তুফান’ মুক্তি পাবে, এটা আগে থেকেই জানা কথা। তবে সোমবার বিশেষ প্রদর্শনীতে শাকিব জানান, ভারতে হিন্দি ভাষায়ও মুক্তি পাবে ছবিটি। ডাবিং শেষে শিগগিরই এসংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। এ ছাড়া ২৮ জুন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাচ্ছে ‘তুফান’। এর জন্য দুই দেশে প্রচারণা এবং অগ্রিম টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। আমেরিকায় ছবিটি পরিবেশনা করছে বায়স্কোপ ফিল্মস এবং অস্ট্রেলিয়ায় এটি দেখাবে বঙ্গজ ফিল্মস।