লেবাননের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণ ইসরাইলের জন্য আত্মহত্যার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির মেজর জেনারেল অব. আইজ্যাক ব্রিক।
ইসরাইলি ‘মারিভ’ পত্রিকায় লেখা তার সর্বশেষ কলামে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আইজ্যাক ব্রিক বলেছেন, হিজবুল্লাহর ওপর হামলার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে সম্মিলিত আত্মহত্যার শামিল।
ব্রিক হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘আত্মঘাতী’ মিশন সম্পর্কে লিখেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গ্যালিলিতে হিজবুল্লাহ কী করেছে, সেদিকে তাকালে আমরা মনোযোগ দিলে দেখতে পাব যে, বসতিগুলো গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, লোকজন সরে যাচ্ছে, হাজার হাজার একর জমি পুড়ে যাচ্ছে।
গাজায় যে চিত্র দেখা গেছে, সেটা আজ ইসরাইলের উত্তরে দেখা যাচ্ছে। আয়রন ডোম মাসের পর মাস ধরে ড্রোন, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হজম করার জন্য প্রস্তুত হতে পারি না, যা পরবর্তী যুদ্ধে আমাদের করতে হবে।
ব্রিক ড্রোন মোকাবেলায় ইউক্রেনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কিয়েভ ইসরাইলের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছে, সেটাও তুলে ধরেন। তবে ব্রিক বলেন, এতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ব্রিক বলেন, আমরা যখন একটি স্থানে সেনাবাহিনী রাখতে পারছি না, সেখানে এরপর ছয়টি স্থানে কীভাবে রাখব? আমরা কীভাবে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র সামাল দিব? নিজেদের সুসংগঠিত হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে অবশ্যই যুদ্ধ থেকে বিরতি নিতে হবে। আমরা ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করে যেতে পারি না। এই যুদ্ধের জন্য আমাদের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এখন আমাদের প্রয়োজন গাজার যুদ্ধ থেকে বিরতি নেওয়া। এই যুদ্ধ তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে। আমরা যখন অত্যধিক সংখ্যক লোককে বলি দিয়েছি, তখন তারা গোপনে শক্তি বাড়িয়েছে, নিজেদের আবার গড়ে তুলছে। তারা সব যোদ্ধাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমরা নগরীগুলো ধ্বংস করছি, আর দুনিয়া এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখছে। এটা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
ইসরাইলি জেনারেল বলেন, সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে তারা পুরো পরিস্থিতি তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পণবন্দিদের জন্য আমাদের সেখানে এক বা দুই বছরের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি থামি, তবে হিজবুল্লাহও থামবে। আর তখন আমরা আরও চার ডিভিশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারব।
তিনি বলেন, তারা খুবই সঠিক জায়গায় আছে… আমি বলতে পারি, ইসরাইলি বাহিনী পর্যাপ্ত শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করা উচিত, যাতে আমরা তাদের ওপর প্রয়োজনীয় আঘাত হানতে পারি। আজ ইসরাইলি বাহিনী তো প্রয়োজনীয় আঘাত হানতে পারছে না, অন্যদিকে বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না যে আমরা এখন যদি লেবাননে যুদ্ধ শুরু করি, তবে তা আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেবে। এর মানে হবে এই যে উত্তরের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারবে না।
তিনি উপসংহারে বলেন, যারা আজ যুদ্ধ চালাচ্ছে, তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। তারা লাল বাতির মধ্যেও দৌড়াচ্ছে এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অথচ তারা সেনবাহিনীকে গড়তে পারছে না। তারা এখন বিমানের পেছনে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, অথচ সেগুলো আসবে পাঁচ বছর পর, যেগুলো কোনও প্রাসঙ্গিক হবে না।