শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের ছিডুর টেক এলাকার নদীটি পাড় হয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে অন্তত ১০ হাজার লোকজন। তাদের পারাপার করছে একটি মাত্র ডিঙি নৌকা। বৈরী আবহাওয়া কিংবা মাঝির অসুস্থতা থাকলে বিপাকে পড়েন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মানুষগুলোর দুর্ভোগে পাশে দাঁড়াননি কেউ। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে সেতু নির্মাণের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
উপজেলার চর কুমারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চর ফেলিজ (ছিডুর টেক) এলাকা দিয়ে বয়ে চলেছে মেঘনা নদীর একটি শাখা নদী। এর একটি অংশ ভেদরগঞ্জ থেকে এসে চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীর হাইমচর অংশ থেকে মিলিত হয়েছে। গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত পুরো ১২ মাস এই নদীতে পানি থাকে। এই নদীটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে ঈশানবালা, চর কুমারিয়া, আরশিনগর, চর জালালপুর, আলাউলপুর ইউনিয়নসহ মোট ৫টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার লোকজন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এই নদীটি পাড় হয়ে থাকেন। পূর্ব পাড়ে কাছাকাছি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় নদীটির পশ্চিম পাড়ে নদী পাড় হয়ে নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাহেরচর মাদ্রাসা, এম.এ রেজা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পূর্ব পাড়ের কৃষকরা কৃষি পণ্য পরিবহন করেন অন্তত ৫ কিলোমিটার ঘুরে। এ অঞ্চলের মানুষের নদীটি পাড় হওয়ার জন্য রয়েছে একটি মাত্র খেয়া নৌকা। যা সকাল ৮টা থেকে চলাচল শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে যায় রাত ৯টার মধ্যে। অনেক সময় পারাপারের এই ছোট ডিঙি নৌকাটি ডুবে গিয়ে ভোগান্তির কারণ হচ্ছে মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের নদীটি দিয়ে লোকজন পারাপার করছে একটি ডিঙি নৌকা। নৌকাটিতে ১০ জনের বেশি মানুষ উঠামাত্রই ডুবুডুবু অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ব্যক্তিদের নৌকা থেকে নামিয়ে দিয়ে অপর পাড়ের উদ্দেশ্যে ছুটছেন মাঝি। বাকিরা পারাপার হতে ওপার থেকে নৌকা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
দক্ষিণ চর ফেলিজ এলাকার রাকিবুল ইসলাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি এখন কলেজে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার জন্য নদীটি পাড় হতে যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাকে, সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাগুলো বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি। রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের পূর্ব পাড়ের যে শিক্ষার্থীরা আছেন তারা সবাই পড়াশোনার তাগিদে নদীর ওই পাড়ে যায়। মাঝেমধ্যে নদীতে যখন বেশি পানি থাকে তখন ঢেউয়ের কারণে ছোট নৌকা ডুবে অনেকের বই খাতা ভিজে যায়। এমনকি আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেই তখন আমি নদীতে পড়ে গিয়েছিলাম। পড়ে বাড়ি গিয়ে নতুন পোশাক পড়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম।
বাদশা হাওলাদার নামের এক ষাটোর্ধ ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, যখন ভোট আসে চেয়ারম্যান মেম্বাররা ব্রিজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু আমাদের কথা কেউ রাখেনি। আমরা খুব সমস্যায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি, আমাদের এখানে দ্রুত একটা ব্রিজ করা হোক।
কাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের পারাপারের জন্য ছোট একটা নৌকা আছে। যখন নৌকার মাঝি অসুস্থ থাকে কিংবা বাড়িতে চলে যায়, আমরা দীর্ঘ সময় তার জন্য অপেক্ষা করি। তাছাড়া নৌকা যদি ওপারে থাকেন এপারের মানুষজন ওপারে যেতে পারে না। কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখনো আমাদের ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। একটা ব্রিজ হলে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সকলের সুবিধার জন্য একটি সেতুর দাবি জানিয়েছেন খোদ খেয়া ঘাটের মাঝি হোসেন মিজিও। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমি এই ঘাটে লোকজন পারাপার করি। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে নৌকা বাইতে পারি না। তখন এই এলাকার লোকজনের ভীষণ কষ্ট হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা ঠিকমতো স্কুলে-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। যদি ব্রিজটি হয়ে যায় সকলের জন্য অনেক ভালো হয়, আমার জন্যও ভালো হয়। প্রয়োজনে আমি তখন অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিবো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল হক বকাউল বলেন, ছিডুর টেকের নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য অনেকবার আবেদন জানিয়েছি। বেশ কয়েকবার এই জায়গায় সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে এই ব্রিজটি হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। এলাকাবাসীর স্বার্থে এখানে একটি ব্রিজের খুবই প্রয়োজন।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি খোঁজ খবর নিতে বলেছি। ওই স্থানে ব্রিজের জন্য প্রস্তাব দেওয়া থাকলে সেটির অগ্রগতির বিষয়ে কাজ করা হবে। যদি প্রস্তাব না দেওয়া থাকে, তাহলে নতুন প্রকল্পে ব্রিজটি অন্তর্ভুক্ত করে অতিদ্রুত কাজ শুরু করবো।