আজ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে। যদিও এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল ইসরায়েল।
এর আগে, ২২ মে দেশ তিনটি ঘোষণা দেয়, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে তারা। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানই সবচেয়ে সেরা উপায় উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান দেশ তিনটির প্রধানমন্ত্রী। সেদিনই বলা হয়েছিল, ২৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা।
সেই মোতাবেক আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হলো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র পথ। নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি স্পেনও আজ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করছে।’
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০টির বেশি দেশ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত যার একটি একক উদ্দেশ্য রয়েছে: ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিরা শান্তি অর্জন করবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশাপাশি বসবাস করা।’
তিনি বলেন, ‘স্পেন ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরসহ একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।’
এদিকে আয়ারল্যান্ড সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, আইরিশ সরকার ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। পাশাপাশি ডাবলিন ও রামাল্লার মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হচ্ছে। রামাল্লায় আয়ারল্যান্ডের একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপন করা হবে।
অন্যদিকে নরওয়ের সরকারও এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আজ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইডে বলেছেন, নরওয়ে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে সমর্থকদের মধ্যে একটি।
এর আগে গতকাল সোমবার (২৭ মে) বেলজিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইদে এবং আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন যৌথ বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার তাদের এই পদক্ষেপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোকেও অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে বলে তারা আশাবাদী।’
এদিকে দেশ তিনটির এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েল। এ সিদ্ধান্তকে ভুল পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে তেল আবিব বলেছে, এই পদক্ষেপ হামাসকে আরও শক্তিশালী করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্যের মধ্যে সুইডেন, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাল্টা এবং স্লোভেনিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারাও এ পদক্ষেপ নিতে পারে।
ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা স্বীকৃতির বিষয়টি বিবেচনা করছে। অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ফ্রান্স বলেছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন নয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলকে বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এছাড়া ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।