নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার মদনে প্রবাসী ও তার স্ত্রীর ফাঁদে পড়ে একটি কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানায় অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। এখন বিচারের আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারটি উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত প্রবাসী আল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম একই গ্রামের বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে আছেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী নাজমা বেগম গোবিন্দশ্রী গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন। আল আমিন ও স্ত্রী নাজমা বেগম একই গ্রামের কৃষক আবুল কালামের ছেলে অলি আহম্মদকে সৌদি আরব নিয়ে কাজ দিবে বলে ফাঁদ তৈরী করে। সৌদি আরব নেয়ার কথা বলে প্রথম ওই পরিবার থেকে ৩ লাখ ৫০হাজার টাকা নেয়। পরে অলিকে ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে ভূয়া কাগজপত্র দেয়ায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। এ নিয়ে আল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তারের সাথে অলির পরিবার কথা বললে ভুল হয়েছে বলে তারা জানান।
পরে আবার সৌদি আরব নিবে বলে দ্বিতীয় দপায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়। ভূয়া কাগজপত্র দিলে দ্বিতীয় বারের মতো ঢাকার বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসে অলি আহম্মেদ। আল আমিন ও তার স্ত্রীর এমন প্রতারনার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার লোকজন নিয়ে তাদের নিকট টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ভুক্তভোগীর পরিবার মদন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু মদন থানায় অভিযুক্ত নাজমা বেগমের এক আত্মীয় পুলিশ সদস্য কর্মরত থাকায় কোন সুরাহা পায়নি। এ নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উল্টো প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। বিচারের আশায় রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অলি আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী অলি আহম্মেদ বলেন, আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক। আল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম আমাকে সৌদি নিবে বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু থানায় এক পুলিশ নাজমা বেগমের আত্মীয় থাকায় কোন বিচার পাইনি। এখন ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
অলি আহম্মেদ আরো বলেন, আমাদের ফসলি জমি বিক্রি করে তাদেরকে টাকা দিয়েছি। তারা আমার অনেক ক্ষতি করেছে। এখন টাকা চাইলে মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর এমন প্রতারনার ফাঁদে এখন আমার পরিবার নিঃস্ব। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
প্রতিবেশী আবুল হাসেম মিয়া জানান, আমরা জানি আল আমিন ও তার স্ত্রী অলিকে সৌদি আরব নিয়ে যাবে বলে টাকা নিয়েছে। ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে এটা আমিসহ এলাকার অনেক লোকজন জানেন। এখন শুনি বিদেশ নেওয়ার কাগজপত্র সব ভূয়া।
প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, অলি সৌদি আরব যাবে বলে কথা বার্তা হয়েছে। আমি কোন টাকা পয়সা অলির কাছ থেকে নেয়নি। বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা আমি ফেরত নিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ বিশাল আহম্মেদ মাসুম জানান, অলিকে বিদেশ নিবে বলে আল আমিন টাকা নিয়েছে বিষয়টি শুনেছি।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্দ) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, থানায় যে অভিযোগ দিয়েছিল সেই বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি। মদন থানায় কর্মরত কোন পুলিশ সদস্য এর সাথে জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।