সিরিয়ায় কন্স্যুলেট অফিসে হামলার জবাবে ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে ৭২ ঘণ্টা আগেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়ে দেয় ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিবিসির এক রিপোর্ট বলা হয়েছে, ইরানের মন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিযানের ৭২ ঘণ্টা আগে আমাদের বন্ধু এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়েছি যে, ইসরাইলের ওপর ইরান অবশ্যই জবাব দেবে, যা বৈধ এবং এড়ানোর উপায় নেই।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে একটি বৈঠকে ইরানি শীর্ষ কূটনীতিক আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রকেও জানানো হয় যে, ইসরাইলে ইরানের হামলা হবে সীমিত এবং আত্মরক্ষামূলক।
অর্থাৎ গত অর্ধশতকের মধ্যে চিরশত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রথম নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান; সেটাও আবার ঘোষণা দিয়ে, প্রকাশ্যে মহড়া চালিয়ে! ইরানের এই হামলার সঙ্গে যোগ দিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথিরাও। ত্রিমুখী হামলা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে মার্কিন আশীর্বাদপুষ্ট সামরিক শক্তিতে বলীয়ান ইসরাইল।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর পাশাপাশি পরাশক্তির ‘সম্মতি’ নিয়েই ইসরাইলে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার বিষয়ে তুরস্ককে জানানো হয়েছিল আগেভাগেই। যুক্তরাষ্ট্রও তুরস্কের মাধ্যমে ইরানের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল, যেন কোনোভাবেই বাড়াবাড়ি করা না হয়।
অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হামলায় নিজেদের ‘লক্ষ্য অর্জিত’ হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। ইরানের প্রাপ্তি হিসেবে যোগ হয়েছে, আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার লক্ষ্যে শক্তি প্রদর্শন। বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র শাণিয়ে নেওয়ারও সুযোগ পেয়েছে তেহরান।
ইরান বলছে, ইসরাইলে হামলার আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ আশপাশের দেশগুলোকে সতর্ক করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরানের এই দাবি সত্য নয়। তারা ইসরাইলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতিই করতে চেয়েছিল।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্ক, জর্ডান এবং ইরাকের কর্মকর্তারা রোববার বলেছেন, ইসরাইলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক দিন আগে তাদেরকে বিস্তৃত নোটিশ দিয়েছে ইরান। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তেহরান ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেনি এবং হামলায় ইসরাইলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করার লক্ষ্যেই এটি করেনি ইরান।
সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কন্স্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব। তবে ইরান বলছে, তাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং তারা এটাকে আর বাড়াতে চায় না। কিন্তু তারপরও ইসরাইলের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।