ঢাকা ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলের হামলার জবাব কীভাবে দেবে ইরান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪
  • ৫৮ বার

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ১ এপ্রিল হামলা চালিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে এরই মধ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। একই সময়ে সিরিয়ায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতেও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে তারা।

ইসরাইলের ভাষ্যমতে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সহায়তার জন্য ইরান যে আন্তর্জাতিক সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তাতে লাগাম টানাই এসব হামলার লক্ষ্য।

তবে ১ এপ্রিলের হামলাটা ছিল ভিন্ন। কারণ, এই হামলায় কূটনৈতিক কোনো স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। এতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরসিজি) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ রেজা জাহেদি সিরিয়া ও লেবাননে আইআরসিজির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনার শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইরানের সার্বভৌমত্ব।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কনস্যুলেটে হামলা ও আইআরসিজি নেতাদের হত্যার জবাব কীভাবে দেবে ইরান। তেহরানের সামনে অনেকগুলো পথ খোলা আছে। তবে বাস্তব অর্থে কোনোটিই বর্তমানে তেমন জুতসই বলে মনে হয় না।

মিত্রপক্ষ ও ক্ষমতার রাজনীতি
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ভূমিকায় রয়েছে ইরান। দেশটি সাধারণত শক্তি প্রদর্শন করে তাদের সঙ্গে আদর্শগতভাবে মিলে যায় এমন মিত্র ও অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই নেটওয়ার্কটি ‘এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ নামে পরিচিত।

এই নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ইয়েমেনের হুতি, ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া কাতাইব হিজবুল্লাহ নামে ইরাকের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীটিও ইরানের মিত্র হিসেবে পরিচিত। আর রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিরোধের অক্ষে রয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শুধু ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার প্রতিশোধই নিতে চান না, এটাও মনে করেন যে পাল্টা জবাব না দিলে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হতে পারে।

প্রতিরোধের অক্ষের সব পক্ষগুলো তেহরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। তাদের ব্যবহার করে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আড়াল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। পক্ষগুলোর সঙ্গে তেহরানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটিকে কোনো দায়ও নিতে হচ্ছে না।

যদিও ২০২০ সালে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছিল ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ইরাকের আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালিয়েছিল দেশটি। এতে ওই ঘাঁটিতে থাকা কয়েকজন মার্কিন সেনা আহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ওপর ইরানের সরাসরি ওই হামলা ছিল নজিরবিহীন এক ঘটনা।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরাইলের হামলার দৃশ্যমান জবাব দিতে চান বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি শুধু ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধই নিতে চান না, এটাও মনে করেন যে পাল্টা জবাব না দিলে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।

তবে সময়টা এখন উপযুক্ত নয়। গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই সময়ে ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত ঘিরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা হচ্ছে। আর হুতিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাধার মুখে পড়েছে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইল ও মার্কিন নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। এই হামলার প্রতি সমর্থন রয়েছে ইরানের।

নিজেদের কনস্যুলেটে হামলার পর ইরান হুমকি দিয়ে বলেছে, এখন ইসরাইলের কোনো দূতাবাসই নিরাপদ নয়। এই হুমকি অনুযায়ী ইসরাইলের কোনো দূতাবাসেও হামলা চালাতে পারে তারা। সতর্কতা হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে ২৮টি দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল সরকার। তবে এমন কোনো হামলা চালানো হলে যে দেশে ওই দূতাবাস অবস্থিত, সে দেশের সরকারের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরাইলের হামলার জবাব কীভাবে দেবে ইরান

আপডেট টাইম : ১০:৩১:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ১ এপ্রিল হামলা চালিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে এরই মধ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। একই সময়ে সিরিয়ায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতেও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে তারা।

ইসরাইলের ভাষ্যমতে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সহায়তার জন্য ইরান যে আন্তর্জাতিক সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তাতে লাগাম টানাই এসব হামলার লক্ষ্য।

তবে ১ এপ্রিলের হামলাটা ছিল ভিন্ন। কারণ, এই হামলায় কূটনৈতিক কোনো স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। এতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরসিজি) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ রেজা জাহেদি সিরিয়া ও লেবাননে আইআরসিজির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনার শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইরানের সার্বভৌমত্ব।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কনস্যুলেটে হামলা ও আইআরসিজি নেতাদের হত্যার জবাব কীভাবে দেবে ইরান। তেহরানের সামনে অনেকগুলো পথ খোলা আছে। তবে বাস্তব অর্থে কোনোটিই বর্তমানে তেমন জুতসই বলে মনে হয় না।

মিত্রপক্ষ ও ক্ষমতার রাজনীতি
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ভূমিকায় রয়েছে ইরান। দেশটি সাধারণত শক্তি প্রদর্শন করে তাদের সঙ্গে আদর্শগতভাবে মিলে যায় এমন মিত্র ও অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই নেটওয়ার্কটি ‘এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ নামে পরিচিত।

এই নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ইয়েমেনের হুতি, ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এ ছাড়া কাতাইব হিজবুল্লাহ নামে ইরাকের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীটিও ইরানের মিত্র হিসেবে পরিচিত। আর রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিরোধের অক্ষে রয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শুধু ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার প্রতিশোধই নিতে চান না, এটাও মনে করেন যে পাল্টা জবাব না দিলে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হতে পারে।

প্রতিরোধের অক্ষের সব পক্ষগুলো তেহরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। তাদের ব্যবহার করে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আড়াল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। পক্ষগুলোর সঙ্গে তেহরানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটিকে কোনো দায়ও নিতে হচ্ছে না।

যদিও ২০২০ সালে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছিল ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ইরাকের আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালিয়েছিল দেশটি। এতে ওই ঘাঁটিতে থাকা কয়েকজন মার্কিন সেনা আহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ওপর ইরানের সরাসরি ওই হামলা ছিল নজিরবিহীন এক ঘটনা।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরাইলের হামলার দৃশ্যমান জবাব দিতে চান বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি শুধু ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধই নিতে চান না, এটাও মনে করেন যে পাল্টা জবাব না দিলে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।

তবে সময়টা এখন উপযুক্ত নয়। গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই সময়ে ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত ঘিরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা হচ্ছে। আর হুতিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাধার মুখে পড়েছে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইল ও মার্কিন নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। এই হামলার প্রতি সমর্থন রয়েছে ইরানের।

নিজেদের কনস্যুলেটে হামলার পর ইরান হুমকি দিয়ে বলেছে, এখন ইসরাইলের কোনো দূতাবাসই নিরাপদ নয়। এই হুমকি অনুযায়ী ইসরাইলের কোনো দূতাবাসেও হামলা চালাতে পারে তারা। সতর্কতা হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে ২৮টি দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল সরকার। তবে এমন কোনো হামলা চালানো হলে যে দেশে ওই দূতাবাস অবস্থিত, সে দেশের সরকারের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।