বাংলা নববর্ষ তার আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বরণ করা হবে নতুন বাংলা বছর ১৪৩১। এবারের পহেলা বৈশাখের অন্যরকম আবহ। ঈদের ছুটির পরপরই পহেলা বৈশাখ। আর তাই সরকারি বেসকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবীরা ৬-৭ দিনের ছুটি পেয়েছেন। ঈদের আনন্দের পরপরই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আনন্দে মেতে উঠবে দেশবাসী। এমনটা এর আগে দেখা যায়নি খুব একটা।
প্রায় ১ সপ্তাহের টানা ছুটির কারণে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ এবার নিজের জন্মস্থান বা গ্রামের বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারবেন। তাই বলা হচ্ছে, এবারের পহেলা বৈশাখে দেশের গ্রামগুলো হয়ে উঠবে এক একটি উৎসবকেন্দ্র। ছুটির পুরো সময়টাই হবে জমজমাট এবং প্রাণবন্ত।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ যুগান্তরকে বলেন, ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের উৎসবে আনন্দে এবার একাকার হয়ে যাবে বাংলার মানুষ। ঈদের আনন্দ ধর্মীয় উৎসব হলেও এর একটি সর্বজনীনতাও আছে। অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রাদিক এবং প্রাণের উৎসব। দুটো একসঙ্গে মিলে ধনী, গরিব, নারী-পুরুষ সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় হবে। বাঙালির সম্প্রীতি ফুটে উঠবে সারা দেশে। গ্রামে অনেক মানুষ যাবেন। সেখানে অনেকেই অর্থকষ্টে আছেন, সচ্ছলদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে গ্রামে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলাসহ নানা আয়োজন থাকবে। হালখাতা আর মিষ্টিমুখ চলবে বাজারে বাজারে। তবে রাজধানী ঢাকার আয়োজনগুলোও থাকছে।
রাজধানীতে বাংলা নববর্ষ বরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী সংগীতায়োজন এবারও থাকছে। রমনা বটমূলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে এ আয়োজন। সকাল সোয়া ৬টায় যন্ত্রসংগীতের সুরে শুরু হবে বর্ষবরণ । থাকবে বাঁশির রাগালাপ। থাকবে দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির পরিবেশনা। এতে অংশ নেবেন ছায়ানটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিতসহ প্রায় দেড়শ শিল্পী। থাকবে গান, কবিতা পাঠ। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হবে কাজী নজরুল ইসলামের কারার ওই লৌহ কপাট এবং আঁধার কেটে রাত পোহালে উঁকি দেয় যে ভোর শেষসহ আরও অনেক গান।
পয়লা বৈশাখে এবারও থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ। এর জোর প্রস্তুতি চলছে চারুকলায়। শোভাযাত্রার চারটি শিল্প-কাঠামোর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান ‘আমরা তিমির বিনাশী’। থাকবে হাতি, শিশু ও গন্ধগোকুলের অবয়ব। শিল্প-কাঠামোর মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় হবে ২৩ ফুট দৈর্ঘ্যরে গন্ধগোকুল। বৈশাখী সকালে সড়কে বেরুনো হাতিটির উচ্চতা হবে ১২ ফুট। শিশু পুতুলের এবং চাকার উচ্চতা হবে যথাক্রমে ১৬ ফুট ও ১২ ফুট। এই চার শিল্প-কাঠামোর সঙ্গে শোভাযাত্রায় আরও থাকবে রাজা-রানির মুখোশ, পাখির মুখোশ, লক্ষ্মীপেঁচা ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিচ্ছবিময় প্রতিকৃতি। আসছে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হবে এই শোভাযাত্রা। এরপর শিশু পার্কের সামনে থাকে বাঁক নিয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে ফিরে আসবে চারুকলায়।
এর বাইরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে শিল্পকলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ শীর্ষক সংগীতাসরের আয়োজন করবে সুরের ধারা। এছাড়া বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঋষিজ শিল্পগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পহেলা বৈশাখের আয়োজন থাকছে।
এবারের পহেলা বৈশাখে সরকারিভাবে এক আদেশে উন্মুক্ত স্থানে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আয়োজন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রাত ৯টা পর্যন্ত পহেলা বৈশাখে তাদের আয়োজন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। গোলাম কুদ্দুছ যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে একটি মহল বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পহেলা বৈশাখের মতো আয়োজনের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করছে। আমরা মনে করি এই ধরনের সিদ্ধান্তে এ মহলকে উৎসাহিত করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, বিজয় দিবসের আয়োজনে তো এ ধরনের নির্দেশনা থাকে না। তাহলে পহেলা বৈশাখে কেন? আমরা মনে করি সময় বেঁধে দেওয়ার এই বিধিনিষেধ অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক। বরং যত বেশি এবং বেশি সময় নিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা যাবে পহেলা বৈশাখে তত বেশি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে।