এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙক্তি এটি। এবারই প্রথম প্রতিপাদ্য হিসেবে রূপসী বাংলার কবির শরণ নিয়েছেন আয়োজকরা। বাংলা ১৪৩১ সালকে ঘটা করে বরণ করে নিতে এরই মধ্যে পোস্টারও বেরিয়ে গেছে। এবারের শোভাযাত্রার পোস্টারের নকশা করেছেন শিল্পী এ বি এম শাফিউল আলম। উন্মুক্ত আহ্বানে পাওয়া ৩৬টি পোস্টার থেকে তাঁর নকশাটি বেছে নেওয়া হয়। পোস্টারটিতে রয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশা আর্টের বৈশিষ্ট্য।চারুকলা অনুষদ সূত্রে জানা গেছে, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ভেসে উঠবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। শোভাযাত্রার চারটি শিল্প-কাঠামোর মধ্যে বহু বর্ণে সজ্জিত বিশাল আকৃতির চাকার মাধ্যমে মেলে ধরা হবে দেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি। এর সঙ্গে থাকবে হাতি, শিশু ও গন্ধগোকুলের অবয়ব। গাছবিহারী গন্ধগোকুল ইঁদুরসহ পোকামাকড় খেয়ে ফল-ফসলের উপকার করে। সে বিবেচনায় বিপন্ন এই প্রাণীর কাঠামো ঠাঁই পেতে যাচ্ছে এবারের শোভাযাত্রায়। শিল্প-কাঠামোগুলোর মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় হবে ২৩ ফুট দৈর্ঘ্যের গন্ধগোকুলই। পহেলা বৈশাখের সকালে সড়কে বের হওয়া হাতিটির উচ্চতা হবে ১২ ফুট। শিশু পুতুলের এবং চাকার উচ্চতা হবে যথাক্রমে ১৬ ফুট ও ১২ ফুট। এই চার শিল্প-কাঠামোর সঙ্গে শোভাযাত্রার সঙ্গী হবে রাজা-রানি ও পশুপাখির মুখোশ। আগামী ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হবে এই শোভাযাত্রা।
প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সাদিত সাদমান রাহাত জানান, শোভাযাত্রার কাঠামো নির্মাণসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য।
গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এই কর্মসূচি।
গত ২১ মার্চ চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সেদিন তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্যই এ ধরনের আয়োজন। তরুণ বয়সে আমরা রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা করিনি। নিষেধ সত্ত্বেও আমরা বন্দুকে আলপনা এঁকেছি, শহীদ মিনারে আলপনা এঁকেছি, চারুকলা ভবনের সামনে আলপনা এঁকেছি। চারুকলার তৎকালীন ছাত্র-শিক্ষকরা এই বাংলাকে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা করার দরকার তা সব করেছিলেন। আমরা চাই জনসাধারণ আমাদের সঙ্গে একাত্ম হোক। কারণ এই আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।’