হতাশা থেকে তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে: জিএম কাদের

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, তরুণ সমাজের জন্য মানসম্মত ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নেই। তাই তরুণ সমাজ বিদেশমুখী হচ্ছে। যে কোনোভাবে তারা বিদেশে যেতে চাচ্ছে। দেশের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে তরুণ সমাজের মেধা ও কর্মশক্তি বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। যারা দেশে থাকছে, তারা কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশ হয়ে পড়ছে। হতাশা থেকে তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের দুই ভাগই তরুণ। এই তরুণদের ৪০ শতাংশ অলস জীবনযাপন করছে। তাদের শিক্ষা নেই, প্রশিক্ষণ নেই। বেকার এই তরুণরা সমাজের কোনো কাজেই আসছে না। বিশাল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে কর্মক্ষম করে দেশের স্বার্থে কাজে লাগানো যায়, এটিই বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণরা সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে মাদকাসক্ত তরুণ সমাজ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়ক না হয়ে তরুণরা অনেক ক্ষেত্রেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিম্নমানের শিক্ষা, শিক্ষা শেষে কাজের অভাব আর চরম অনিশ্চয়তার কারণে প্রতি বছর দেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যাচ্ছে। তারা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়লেও শিক্ষাজীবন শেষ করে আর দেশে ফিরছে না। এতে মেধাবী সন্তানদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। এর বিরূপ প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন ৮ হাজার ৫২৪ জন, যুক্তরাজ্য গেছেন ৬ হাজার ৫৮৬ জন, কানাডায় গেছেন ৫ হাজার ৮৩৫ জন, মালয়েশিয়ায় গেছেন ৫ হাজার ৭১৪ জন, জার্মানিতে ৫ হাজার ৪৬ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪ হাজার ৯৮৭ জন, জাপানে ২ হাজার ৮০২ জন এবং ভারতে ২ হাজার ৬০৬ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। যাদের টাকা আছে, তাদের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কিছুটা চিকিৎসা আছে। আর যাদের টাকা নেই, তাদের জন্য চিকিৎসার নামে কিছুই নেই। অথচ চিকিৎসা সেবা আধুনিকায়নে বছরে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ চিকিৎসাব্যবস্থা ও সেবার মান কিছুটা উন্নত করা গেলে দেশের কয়েকশ কোটি টাকা দেশে রাখা সম্ভব হবে। সরকার কেন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না আমরা বুঝতে পারি না।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত পিএইচএ গ্লোবাল সামিট ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য দেশ থেকে ৫শ কোটি ডলার (৫ বিলিয়ন) বিদেশে চলে যাচ্ছে, যা প্রতি বছর বেড়েই চলছে। প্রতি বছর প্রবাসী রেমিটেন্স আয় ২৩ বিলিয়ন। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হারে বিদেশে চলে যাচ্ছে প্রতি বছর ৫৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যে প্রকাশ, প্রতি বছর ৭ লাথের বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, বিদেশে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাওয়া ডলারের হিসাব আরও বেশি। কারণ অনেকেই বেড়াতে গিয়ে, ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজে বিদেশে গিয়েও চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা খাতে সরকারের ব্যয়ের একটি বড় অংশই খরচ হচ্ছে, অবকাঠামো তৈরিতে। এতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায় তেমন কোনো লাভ হয় না। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালগুলোতে অনিয়ম,  অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।

জিএম কাদের বলেন, গণমানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিটি উপজেলায় হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি দিয়েছিলেন প্রতিটি হাসপাতালে। ওষুধ তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে ওষুধনীতি করেছেন। তিনি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন চিকিৎসা পেশায় জড়িত কিছু কায়েমী স্বার্থবাদী মানুষের জন্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আমরা চাই, প্রতিটি জেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। প্রতিটি হাসপাতালে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি দেওয়া হোক। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি। তবেই দেশের মানুষের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত হবে। এতে অন্তত  ৫শ কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি বিদেশি অর্থ খরচ থেকে দেশ রক্ষা পাবে।

জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আল মামুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (অব), রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া,  জহিরুল ইসলাম জহির,  জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, শফিউল্লাহ শফি, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া,  যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আবদুল হামিদ ভাসানী, বেলাল হোসেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল দাস, কাজী আবুল খায়ের,  সুলতান মাহমুদ, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, এলাহান উদ্দিন,  এমএ সোবহান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, মীর শামসুল আলম লিপটন।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর