ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবণতা বেড়েছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
  • ৬৮ বার

সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে অনেকে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখছেন। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রয়োজন বেড়ে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয়সহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংক এ ধারের টাকায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ করছে।

সূত্র জানায়, রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার করেছে ৩৮০০ কোটি টাকা। এতে সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ছিল ৮ শতাংশ। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এগুলোর সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহতায়তার আওতায় ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। একই দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি ও স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি ধার করেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে একদিনে ধার করেছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা।

বুধবার ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একদিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এবং কলমানি মিলে ধারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিন ১৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা ধার করেছে।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিনে ধারের পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে ওই ৩ দিনে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্যের চাপ বেশি। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছে। এই টাকার জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আমানতকারী যেন ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত না যান। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকার জোগান দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোকে যে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো তাদেরই টাকা। ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ বাবদ যেসব টাকা রয়েছে সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে এর বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব টাকার উৎস থেকে কোনো ব্যাংককে টাকা দেওয়া হয়নি। আর এটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়া হিসাবেই মনে করে।

ব্যাংকগুলো যে ধার করছে তার বড় একটি অংশই একদিনের জন্য। ফলে একদিন পর ওই ধারের অর্থ আবার ফেরত দিতে হচ্ছে। যে কারণে পরের দিন আবার ধার করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন ধারের অঙ্ক বেশি হচ্ছে।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে নিজস্ব তহবিলের একটি অংশ নগদ আকারে নিজেদের কাছে জমা রাখার কথা। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে তারা সেটি পারছে না। এছাড়া আস্থাহীনতার কারণে কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছে। এ কারণে সংকট বাড়ছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবণতা বেড়েছে

আপডেট টাইম : ১০:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে অনেকে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সবল ব্যাংকে রাখছেন। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রয়োজন বেড়ে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয়সহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ধারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংক এ ধারের টাকায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ করছে।

সূত্র জানায়, রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার করেছে ৩৮০০ কোটি টাকা। এতে সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ছিল ৮ শতাংশ। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এগুলোর সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহতায়তার আওতায় ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। একই দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি ও স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি ধার করেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে একদিনে ধার করেছে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা।

বুধবার ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একদিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এবং কলমানি মিলে ধারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিন ১৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা ধার করেছে।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কলমানি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত মিলে ওই দিনে ধারের পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে ওই ৩ দিনে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্যের চাপ বেশি। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবরে দুর্বল ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছে। এই টাকার জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আমানতকারী যেন ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত না যান। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকার জোগান দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোকে যে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো তাদেরই টাকা। ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ বাবদ যেসব টাকা রয়েছে সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে এর বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব টাকার উৎস থেকে কোনো ব্যাংককে টাকা দেওয়া হয়নি। আর এটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়া হিসাবেই মনে করে।

ব্যাংকগুলো যে ধার করছে তার বড় একটি অংশই একদিনের জন্য। ফলে একদিন পর ওই ধারের অর্থ আবার ফেরত দিতে হচ্ছে। যে কারণে পরের দিন আবার ধার করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন ধারের অঙ্ক বেশি হচ্ছে।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে নিজস্ব তহবিলের একটি অংশ নগদ আকারে নিজেদের কাছে জমা রাখার কথা। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে তারা সেটি পারছে না। এছাড়া আস্থাহীনতার কারণে কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছে। এ কারণে সংকট বাড়ছে।