প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরাই। দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে একযোগে কাজ করে শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ, আত্মবিশ্বাসী এবং মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী’ এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান। এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতীয় শিশু দিবসে এবছরের প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু এবং পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই তার নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ লাভ করতে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই বিশ্ববরেণ্য নেতার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয়স্থল।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালে তার প্রস্তাবে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। কখনও জেলে থেকে কখনও বা জেলের বাইরে থেকে তিনি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনে কারান্তরীণ অবস্থায় থেকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায়, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮-র আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শিশুদের প্রতি অপরিসীম মমতা ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে- এই ভাবনা থেকেই জাতিসংঘ শিশুসনদের ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি শিশু আইন প্রণয়ন করেন। শিশু শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে ১৭ মার্চ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং শিশুদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আমরা ‘জাতীয় শিশুনীতি’, ‘শিশু আইন’, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ প্রণয়ন করেছি। এছাড়া সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় শতভাগ শিশু আজ স্কুলে যাচ্ছে। আমরা শিশুদের জন্য জাতির পিতার জীবন ও কর্মভিত্তিক বই প্রকাশ এবং পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরেছি। এছাড়াও শিশুদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার উপযোগী সবরকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী’ এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।