ঢাকা ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমন সফল জীবন পৃথিবীতে বিরল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
  • ৩৮ বার

একাত্তরের মার্চ মাসকে আমরা বলি উত্তাল মার্চ, আগুন ঝরানো মার্চ। তবে ১৯২০-এর ১৭ মার্চ তেমন আগুন ঝরানো ছিল না। তবে এটা ঠিক যে, ওই ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় একটি আগুনের ফুলকির জন্ম হয়েছিল। সেই আগুনের ফুলকি বাঙালির প্রাণে আগুনের ছোঁয়া লাগিয়েছিল একাত্তরের মার্চে। সে কারণেই ’৭১ আমাদের আগুন ঝরানো মার্চ।

আমি খুব সংক্ষেপে দুই ধরনের কথা আপনাদের সামনে হাজির করব। প্রথম কথাটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে যে প্রসঙ্গটি সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক, সেটি হচ্ছে তিনি কেন বঙ্গবন্ধু। কেন তিনি নেতা। আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমেই উদ্ধৃত করব রবীন্দ্রনাথকে।

রবীন্দ্রনাথ ১৯২১-এ স্কটল্যান্ডের স্থপতি স্যার প্যাট্রিক গিডেসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। উল্লেখ্য, এ স্যার প্যাট্রিক গিডেস বিশ্বভারতীর নকশা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ একটি জায়গায় কিছু কথা বলেছেন এবং যাতে সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ নিজের অজান্তেই নেতৃত্বের সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞাটি দিয়েছেন।

নেতৃত্বের সংজ্ঞা আঁতি-পাঁতি করে খোঁজার জন্য আমি যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের যে কথাগুলো এখন উদ্ধৃত করব, তার মধ্যেই নেতৃত্বের সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা আছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘I do not have faith in any institutions, but in the people who think properly, feel nobly and act rightly’-কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই, তবে আস্থা আছে সেই মানুষগুলোর ওপর, যাদের আছে যথার্থ চিন্তা, মহান অনুভব এবং সঠিক কর্ম।

বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবন, কর্মকাণ্ড এবং কৃতিকে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমি দেখতে পাই, তার জীবনকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য গুণান্বিত করেছিল। প্রথম কথা বলি, যথার্থ চিন্তা। প্রথম চিন্তাটাই হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান হওয়ার পর পাকিস্তানি মোহে আচ্ছন্ন যখন বাঙালি মুসলমান, এমনকি তাদের নেতৃবৃন্দ, সেই সময় এক তরুণ ‘বেকার হোস্টেলে’ বসে তার কিছু সাথিকে নিয়ে ছোট্ট একটি সভা করলেন। বলে দিলেন: ‘এই পাকিস্তান বাঙালির অধিকার রক্ষা করবে না।’ এবং মেঠো বাংলায় বললেন: ‘ওই মাউড়াদের সঙ্গে থাকা যাবে না।’ অন্নদাশঙ্কর রায় যখন প্রশ্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে: ‘কখন থেকে আপনি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘সাতচল্লিশ থেকে।’ এই সভার ক’দিন পরেই কলকাতার সাপ্তাহিক মিল্লাত পত্রিকার অফিসে বসেছিলেন ক’জনের সঙ্গে। সেখানে তিনি প্রশ্ন তুললেন রাষ্ট্রভাষার। ওই সভায় তিনি বলে দিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে হবে বাংলা। কারণ, বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ’৬১-তে কমরেড মণি সিংহ, কমরেড খোকা রায়ের সঙ্গে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সৌজন্যে গোপন একটি সভায় মিলিত হলেন। সেখানে আলোচনা হলো স্বাধীনতা নিয়ে। দুই কমরেড তাকে বোঝালেন: ‘স্বাধীনতা আমাদের দরকার; কিন্তু ভাই, এখন পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল নয়। এখন দয়া করে স্বাধীনতার কথা বলবেন না।’ সেদিনের তরুণ শেখ মুজিব (বঙ্গবন্ধু হননি তখনো) বললেন: ‘দাদা, আপনাদের কথা মানলাম; কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করব না।’

ছয় দফা নিয়ে আমি দুটো প্রসঙ্গ হাজির করব তার সঠিক চিন্তার ব্যাপারে। ছয় দফা নিয়ে আমার মনে আছে, আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অনেক বিতর্ক শুরু হলো। এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ন্যাপ নেতা, তাকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘ভাই, আপনি ছয় দফা দিয়ে কী বোঝাতে চান।’ বঙ্গবন্ধু মেঠো বাংলায় উত্তর দিয়ে বললেন: ‘আরে মিঞা বুঝলা না, দফা তো একটাই, একটু গুরাইয়া কইলাম।’ চমৎকার!

রাজ্জাক ভাই, আবদুর রাজ্জাক, নিউক্লিয়াসের নেতা, বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন, এসে অনুযোগ করলেন, ‘আমরা নিউক্লিয়াস থেকে গোপনে স্বাধীনতার কথা ভাবছি, আপনি ছয় দফা দিয়ে কেন স্বায়ত্তশাসনের কথা বললেন?’ তখন বঙ্গবন্ধু রাজ্জাক ভাইয়ের পিঠে হাত দিয়ে বললেন: ‘তোমাদের ওপারে যাওয়ার সাঁকো তৈরি করে দিলাম।’ একটি মানুষের কত পরিণত চিন্তা থাকলে এমন মেঠো ভাষায় কত তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলতে পারেন! সৈয়দ শামসুল হক বিবিসিতে কাজ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একই প্রশ্ন করলেন: ‘কী বলতে চান আপনি ছয় দফায়।’ বঙ্গবন্ধু তখন বললেন: ‘আমার তিনটি দফা-কত নিছ, কত দেবা, কবে যাবা-পাকিস্তানের কাছে।’ ১৯৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় তিনি বললেন: “আজ থেকে এদেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’, ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নয়।” আমরা তরুণরা পূর্ব পাকিস্তান কাগজে-কলমে লিখতাম; কিন্তু মুখে বলতাম বাংলাদেশ। তো, এমনিভাবে আমি ধারাবাহিকভাবে যদি বঙ্গবন্ধুর চিন্তাটাকে আপনাদের সামনে হাজির করি, তাহলে দেখব অনেক কথা এসে যাবে।

দুই নম্বর-মহান অনুভব বা মানবিকতা। অসংখ্য কথা আছে। ছোটবেলায় কিশোর খোকা যা ছিলেন, তাতেই বোঝা গিয়েছিল, এই কিশোর একদিন অনেক কিছু হবে। জন্মলগ্নে তার নানা নামকরণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আকিকা দিয়ে তিনি তার (শেখ মুজিব) বাবা-মাকে বলেছিলেন: ‘তোমাদের এই ছেলে অনেক বড় হবে।’ এটা তো কথার কথা; কিন্তু কত বড় হবে, সেটা আমরা বুঝেছি।

বঙ্গবন্ধু জন্মদিন পালন করেননি। আমরা করি, করছি, করব, আমাদের বিবেকী দায়বোধ থেকে। তো, এই ডানপিটে, একরোখা, একগুঁয়ে, দুরন্ত খোকা হাড় জিরজিরে, লিকলিকে, অসুখ ছাড়ে না। দাদি একটু বেশি করে দুধ খাওয়ান, দুধের সর খাওয়ান-যদি ছেলেটির গায়ে একটু কিছু লাগে। ছেলেটির গায়ে লেগেছিল। ‘বেকার হোস্টেলে’ তরকারির যে মাংসের কাপ-তিনি দুটো খেতেন। সেজন্য তিনি অনুমতিও প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি, বাঙালি জাতির অবয়বেও সংযোজন করেছিলেন অনেক কিছু।

সবচেয়ে বড় কথা মানবিকতা। অনেক ঘটনা আছে। মহানুভবতা তার নাতিদীর্ঘ পঞ্চান্ন বছরের জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে আমরা খুঁজে পাব। আমার মনে পড়ে ফরাসি চিন্তাবিদ লামার্তিনের কথা। লামার্তিন বলেছেন: ‘নেতার থাকবে জনগণের জন্য দরদ। আর জনগণের দরদ থাকবে নেতার জন্য। দুই পক্ষের দরদ নিয়ে গড়ে উঠবে নেতার নেতৃত্ব।’ বঙ্গবন্ধু তো নিজেই বলেছিলেন: ‘আমি ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময়ও বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ।’

ডেভিড ফ্রস্টকে বলেছিলেন, তার যোগ্যতা হচ্ছে তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। আর অযোগ্যতা হচ্ছে মানুষকে বেশি ভালোবাসেন। ১৯৭৩-এ কোনো এক পড়ন্ত বিকালে ৩২ নম্বর বাড়িতে টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন বঙ্গবন্ধু, হাতে সেই কালো পাইপ। একপর্যায়ে বললেন: ‘দ্যাখ, আমি যখন মারা যাব, তোরা আমাকে টুঙ্গিপাড়ায় কবর দিবি।’ সবাই বলল: ‘আপনি তো টুঙ্গিপাড়ার মানুষ, টুঙ্গিপাড়ায় কবর তো হবেই।’ ‘শুধু তাই না, আমার কবরের ওপর একটা টিনের চোঙা লাগিয়ে দিবি।’ সবাই হতভম্ব। মুসলমানের কবরে আবার টিনের চোঙা লাগে কেন? বঙ্গবন্ধু বললেন: ‘আমি বাঙালিকে একটি বিষয় সবসময় স্মরণ রাখতে বলছি। ওই কারণে চোঙা দিতে বলছি যে, এই চোঙা হাতেই শেখ মুজিব নামের এক কিশোর একদিন বাঙালি বাঙালি বলতে বলতে সেটা ফুঁকতে শুরু করে রাজনীতি করেছে।’ ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ায়ই আছেন, তবে চোঙা আমরা লাগাতে পারিনি। লাগাব কিনা, তা-ও জানি না।

এবারে আসি সঠিক কর্মে। বেশি কথায় যাব না। ৭ মার্চের ভাষণ তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভাষণ, সংক্ষিপ্ততম ভাষণ; কিন্তু যা বলেছেন তা ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ৬ মার্চ আমাদের চার ছাত্রনেতা-চার খলিফা বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘স্বাধীনতা ছাড়া কিছু বলতে পারবেন না।’ বঙ্গবন্ধু তখন বললেন : ‘দ্যাখ, তোরা বেশি চাপাচাপি করবি না। শেখ মুজিব জানে কখন কী বলতে হবে। কখন কী করতে হবে।’ প্রচণ্ড উত্তেজনায় শরীরে জ্বর। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা বললেন, ‘তুমি একটু শুয়ে থাক কাঁথা মুড়ি দিয়ে।’ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তখন কিশোরী। মাথায়-কপালে ভিক্স মালিশ করে দিলেন। তিনি শুয়ে থাকলেন। অনেকে অনেক কথা বলেছে। কী বলতে হবে, না বলতে হবে। শেষ মুহূর্তে স্ত্রীর মুখোমুখি হলেন, যা তিনি সব সময় করতেন-কী বলব আজকে? বঙ্গমাতা বললেন : ‘তোমার পেছনে বন্দুক, সামনে জনতা-তোমার মনে যা আসে তাই বলবে।’

তার গাড়ি চালিয়ে নিলেন আজীবনের সঙ্গী হাজি মোর্শেদ। মঞ্চে ওঠার আগে প্রশ্ন করলেন বঙ্গবন্ধুকে: ‘আপনি কী বলবেন। কাগজপত্র তো কিছু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন : ‘আল্লাহ আমাকে দিয়ে যা বলায় তাই বলব।’ তাই বললেন কবিতার ভাষায়। আর একটি চমৎকার বিষয় আমি লক্ষ করি, পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফে বলা হচ্ছে : ‘মানুষ যখন অঙ্গীকারমূলক কোনো কথা বলবে, সে যেন অবশ্যই ইনশাআল্লাহ বলে।’ বঙ্গবন্ধু বললেন : ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরও রক্ত দেব, বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব-ইনশাআল্লাহ।’ বাংলার মানুষ স্বাধীন হয়েছে। মুক্ত হচ্ছে কিনা, তার জন্য আমরা সচেষ্ট অগ্রযাত্রায় আছি। মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার কথা বলেননি। বলেছেন মুক্তির কথা আগে। তিনবার বলেছেন মুক্তির কথা-ওই ভাষণে। আমরা যারা শুনেছি, তাদের মনে কোনো দ্বিধা থাকেনি-যা শুনতে চেয়েছি তা শুনেছি।

এবার দ্বিতীয় অংশে যাই। দ্বিতীয় অংশে আমার বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধু কেন? বিশ্ববন্ধু হবেন না কেন? তিনি বিশ্ববন্ধু। বিস্তৃত আলোচনায় যাব না। শুধু একটি কথা বলি : ৭ মার্চ-এর ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, সে প্রসঙ্গে অ্যাডওয়ার্ড হিথ, ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে মানুষ যতদিন পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, ততদিন এই ভাষণ প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করবে।’ ১৯৭৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন সেই অবিস্মরণীয় উক্তি : ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত-শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ আলজিয়ার্স সম্মেলন শেষ হলো। কায়রোর আল আহরাম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হলো : ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটিমাত্র গুলি না ছুড়ে সারা মুসলিম বিশ্ব জয় করে নিলেন।’ জানা আছে, মুসলিম বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের কাছে নত হতে হয়েছিল সবাইকে। গাদ্দাফি, মুয়াম্মর আল গাদ্দাফি বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ৩৫ মিনিট কথা বললেন। বলার পর বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে হাত তুলে মোনাজাত শুরু করলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ৩৫ মিনিটে কী জাদু ছিল, কী রসায়ন ছিল, যে সব বিরোধিতা দ্রবীভূত হয়ে গেল?

আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই : সারা বিশ্বের কাছে তার তো আবেদন আছে। সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের কাছে তিনি দিকদর্শন দিয়েছেন। সুতরাং, তাকে আমরা কেন বলতে পারব না, শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, বিশ্ববন্ধুও বটে। শেষ করছি একটি কথা দিয়ে। আজ তো জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, শিশুদের নিয়ে অনেক কথা আছে। একটি কথা উদ্ধৃত করব। তিনি সব সময় সবাইকে বলতেন: ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও, শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ এ মানুষটি নিজে সারা জীবন শিশু ছিলেন। সারা জীবন শিশুর মতো হেসেছেন। যতই দিন যাচ্ছে-শুধু আমাদের নয়, সারা দুনিয়ার ভালোবাসা পাচ্ছেন। নইলে কেন ইউনেসকো তার ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ করবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রদত্ত ভাষণ (পরিমার্জিত), ১৭ মার্চ ২০১৯

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এমন সফল জীবন পৃথিবীতে বিরল

আপডেট টাইম : ১০:৪০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

একাত্তরের মার্চ মাসকে আমরা বলি উত্তাল মার্চ, আগুন ঝরানো মার্চ। তবে ১৯২০-এর ১৭ মার্চ তেমন আগুন ঝরানো ছিল না। তবে এটা ঠিক যে, ওই ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় একটি আগুনের ফুলকির জন্ম হয়েছিল। সেই আগুনের ফুলকি বাঙালির প্রাণে আগুনের ছোঁয়া লাগিয়েছিল একাত্তরের মার্চে। সে কারণেই ’৭১ আমাদের আগুন ঝরানো মার্চ।

আমি খুব সংক্ষেপে দুই ধরনের কথা আপনাদের সামনে হাজির করব। প্রথম কথাটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে যে প্রসঙ্গটি সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক, সেটি হচ্ছে তিনি কেন বঙ্গবন্ধু। কেন তিনি নেতা। আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমেই উদ্ধৃত করব রবীন্দ্রনাথকে।

রবীন্দ্রনাথ ১৯২১-এ স্কটল্যান্ডের স্থপতি স্যার প্যাট্রিক গিডেসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। উল্লেখ্য, এ স্যার প্যাট্রিক গিডেস বিশ্বভারতীর নকশা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ একটি জায়গায় কিছু কথা বলেছেন এবং যাতে সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ নিজের অজান্তেই নেতৃত্বের সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞাটি দিয়েছেন।

নেতৃত্বের সংজ্ঞা আঁতি-পাঁতি করে খোঁজার জন্য আমি যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের যে কথাগুলো এখন উদ্ধৃত করব, তার মধ্যেই নেতৃত্বের সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা আছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘I do not have faith in any institutions, but in the people who think properly, feel nobly and act rightly’-কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই, তবে আস্থা আছে সেই মানুষগুলোর ওপর, যাদের আছে যথার্থ চিন্তা, মহান অনুভব এবং সঠিক কর্ম।

বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবন, কর্মকাণ্ড এবং কৃতিকে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমি দেখতে পাই, তার জীবনকে এ তিনটি বৈশিষ্ট্য গুণান্বিত করেছিল। প্রথম কথা বলি, যথার্থ চিন্তা। প্রথম চিন্তাটাই হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান হওয়ার পর পাকিস্তানি মোহে আচ্ছন্ন যখন বাঙালি মুসলমান, এমনকি তাদের নেতৃবৃন্দ, সেই সময় এক তরুণ ‘বেকার হোস্টেলে’ বসে তার কিছু সাথিকে নিয়ে ছোট্ট একটি সভা করলেন। বলে দিলেন: ‘এই পাকিস্তান বাঙালির অধিকার রক্ষা করবে না।’ এবং মেঠো বাংলায় বললেন: ‘ওই মাউড়াদের সঙ্গে থাকা যাবে না।’ অন্নদাশঙ্কর রায় যখন প্রশ্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে: ‘কখন থেকে আপনি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘সাতচল্লিশ থেকে।’ এই সভার ক’দিন পরেই কলকাতার সাপ্তাহিক মিল্লাত পত্রিকার অফিসে বসেছিলেন ক’জনের সঙ্গে। সেখানে তিনি প্রশ্ন তুললেন রাষ্ট্রভাষার। ওই সভায় তিনি বলে দিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে হবে বাংলা। কারণ, বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ’৬১-তে কমরেড মণি সিংহ, কমরেড খোকা রায়ের সঙ্গে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সৌজন্যে গোপন একটি সভায় মিলিত হলেন। সেখানে আলোচনা হলো স্বাধীনতা নিয়ে। দুই কমরেড তাকে বোঝালেন: ‘স্বাধীনতা আমাদের দরকার; কিন্তু ভাই, এখন পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল নয়। এখন দয়া করে স্বাধীনতার কথা বলবেন না।’ সেদিনের তরুণ শেখ মুজিব (বঙ্গবন্ধু হননি তখনো) বললেন: ‘দাদা, আপনাদের কথা মানলাম; কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করব না।’

ছয় দফা নিয়ে আমি দুটো প্রসঙ্গ হাজির করব তার সঠিক চিন্তার ব্যাপারে। ছয় দফা নিয়ে আমার মনে আছে, আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অনেক বিতর্ক শুরু হলো। এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ন্যাপ নেতা, তাকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘ভাই, আপনি ছয় দফা দিয়ে কী বোঝাতে চান।’ বঙ্গবন্ধু মেঠো বাংলায় উত্তর দিয়ে বললেন: ‘আরে মিঞা বুঝলা না, দফা তো একটাই, একটু গুরাইয়া কইলাম।’ চমৎকার!

রাজ্জাক ভাই, আবদুর রাজ্জাক, নিউক্লিয়াসের নেতা, বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন, এসে অনুযোগ করলেন, ‘আমরা নিউক্লিয়াস থেকে গোপনে স্বাধীনতার কথা ভাবছি, আপনি ছয় দফা দিয়ে কেন স্বায়ত্তশাসনের কথা বললেন?’ তখন বঙ্গবন্ধু রাজ্জাক ভাইয়ের পিঠে হাত দিয়ে বললেন: ‘তোমাদের ওপারে যাওয়ার সাঁকো তৈরি করে দিলাম।’ একটি মানুষের কত পরিণত চিন্তা থাকলে এমন মেঠো ভাষায় কত তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলতে পারেন! সৈয়দ শামসুল হক বিবিসিতে কাজ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একই প্রশ্ন করলেন: ‘কী বলতে চান আপনি ছয় দফায়।’ বঙ্গবন্ধু তখন বললেন: ‘আমার তিনটি দফা-কত নিছ, কত দেবা, কবে যাবা-পাকিস্তানের কাছে।’ ১৯৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় তিনি বললেন: “আজ থেকে এদেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’, ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নয়।” আমরা তরুণরা পূর্ব পাকিস্তান কাগজে-কলমে লিখতাম; কিন্তু মুখে বলতাম বাংলাদেশ। তো, এমনিভাবে আমি ধারাবাহিকভাবে যদি বঙ্গবন্ধুর চিন্তাটাকে আপনাদের সামনে হাজির করি, তাহলে দেখব অনেক কথা এসে যাবে।

দুই নম্বর-মহান অনুভব বা মানবিকতা। অসংখ্য কথা আছে। ছোটবেলায় কিশোর খোকা যা ছিলেন, তাতেই বোঝা গিয়েছিল, এই কিশোর একদিন অনেক কিছু হবে। জন্মলগ্নে তার নানা নামকরণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আকিকা দিয়ে তিনি তার (শেখ মুজিব) বাবা-মাকে বলেছিলেন: ‘তোমাদের এই ছেলে অনেক বড় হবে।’ এটা তো কথার কথা; কিন্তু কত বড় হবে, সেটা আমরা বুঝেছি।

বঙ্গবন্ধু জন্মদিন পালন করেননি। আমরা করি, করছি, করব, আমাদের বিবেকী দায়বোধ থেকে। তো, এই ডানপিটে, একরোখা, একগুঁয়ে, দুরন্ত খোকা হাড় জিরজিরে, লিকলিকে, অসুখ ছাড়ে না। দাদি একটু বেশি করে দুধ খাওয়ান, দুধের সর খাওয়ান-যদি ছেলেটির গায়ে একটু কিছু লাগে। ছেলেটির গায়ে লেগেছিল। ‘বেকার হোস্টেলে’ তরকারির যে মাংসের কাপ-তিনি দুটো খেতেন। সেজন্য তিনি অনুমতিও প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি, বাঙালি জাতির অবয়বেও সংযোজন করেছিলেন অনেক কিছু।

সবচেয়ে বড় কথা মানবিকতা। অনেক ঘটনা আছে। মহানুভবতা তার নাতিদীর্ঘ পঞ্চান্ন বছরের জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে আমরা খুঁজে পাব। আমার মনে পড়ে ফরাসি চিন্তাবিদ লামার্তিনের কথা। লামার্তিন বলেছেন: ‘নেতার থাকবে জনগণের জন্য দরদ। আর জনগণের দরদ থাকবে নেতার জন্য। দুই পক্ষের দরদ নিয়ে গড়ে উঠবে নেতার নেতৃত্ব।’ বঙ্গবন্ধু তো নিজেই বলেছিলেন: ‘আমি ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময়ও বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ।’

ডেভিড ফ্রস্টকে বলেছিলেন, তার যোগ্যতা হচ্ছে তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। আর অযোগ্যতা হচ্ছে মানুষকে বেশি ভালোবাসেন। ১৯৭৩-এ কোনো এক পড়ন্ত বিকালে ৩২ নম্বর বাড়িতে টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন বঙ্গবন্ধু, হাতে সেই কালো পাইপ। একপর্যায়ে বললেন: ‘দ্যাখ, আমি যখন মারা যাব, তোরা আমাকে টুঙ্গিপাড়ায় কবর দিবি।’ সবাই বলল: ‘আপনি তো টুঙ্গিপাড়ার মানুষ, টুঙ্গিপাড়ায় কবর তো হবেই।’ ‘শুধু তাই না, আমার কবরের ওপর একটা টিনের চোঙা লাগিয়ে দিবি।’ সবাই হতভম্ব। মুসলমানের কবরে আবার টিনের চোঙা লাগে কেন? বঙ্গবন্ধু বললেন: ‘আমি বাঙালিকে একটি বিষয় সবসময় স্মরণ রাখতে বলছি। ওই কারণে চোঙা দিতে বলছি যে, এই চোঙা হাতেই শেখ মুজিব নামের এক কিশোর একদিন বাঙালি বাঙালি বলতে বলতে সেটা ফুঁকতে শুরু করে রাজনীতি করেছে।’ ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ায়ই আছেন, তবে চোঙা আমরা লাগাতে পারিনি। লাগাব কিনা, তা-ও জানি না।

এবারে আসি সঠিক কর্মে। বেশি কথায় যাব না। ৭ মার্চের ভাষণ তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভাষণ, সংক্ষিপ্ততম ভাষণ; কিন্তু যা বলেছেন তা ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ৬ মার্চ আমাদের চার ছাত্রনেতা-চার খলিফা বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘স্বাধীনতা ছাড়া কিছু বলতে পারবেন না।’ বঙ্গবন্ধু তখন বললেন : ‘দ্যাখ, তোরা বেশি চাপাচাপি করবি না। শেখ মুজিব জানে কখন কী বলতে হবে। কখন কী করতে হবে।’ প্রচণ্ড উত্তেজনায় শরীরে জ্বর। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা বললেন, ‘তুমি একটু শুয়ে থাক কাঁথা মুড়ি দিয়ে।’ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তখন কিশোরী। মাথায়-কপালে ভিক্স মালিশ করে দিলেন। তিনি শুয়ে থাকলেন। অনেকে অনেক কথা বলেছে। কী বলতে হবে, না বলতে হবে। শেষ মুহূর্তে স্ত্রীর মুখোমুখি হলেন, যা তিনি সব সময় করতেন-কী বলব আজকে? বঙ্গমাতা বললেন : ‘তোমার পেছনে বন্দুক, সামনে জনতা-তোমার মনে যা আসে তাই বলবে।’

তার গাড়ি চালিয়ে নিলেন আজীবনের সঙ্গী হাজি মোর্শেদ। মঞ্চে ওঠার আগে প্রশ্ন করলেন বঙ্গবন্ধুকে: ‘আপনি কী বলবেন। কাগজপত্র তো কিছু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন : ‘আল্লাহ আমাকে দিয়ে যা বলায় তাই বলব।’ তাই বললেন কবিতার ভাষায়। আর একটি চমৎকার বিষয় আমি লক্ষ করি, পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফে বলা হচ্ছে : ‘মানুষ যখন অঙ্গীকারমূলক কোনো কথা বলবে, সে যেন অবশ্যই ইনশাআল্লাহ বলে।’ বঙ্গবন্ধু বললেন : ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরও রক্ত দেব, বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব-ইনশাআল্লাহ।’ বাংলার মানুষ স্বাধীন হয়েছে। মুক্ত হচ্ছে কিনা, তার জন্য আমরা সচেষ্ট অগ্রযাত্রায় আছি। মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার কথা বলেননি। বলেছেন মুক্তির কথা আগে। তিনবার বলেছেন মুক্তির কথা-ওই ভাষণে। আমরা যারা শুনেছি, তাদের মনে কোনো দ্বিধা থাকেনি-যা শুনতে চেয়েছি তা শুনেছি।

এবার দ্বিতীয় অংশে যাই। দ্বিতীয় অংশে আমার বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধু কেন? বিশ্ববন্ধু হবেন না কেন? তিনি বিশ্ববন্ধু। বিস্তৃত আলোচনায় যাব না। শুধু একটি কথা বলি : ৭ মার্চ-এর ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, সে প্রসঙ্গে অ্যাডওয়ার্ড হিথ, ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে মানুষ যতদিন পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, ততদিন এই ভাষণ প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করবে।’ ১৯৭৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন সেই অবিস্মরণীয় উক্তি : ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত-শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ আলজিয়ার্স সম্মেলন শেষ হলো। কায়রোর আল আহরাম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হলো : ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটিমাত্র গুলি না ছুড়ে সারা মুসলিম বিশ্ব জয় করে নিলেন।’ জানা আছে, মুসলিম বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের কাছে নত হতে হয়েছিল সবাইকে। গাদ্দাফি, মুয়াম্মর আল গাদ্দাফি বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ৩৫ মিনিট কথা বললেন। বলার পর বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে হাত তুলে মোনাজাত শুরু করলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ৩৫ মিনিটে কী জাদু ছিল, কী রসায়ন ছিল, যে সব বিরোধিতা দ্রবীভূত হয়ে গেল?

আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই : সারা বিশ্বের কাছে তার তো আবেদন আছে। সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের কাছে তিনি দিকদর্শন দিয়েছেন। সুতরাং, তাকে আমরা কেন বলতে পারব না, শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, বিশ্ববন্ধুও বটে। শেষ করছি একটি কথা দিয়ে। আজ তো জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, শিশুদের নিয়ে অনেক কথা আছে। একটি কথা উদ্ধৃত করব। তিনি সব সময় সবাইকে বলতেন: ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও, শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ এ মানুষটি নিজে সারা জীবন শিশু ছিলেন। সারা জীবন শিশুর মতো হেসেছেন। যতই দিন যাচ্ছে-শুধু আমাদের নয়, সারা দুনিয়ার ভালোবাসা পাচ্ছেন। নইলে কেন ইউনেসকো তার ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ করবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রদত্ত ভাষণ (পরিমার্জিত), ১৭ মার্চ ২০১৯