চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) মাত্র ২৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থবছরের অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের এ হার চূড়ান্ত করেছে।
অর্থবিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩) ৮৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১১ শতাংশ) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩) ১ লাখ ৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে (বাস্তবায়ন হার ১৫ শতাংশ)। এর বিপরীতে গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার কমলেও সার্বিকভাবে টাকার অঙ্কে ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) তা সংশোধন করে ২ লাখ ৪৫ টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে এডিপি আকার কমছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বাস্তবায়নের হার হচ্ছে মাত্র ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩) ১৫ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ৫ শতাংশ) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩) ২৬ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১০ শর্তাশ) ব্যয় করা হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার আশানুরূপ না হলেও গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়নের হার ২ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১৩ শতাংশ)।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আশানুরূপ ব্যয় না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে নিট সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৮ শতাংশ)।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৫ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ কমেছে ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে।
আলোচ্য সময়ে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে নিট বৈদেশিক অর্থায়ন আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এবারও আশানুরূপ রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফলে আগামী সপ্তাহে চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।