ঢাকা ১১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা পেল দুই সন্তান, বাবা পেল এক সন্তানকে, হাইকোর্টের রায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৪৪ বার

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের বিচ্ছেদ। তারপর সন্তানদের নিজ জিম্মায় পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই বাবা-মা। তারপর শুনানি শেষে আদালত তিন সন্তানকে বাবা-মায়ের মধ্য ভাগ করে দিল। এমনটাই ঘটেছে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে এক মামলার রায়ে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার জাপানি তিন শিশুকে তাদের মা ও বাবার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ এই আদালতের দেয়া রায় অনুযায়ী, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ও তার ছোট বোন তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে।

এছাড়া মেজ মেয়ে লাইলা লিনা তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, নাকানো এরিকো চাইলে বড় মেয়েকে নিয়ে জাপানে যেতে পারবেন।

মামলার এজার থেকে জানা গেছে, দুই সন্তানের মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দু’মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে আসেন জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দু’সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে সেই রায় বাবা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।

এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দু’মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত দু’শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। তাই আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। রায়ের পরদিন ৩০ জানুয়ারি ইমরান শরিফ আপিল করেন। জেলা জজ আদালতেও আপিলে হেরে গিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন।

এর আগে জাপানি দুই শিশুর মায়ের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশিন মনিরজানিয়েছিলেন, দুই শিশুর বাবা সন্তানদের ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে মামলা করে হেরে যান। এরপর তিনি সেই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। আপিলেও হেরে গিয়ে হাইকোর্টে রিভিশন ফাইল করেন। সেই রিভিশনের শুনানি হয়েছে। আজ আদালত রায় ঘোষণা করবেন।

এদিকে সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে বাবা ইমরান শরিফ ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। যা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মা পেল দুই সন্তান, বাবা পেল এক সন্তানকে, হাইকোর্টের রায়

আপডেট টাইম : ১১:২১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের বিচ্ছেদ। তারপর সন্তানদের নিজ জিম্মায় পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই বাবা-মা। তারপর শুনানি শেষে আদালত তিন সন্তানকে বাবা-মায়ের মধ্য ভাগ করে দিল। এমনটাই ঘটেছে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে এক মামলার রায়ে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার জাপানি তিন শিশুকে তাদের মা ও বাবার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ এই আদালতের দেয়া রায় অনুযায়ী, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ও তার ছোট বোন তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে।

এছাড়া মেজ মেয়ে লাইলা লিনা তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, নাকানো এরিকো চাইলে বড় মেয়েকে নিয়ে জাপানে যেতে পারবেন।

মামলার এজার থেকে জানা গেছে, দুই সন্তানের মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দু’মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে আসেন জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দু’সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে সেই রায় বাবা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।

এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দু’মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত দু’শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। তাই আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। রায়ের পরদিন ৩০ জানুয়ারি ইমরান শরিফ আপিল করেন। জেলা জজ আদালতেও আপিলে হেরে গিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন।

এর আগে জাপানি দুই শিশুর মায়ের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশিন মনিরজানিয়েছিলেন, দুই শিশুর বাবা সন্তানদের ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে মামলা করে হেরে যান। এরপর তিনি সেই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। আপিলেও হেরে গিয়ে হাইকোর্টে রিভিশন ফাইল করেন। সেই রিভিশনের শুনানি হয়েছে। আজ আদালত রায় ঘোষণা করবেন।

এদিকে সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে বাবা ইমরান শরিফ ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। যা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।