ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধের মাঠে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের এ সময়ে এসে দেশের অধিকাংশ জেলা ইতোমধ্যে হানাদার মুক্ত হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের অনেকটাই কাছাকাছি বাংলাদেশ। ঢাকায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। আক্রমণ শুরু হয়েছে।

পালাবার পথ না পেয়ে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত পাকিস্তানিরা। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। তাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। তবে তারা পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ছিল শুক্রবার। এদিন খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমীন। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিরোধ গড়ে তিনি শহিদ হন। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় বাহিনী কয়েকদিন ধরে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালায়। এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বারবার রকেট হামলা করে।

মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সিঙ্গাপুর পালানোর পথে মিত্র নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এদিন রংপুর ও দিনাজপুর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করা হয়। রাতে পাকিস্তানি বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালানোর সময় শহরের অদূরে যৌথবাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী। এদিন নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। এক কোটি শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের এদিন সমঝোতা চুক্তি হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান ও তাদের দোসর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চালাচ্ছিল। এতদিনে তারা বুঝে গেছে এ যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা একদমই নেই। এ সময় তারা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে চলছিল এ তালিকা তৈরির কাজ। দেশের শিক্ষিত শ্রেণি অর্থাৎ শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবীদের রাখা হচ্ছিল এ তালিকায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যুদ্ধের মাঠে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা

আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের এ সময়ে এসে দেশের অধিকাংশ জেলা ইতোমধ্যে হানাদার মুক্ত হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের অনেকটাই কাছাকাছি বাংলাদেশ। ঢাকায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। আক্রমণ শুরু হয়েছে।

পালাবার পথ না পেয়ে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত পাকিস্তানিরা। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। তাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। তবে তারা পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ছিল শুক্রবার। এদিন খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমীন। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিরোধ গড়ে তিনি শহিদ হন। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় বাহিনী কয়েকদিন ধরে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালায়। এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বারবার রকেট হামলা করে।

মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সিঙ্গাপুর পালানোর পথে মিত্র নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এদিন রংপুর ও দিনাজপুর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করা হয়। রাতে পাকিস্তানি বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালানোর সময় শহরের অদূরে যৌথবাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী। এদিন নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। এক কোটি শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের এদিন সমঝোতা চুক্তি হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান ও তাদের দোসর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চালাচ্ছিল। এতদিনে তারা বুঝে গেছে এ যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা একদমই নেই। এ সময় তারা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে চলছিল এ তালিকা তৈরির কাজ। দেশের শিক্ষিত শ্রেণি অর্থাৎ শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবীদের রাখা হচ্ছিল এ তালিকায়।