ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্যের জমি দখল ও ভুয়া দলিল করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১৩১ বার

অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশবিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তর করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এছাড়া, সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিভূমির মালিকানার বিধান রেখে সংসদে আরেকটি বিল পাস করা হয়েছে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিলে বলা হয়েছে, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ কারো কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণসম্বলিত কোনো দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই হবে। প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকার সূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

কোনো ব্যক্তির নামে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না।

কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরিস্তর কাটার সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। নতুন আইনের আওতায় কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচনা দিলে মূল অপরাধীর সমান দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করতে এই আইন করা হচ্ছে।

নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকার নিশ্চিত, ভূমিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ভূমি থেকে বেআইনি দখল, স্থাপনা ব প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং ওই ভূমিকে এর আগের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা বিলে সন্নিবেশ করা হয়েছে।

ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দূর করা এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত নেওয়াসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা নয়
১৯৮৪ সালের ল্যান্ড রিফর্মস অর্ডিন্যান্স রহিত করে ভূমি সংস্কার বিল-২০২৩ সংসদে পাস হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ৬০ বিঘার বেশি কৃষিভূমির মালিক বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষিভূমি অর্জন করতে পারবে না।

তবে, সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তি ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্যের জমি দখল ও ভুয়া দলিল করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড

আপডেট টাইম : ১০:১৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশবিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তর করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এছাড়া, সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিভূমির মালিকানার বিধান রেখে সংসদে আরেকটি বিল পাস করা হয়েছে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিলে বলা হয়েছে, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ কারো কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণসম্বলিত কোনো দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই হবে। প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকার সূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

কোনো ব্যক্তির নামে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না।

কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরিস্তর কাটার সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। নতুন আইনের আওতায় কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচনা দিলে মূল অপরাধীর সমান দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করতে এই আইন করা হচ্ছে।

নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকার নিশ্চিত, ভূমিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ভূমি থেকে বেআইনি দখল, স্থাপনা ব প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং ওই ভূমিকে এর আগের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা বিলে সন্নিবেশ করা হয়েছে।

ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দূর করা এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত নেওয়াসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা নয়
১৯৮৪ সালের ল্যান্ড রিফর্মস অর্ডিন্যান্স রহিত করে ভূমি সংস্কার বিল-২০২৩ সংসদে পাস হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ৬০ বিঘার বেশি কৃষিভূমির মালিক বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষিভূমি অর্জন করতে পারবে না।

তবে, সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তি ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।