ঢাকা ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ৮০ বার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য বৃহত্তর বৈশ্বিক সমর্থনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, এই সংঘাতের কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভয়েস অব আমেরিকাকে শনিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কার্বি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর অনুপস্থিতিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। তাদের এই অনুপস্থিতি সম্মেলনের ফলাফলকে হয়তো প্রভাবিত করতে পারে।

জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১ হামলার ২২তম বার্ষিকীতে আলাস্কায় সামরিক বাহিনীতে বাইডেনের পরিকল্পিত সফর সম্পর্কেও কার্বি কথা বলেছেন। স্বচ্ছতা এবং সংক্ষিপ্ততার জন্য সাক্ষাৎকারটি কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে। এটি এবিনিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: এখানে নতুন দিল্লিতে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জন। চলুন শুরু করা যাক জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন দিয়ে, যার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ঐক্যের। কিন্তু আপনি কি আমাদের ব্যাখ্যা করতে পারেন যে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলি দুটি প্রধান নেতার অনুপস্থিতিতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে?

কার্বি: আপনি সম্ভবত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর কথা বলছেন। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই এখানে তাদের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের মাধ্যমে জি-২০ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই তারা এখনও এখানে আছে, এবং অংশগ্রহণ করছে। তারা আলোচনায়ও থাকছে। তাই আমরা জি-২০ এর সকল সদস্যের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি, যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অবশ্যই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই শীর্ষ সম্মেলনে আছেন… যদিও প্রেসিডেন্ট শি এখানে নেই, এবং এটি আমাদের জন্য একটি হতাশাজনক, তবে চীনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে এবং … তারা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে এবং এটিই প্রেসিডেন্ট দেখতে চান।

প্রশ্ন: ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন জি-২০ দেশগুলোর কাছে যে যুক্তি দিচ্ছেন, তার একটা রূপরেখা কি দিতে পারেন?

কার্বি: বর্তমানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একটি বড় লক্ষ্য, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এবং আমি জানি আপনি সম্ভবত ভাবছেন যে ইউক্রেনের সাথে ‘এর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইউক্রেনের বিষয়েও অনেক কিছু করার আছে, বিশেষত ইউক্রেনের যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির উপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে — আপনি সেই প্রভাবকে বাদ দিতে পারবেন না যে মি. পুতিনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক এবং বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আর প্রেসিডেন্ট যা করতে চান – তা হল, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবেন, কেননা এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঋণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ, এবং এটি সত্যিকার অর্থে যতটা সম্ভব তাদের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করবে। তাই, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্পূর্ণরূপে ইউক্রেনের যুদ্ধকে এখানে তার আজকের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চান।

প্রশ্ন: ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিষয়ে, আপনি কি আমাদের কিছু বিশেষ উদ্যোগের কথা জানাবেন – শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলির কথাও যদি বলেন – এবং আপনি কি সেই সমালোচনার জবাবও দিতে পারেন যে অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানের জন্য চীনের মতো সংস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই?

কার্বি: যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের কাছে আমাদের জন্য উপলব্ধ অর্থনৈতিক সরঞ্জামগুলির একটি বিস্তৃত পরিসর রয়েছে — সেইসাথে, এই বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে এবং ব্যালেন্স শীটকে আরও কার্যকর করার শর্তে আমরা এমন সংস্কারগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, যাতে এই উন্নয়ন ব্যাংকগুলি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য আরও বিকল্প সংস্থান প্রদান করতে পারে। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন সম্পর্কে নয়। চীন বিশ্বব্যাংকের একটি শেয়ারহোল্ডার, চীনের এটি দেখার আগ্রহ থাকা উচিত যে দেশগুলির কাছে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ঋণের জন্য আরও কার্যকর বিকল্প বিশ্ব ব্যাংকের রয়েছে।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের বিচক্ষণ অনুসন্ধানের জবাবে ভারত তাইওয়ানে চীনের আক্রমণের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে- এমন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে – এই শীর্ষ সম্মেলনে কি যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য জি-২০ সদস্যদের সাথে আলোচনা করছে?

কার্বি: সামরিক পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, তাইওয়ান বিষয়ে এই জি-২০ সম্মেলনে আলোচনা করা হচ্ছেনা। যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের নীতি সম্পর্কে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আমরা এক চীন নীতিকে সমর্থন করে যাচ্ছি। এবং আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাও সমর্থন করি না। তবে আমরা স্থিতাবস্থার কোনো পরিবর্তনকে একতরফাভাবে বা বলপ্রয়োগ করার মতো এমন কোন কিছুকে সমর্থন করি না। আর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বক্তব্য হল, তিনি তাঁর বিদেশী নীতিতে যা করছেন, বিশেষ করে এখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, তা হল সংঘাত রোধ করার বিষয়ে। আমরা চীনের সাথে সংঘাত চাই না, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিকের কারো সাথে বিরোধও চাই না।

প্রশ্ন: এবার প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফরের দিকে আপনার একটু মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। আসন্ন সফরটি হতে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক সফর এবং এই সফরে অনেক বড় বড় চুক্তি স্বাক্ষর, ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব গঠন নিয়ে আলোচনা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ কীভাবে ভিয়েতনামের মতো একটি কমিউনিস্ট দেশের সাথে একটি মজবুত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, তার উত্তর দিতে পারেন?

কার্বি: সম্পর্কটা কেমন হয়েছে তা একবার দেখুন। এটি গত এক দশক ধরে বেড়ে চলেছে। আর ভিয়েতনামিরা চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক। ভিয়েতনামিরা এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উদ্বেগ ভাগ করে নেয় । আমরাও অনেক আগ্রহের কথা ভাগ করে নিই; বিশেষ করে চীনের আচরণের বিষয়টিসহ কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আমাদের একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক দশক ধরে আমাদের দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে দেখাটা সত্যিই বেশ চমকপ্রদ ঘটনা। প্রেসিডেন্ট তাঁর এই সফর নিয়ে খুব উত্তেজিত, এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব। আমরা এটিকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন: পরিশেষে, আমি আপনাকে ১১ই সেপ্টেম্বর হামলার ২২ তম বার্ষিকীর তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি, যেটি অনেক বর্তমান সেনা সদস্যের জন্মের আগে হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আলাস্কায় সামরিক সদস্যদের সাথে মুহূর্তটি স্মরণ করতে যাচ্ছেন, বিশেষত ওই অঞ্চলটিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসাবে দেখা হচ্ছে। আলাস্কায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত কি এ জন্যই নেয়া হয়েছে?

কার্বি: আলাস্কায় ৯/১১ এর পর থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে অনেক আমেরিকান যে সেবা এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা স্মরণ করতে প্রেসিডেন্ট উন্মুখ হয়ে আছেন। কারণ তিনি জানেন যে যদিও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নিরাপদ রাখতে গত ২২ বছরে শুধু সাড়াই দেয়নি, পাশাপাশি তারা অবশ্যই সেই প্রচেষ্টার জন্য এখনো যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এটা সত্য, আমাদের সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য আছে যারা ৯/১১ হামলার পর জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি মনে করি না যে তাদের সেই সময়ে সেখানে থাকতেই হতো , আমি মনে করি না যে ৯/১১-এর আক্রমণ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার উপর যে প্রভাব ফেলেছিল এবং আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমরা গত ২০ বছরে যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছি, তা বোঝার জন্য আপনাকে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১০:০৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য বৃহত্তর বৈশ্বিক সমর্থনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, এই সংঘাতের কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভয়েস অব আমেরিকাকে শনিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কার্বি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর অনুপস্থিতিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। তাদের এই অনুপস্থিতি সম্মেলনের ফলাফলকে হয়তো প্রভাবিত করতে পারে।

জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১ হামলার ২২তম বার্ষিকীতে আলাস্কায় সামরিক বাহিনীতে বাইডেনের পরিকল্পিত সফর সম্পর্কেও কার্বি কথা বলেছেন। স্বচ্ছতা এবং সংক্ষিপ্ততার জন্য সাক্ষাৎকারটি কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে। এটি এবিনিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: এখানে নতুন দিল্লিতে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জন। চলুন শুরু করা যাক জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন দিয়ে, যার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ঐক্যের। কিন্তু আপনি কি আমাদের ব্যাখ্যা করতে পারেন যে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলি দুটি প্রধান নেতার অনুপস্থিতিতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে?

কার্বি: আপনি সম্ভবত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর কথা বলছেন। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই এখানে তাদের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের মাধ্যমে জি-২০ সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই তারা এখনও এখানে আছে, এবং অংশগ্রহণ করছে। তারা আলোচনায়ও থাকছে। তাই আমরা জি-২০ এর সকল সদস্যের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি, যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অবশ্যই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই শীর্ষ সম্মেলনে আছেন… যদিও প্রেসিডেন্ট শি এখানে নেই, এবং এটি আমাদের জন্য একটি হতাশাজনক, তবে চীনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে এবং … তারা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে এবং এটিই প্রেসিডেন্ট দেখতে চান।

প্রশ্ন: ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন জি-২০ দেশগুলোর কাছে যে যুক্তি দিচ্ছেন, তার একটা রূপরেখা কি দিতে পারেন?

কার্বি: বর্তমানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একটি বড় লক্ষ্য, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এবং আমি জানি আপনি সম্ভবত ভাবছেন যে ইউক্রেনের সাথে ‘এর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইউক্রেনের বিষয়েও অনেক কিছু করার আছে, বিশেষত ইউক্রেনের যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির উপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে — আপনি সেই প্রভাবকে বাদ দিতে পারবেন না যে মি. পুতিনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক এবং বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। আর প্রেসিডেন্ট যা করতে চান – তা হল, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবেন, কেননা এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঋণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ, এবং এটি সত্যিকার অর্থে যতটা সম্ভব তাদের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করবে। তাই, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্পূর্ণরূপে ইউক্রেনের যুদ্ধকে এখানে তার আজকের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে চান।

প্রশ্ন: ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিষয়ে, আপনি কি আমাদের কিছু বিশেষ উদ্যোগের কথা জানাবেন – শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলির কথাও যদি বলেন – এবং আপনি কি সেই সমালোচনার জবাবও দিতে পারেন যে অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানের জন্য চীনের মতো সংস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই?

কার্বি: যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের কাছে আমাদের জন্য উপলব্ধ অর্থনৈতিক সরঞ্জামগুলির একটি বিস্তৃত পরিসর রয়েছে — সেইসাথে, এই বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে এবং ব্যালেন্স শীটকে আরও কার্যকর করার শর্তে আমরা এমন সংস্কারগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, যাতে এই উন্নয়ন ব্যাংকগুলি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য আরও বিকল্প সংস্থান প্রদান করতে পারে। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন সম্পর্কে নয়। চীন বিশ্বব্যাংকের একটি শেয়ারহোল্ডার, চীনের এটি দেখার আগ্রহ থাকা উচিত যে দেশগুলির কাছে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ঋণের জন্য আরও কার্যকর বিকল্প বিশ্ব ব্যাংকের রয়েছে।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের বিচক্ষণ অনুসন্ধানের জবাবে ভারত তাইওয়ানে চীনের আক্রমণের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে- এমন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে – এই শীর্ষ সম্মেলনে কি যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য জি-২০ সদস্যদের সাথে আলোচনা করছে?

কার্বি: সামরিক পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, তাইওয়ান বিষয়ে এই জি-২০ সম্মেলনে আলোচনা করা হচ্ছেনা। যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের নীতি সম্পর্কে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আমরা এক চীন নীতিকে সমর্থন করে যাচ্ছি। এবং আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাও সমর্থন করি না। তবে আমরা স্থিতাবস্থার কোনো পরিবর্তনকে একতরফাভাবে বা বলপ্রয়োগ করার মতো এমন কোন কিছুকে সমর্থন করি না। আর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বক্তব্য হল, তিনি তাঁর বিদেশী নীতিতে যা করছেন, বিশেষ করে এখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, তা হল সংঘাত রোধ করার বিষয়ে। আমরা চীনের সাথে সংঘাত চাই না, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিকের কারো সাথে বিরোধও চাই না।

প্রশ্ন: এবার প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফরের দিকে আপনার একটু মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। আসন্ন সফরটি হতে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক সফর এবং এই সফরে অনেক বড় বড় চুক্তি স্বাক্ষর, ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব গঠন নিয়ে আলোচনা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ কীভাবে ভিয়েতনামের মতো একটি কমিউনিস্ট দেশের সাথে একটি মজবুত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, তার উত্তর দিতে পারেন?

কার্বি: সম্পর্কটা কেমন হয়েছে তা একবার দেখুন। এটি গত এক দশক ধরে বেড়ে চলেছে। আর ভিয়েতনামিরা চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক। ভিয়েতনামিরা এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উদ্বেগ ভাগ করে নেয় । আমরাও অনেক আগ্রহের কথা ভাগ করে নিই; বিশেষ করে চীনের আচরণের বিষয়টিসহ কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আমাদের একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক দশক ধরে আমাদের দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে দেখাটা সত্যিই বেশ চমকপ্রদ ঘটনা। প্রেসিডেন্ট তাঁর এই সফর নিয়ে খুব উত্তেজিত, এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব। আমরা এটিকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন: পরিশেষে, আমি আপনাকে ১১ই সেপ্টেম্বর হামলার ২২ তম বার্ষিকীর তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি, যেটি অনেক বর্তমান সেনা সদস্যের জন্মের আগে হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আলাস্কায় সামরিক সদস্যদের সাথে মুহূর্তটি স্মরণ করতে যাচ্ছেন, বিশেষত ওই অঞ্চলটিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসাবে দেখা হচ্ছে। আলাস্কায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত কি এ জন্যই নেয়া হয়েছে?

কার্বি: আলাস্কায় ৯/১১ এর পর থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে অনেক আমেরিকান যে সেবা এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা স্মরণ করতে প্রেসিডেন্ট উন্মুখ হয়ে আছেন। কারণ তিনি জানেন যে যদিও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নিরাপদ রাখতে গত ২২ বছরে শুধু সাড়াই দেয়নি, পাশাপাশি তারা অবশ্যই সেই প্রচেষ্টার জন্য এখনো যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এটা সত্য, আমাদের সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য আছে যারা ৯/১১ হামলার পর জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি মনে করি না যে তাদের সেই সময়ে সেখানে থাকতেই হতো , আমি মনে করি না যে ৯/১১-এর আক্রমণ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার উপর যে প্রভাব ফেলেছিল এবং আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমরা গত ২০ বছরে যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছি, তা বোঝার জন্য আপনাকে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।