ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার বছরের কাজ ১১ বছরেও শেষ হয়নি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না ‘বিসিক শিল্পপার্ক, সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্পের কাজ। চার বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ১১ বছরেও শেষ হয়নি এটি। ফলে সপ্তম দফায় এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে বলে অজুহাত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার রুগ্ণ প্রকল্প হিসাবে শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুর বাকী যুগান্তরকে বলেন, এবার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বাড়তি মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। না হলে যেমন আছে তেমন অবস্থায় প্রকল্পটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ। এছাড়া একই সময়ে ব্যয় হয়েছে ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

একনেক বৈঠক সূত্র জানায়, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে কিনা সেটি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। একনেক বৈঠকে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও বিসিকের চেয়ারম্যান ছিলাম। কিন্তু যেভাবে এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এতে বাড়তি এক বছরেও কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ আছে।

সূত্র জানায়, বিসিক শিল্পপার্ক, সিরাজগঞ্জ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় পরে প্রথম সংশোধনীর সময় এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বাড়ানো হয় এক বছর। তৃতীয় সংশোধনীর সময় ও মেয়াদ বাড়ে এক বছর। এবার ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় দুই বছর। এতেও শেষ না হওয়ায় সপ্তমবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জে ৪০০ একর জমির ওপর শিল্পপার্ক স্থাপনের কথা রয়েছে। এতে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। সেই সঙ্গে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য আছে। কিন্তু এখন শিল্পপার্কই প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেক দূরেই রয়েছে বিসিক। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া শেষ করতেই প্রায় ৫ বছর সময় গেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প এলাকায় ক্রসবার নির্মাণ, বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র সংগ্রহসহ স্থানীয় নানা জটিলতা ছিল। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এসব জটিলতা কাটাতেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ৯ বছর সময় পার হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনা মহামারির সময় লকডাউনের কাজ বন্ধ ছিল।

এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। সে সময় গভীর নলকূপ স্থাপন ও পাম্প হাউজ নির্মাণে ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ব্যত্যয় খুঁজে পেয়েছে। ফলে এ বিষয়ে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে সুপারিশ দিয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের বিপরীতে অর্থবছরভিত্তিক ব্যয় অর্থের অডিট সম্পন্ন করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রকল্পটি শেষ করার শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চার বছরের কাজ ১১ বছরেও শেষ হয়নি

আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না ‘বিসিক শিল্পপার্ক, সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্পের কাজ। চার বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ১১ বছরেও শেষ হয়নি এটি। ফলে সপ্তম দফায় এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে বলে অজুহাত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার রুগ্ণ প্রকল্প হিসাবে শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুর বাকী যুগান্তরকে বলেন, এবার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বাড়তি মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। না হলে যেমন আছে তেমন অবস্থায় প্রকল্পটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ। এছাড়া একই সময়ে ব্যয় হয়েছে ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

একনেক বৈঠক সূত্র জানায়, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে কিনা সেটি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। একনেক বৈঠকে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও বিসিকের চেয়ারম্যান ছিলাম। কিন্তু যেভাবে এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এতে বাড়তি এক বছরেও কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ আছে।

সূত্র জানায়, বিসিক শিল্পপার্ক, সিরাজগঞ্জ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় পরে প্রথম সংশোধনীর সময় এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বাড়ানো হয় এক বছর। তৃতীয় সংশোধনীর সময় ও মেয়াদ বাড়ে এক বছর। এবার ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় দুই বছর। এতেও শেষ না হওয়ায় সপ্তমবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জে ৪০০ একর জমির ওপর শিল্পপার্ক স্থাপনের কথা রয়েছে। এতে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। সেই সঙ্গে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য আছে। কিন্তু এখন শিল্পপার্কই প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেক দূরেই রয়েছে বিসিক। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া শেষ করতেই প্রায় ৫ বছর সময় গেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প এলাকায় ক্রসবার নির্মাণ, বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্র সংগ্রহসহ স্থানীয় নানা জটিলতা ছিল। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এসব জটিলতা কাটাতেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ৯ বছর সময় পার হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনা মহামারির সময় লকডাউনের কাজ বন্ধ ছিল।

এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। সে সময় গভীর নলকূপ স্থাপন ও পাম্প হাউজ নির্মাণে ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ব্যত্যয় খুঁজে পেয়েছে। ফলে এ বিষয়ে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে সুপারিশ দিয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের বিপরীতে অর্থবছরভিত্তিক ব্যয় অর্থের অডিট সম্পন্ন করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রকল্পটি শেষ করার শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি।