ঢাকা ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অষ্টগ্রামের লম্বা সুস্বাদু মুরালি যা ৭ ইঞ্চি লম্বা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬
  • ৮৩৩ বার

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে গুড় ও ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় সাত ইঞ্চি লম্বা মুরালি। সুস্বাদু এই মুরালি এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রিয় মিষ্টান্ন।

উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ইকরদিয়া গ্রাম। ইকরদিয়া গ্রাম লোক মুখে ইকরদিয়া লঞ্চঘাট হিসেবে পরিচিত। ইকরদিয়া লঞ্চঘাটে প্রতি বছরের সাত মাসের জন্য তৈরি হয় ছোট একটি বাজার। কার্তিক থেকে বৈশাখ এ সাত মাস হাওরের বিভিন্ন এলাকার মতো অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া ঘাট শুকনা থাকে। জৈষ্ঠ্য মাস শুরু হলেই হাওরে পানি আসতে শুরু করে।

তখন হাওরের ভাসমান গ্রাম ছাড়া জমিজমা সবকিছুই পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই এ সাত মাসের জন্য ইকরদিয়া ঘাটে ৫০ থেকে ৬০টি দোকান নিয়ে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করেন। পানি এলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয় তাদের।

ইকরদিয়া বাজারের প্রসাধনী, ছোট মাছের আড়ৎসহ বিভিন্ন দোকানের মধ্যে চারটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। এর মধ্যে লম্বা মুরালি তৈরি হয় লিটন দাস ও গোলাম হোসেনের দোকানে। এই মুরালির জন্য দু’টি দোকানে ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে।

প্রতি সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বুধবার ওই দু’জনের দোকানে ৫০ কেজি থেকে ৬০ কেজি করে মুরালি বিক্রি হয়। সাত ইঞ্চি লম্বা মুরালির দাম পড়বে কেজি প্রতি ৯০ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার নোয়াগাঁওয়ের গোবিন্দ চন্দ্র দাস নামে এক ক্রেতা বলেন, ইকরদিয়া ঘাটে এলে দুই/তিন কেজি মুরালি কিনে নিয়ে যেতে হয়। সাইজে বড় হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা এই মুরালি খুব পছন্দ করে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা আটটি ইউনিয়নের মানুষ ছাড়াও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ লম্বা মুরালি কিনতে এখানে ছুটে আসে।

মুরালি বিক্রেতা লিটন দাস ও গোলাম হোসেন বলেন, মুরালি লম্বা হওয়ায় এর চাহিদা আছে। কিন্তু গুড় ও ময়দার দাম বেশি হওয়ায় মুরালি বিক্রি করে লাভ তেমন থাকে না। আমাদের বাজার যদি ১২ মাস স্থায়ী হতো তবে অনেক মুরালি বিক্রি হতো।

স্থানীয়রা জানান, মুরোলি শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঁশি। বাঁশি সাধারণত ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। ধারণা করা হয়, মুরোলি থেকে খাদ্যদ্রব্য মুরালির উৎপত্তি। তবে কবে থেকে এই অঞ্চলে মুরালি তৈরি শুরু হয়েছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন তা বলতে পারে না।

বিক্রেতারা জানান, লবণ, তেল, পানি ও ময়দা মেখে খামির করে ঘণ্টা দেড়কে ভেজা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। তারপর ময়দার খামির বেলে বড় মোটা রুটির মতো বানিয়ে ছুরি দিয়ে সাত/আট ইঞ্চি করে কাটা হয়। এরপর কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে সেগুলো ভেজে রাখা হয়। পরে গুড় জ্বাল দিয়ে তাতে ময়দার ভাজা টুকরোগুলো ১০/১৫ মিনিট জ্বালানো হয়। এরপর সেগুলো উঠিয়ে চিনির ঘন শিরায় কিছুক্ষণ রেখে তুলে ফেললেই হয়ে যায় সুস্বাদু মুরালি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অষ্টগ্রামের লম্বা সুস্বাদু মুরালি যা ৭ ইঞ্চি লম্বা

আপডেট টাইম : ০১:৫৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে গুড় ও ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় সাত ইঞ্চি লম্বা মুরালি। সুস্বাদু এই মুরালি এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রিয় মিষ্টান্ন।

উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ইকরদিয়া গ্রাম। ইকরদিয়া গ্রাম লোক মুখে ইকরদিয়া লঞ্চঘাট হিসেবে পরিচিত। ইকরদিয়া লঞ্চঘাটে প্রতি বছরের সাত মাসের জন্য তৈরি হয় ছোট একটি বাজার। কার্তিক থেকে বৈশাখ এ সাত মাস হাওরের বিভিন্ন এলাকার মতো অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া ঘাট শুকনা থাকে। জৈষ্ঠ্য মাস শুরু হলেই হাওরে পানি আসতে শুরু করে।

তখন হাওরের ভাসমান গ্রাম ছাড়া জমিজমা সবকিছুই পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই এ সাত মাসের জন্য ইকরদিয়া ঘাটে ৫০ থেকে ৬০টি দোকান নিয়ে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করেন। পানি এলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয় তাদের।

ইকরদিয়া বাজারের প্রসাধনী, ছোট মাছের আড়ৎসহ বিভিন্ন দোকানের মধ্যে চারটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। এর মধ্যে লম্বা মুরালি তৈরি হয় লিটন দাস ও গোলাম হোসেনের দোকানে। এই মুরালির জন্য দু’টি দোকানে ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে।

প্রতি সপ্তাহের সোম, মঙ্গল ও বুধবার ওই দু’জনের দোকানে ৫০ কেজি থেকে ৬০ কেজি করে মুরালি বিক্রি হয়। সাত ইঞ্চি লম্বা মুরালির দাম পড়বে কেজি প্রতি ৯০ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার নোয়াগাঁওয়ের গোবিন্দ চন্দ্র দাস নামে এক ক্রেতা বলেন, ইকরদিয়া ঘাটে এলে দুই/তিন কেজি মুরালি কিনে নিয়ে যেতে হয়। সাইজে বড় হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা এই মুরালি খুব পছন্দ করে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা আটটি ইউনিয়নের মানুষ ছাড়াও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ লম্বা মুরালি কিনতে এখানে ছুটে আসে।

মুরালি বিক্রেতা লিটন দাস ও গোলাম হোসেন বলেন, মুরালি লম্বা হওয়ায় এর চাহিদা আছে। কিন্তু গুড় ও ময়দার দাম বেশি হওয়ায় মুরালি বিক্রি করে লাভ তেমন থাকে না। আমাদের বাজার যদি ১২ মাস স্থায়ী হতো তবে অনেক মুরালি বিক্রি হতো।

স্থানীয়রা জানান, মুরোলি শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঁশি। বাঁশি সাধারণত ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। ধারণা করা হয়, মুরোলি থেকে খাদ্যদ্রব্য মুরালির উৎপত্তি। তবে কবে থেকে এই অঞ্চলে মুরালি তৈরি শুরু হয়েছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন তা বলতে পারে না।

বিক্রেতারা জানান, লবণ, তেল, পানি ও ময়দা মেখে খামির করে ঘণ্টা দেড়কে ভেজা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। তারপর ময়দার খামির বেলে বড় মোটা রুটির মতো বানিয়ে ছুরি দিয়ে সাত/আট ইঞ্চি করে কাটা হয়। এরপর কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে সেগুলো ভেজে রাখা হয়। পরে গুড় জ্বাল দিয়ে তাতে ময়দার ভাজা টুকরোগুলো ১০/১৫ মিনিট জ্বালানো হয়। এরপর সেগুলো উঠিয়ে চিনির ঘন শিরায় কিছুক্ষণ রেখে তুলে ফেললেই হয়ে যায় সুস্বাদু মুরালি।