আর তিনদিন পরই ভারতে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অতিথিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রুপদি মুর্মু। সেই আমন্ত্রণপত্রের দুটি শব্দ নিয়ে দেশটিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সাধারণত এই ধরনের আমন্ত্রণপত্রে এতদিন ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি’ (President of India) শব্দ ব্যবহার করা হলেও এবারই প্রথম জি-২০ জোটের সম্মেলনে যোগদানকারী বিদেশি নেতাদের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ (President of Bharat) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আলোচনা তুলেছেন যে, ভারতের ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ার বদলে ভারত (Bharat) করা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশটির সংসদের পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম পরিবর্তন করে ভারত (Bharat) করার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নামকরণের এই পদক্ষেপকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে অভিহিত করছে দেশটির গণমাধ্যম। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০ জোটের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ অন্যান্যরা অংশ নেবেন।
দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি-২০ সম্মেলনের বিদেশি নেতা ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি পত্র দিয়েছেন। সেই পত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার (President of India) পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত (President of Bharat) লিখেছেন।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য ভারতের নামকরণের প্রথম পরিবর্তন। ‘ভারত’ (Bharat) শব্দটি সংবিধানেও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। দেশটির সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ভারত (India) মানেই ‘ভারত’ (Bharat); যা রাজ্যগুলোর একটি ইউনিয়ন হবে।
ভারতের জি-২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব, হাজার বছরের সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য ‘ভারত (Bharat), দ্য মাদার অব ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা হস্তান্তর করছে দেশটি। এই পুস্তিকাতেও ‘ইন্ডিয়ার’ (India) জায়গায় ‘ভারত’ (Bharat) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই পুস্তিকাটির ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘ভারত অর্থাৎ ভারতে শাসনের ক্ষেত্রে জনগণের সম্মতি নেওয়া ইতিহাসের প্রথম দিক থেকেই জীবনের অংশ হয়ে এসেছে। দেশের সরকারি নাম ভারত (Bharat)। এটি সংবিধানের পাশাপাশি ১৯৪৬-৪৮ সালের আলোচনায়ও উল্লেখ করা হয়েছে।’
নামের এই বড় পরিবর্তনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রথমে উল্লাস করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি লিখেছেন, ভারত (Bharat) প্রজাতন্ত্র। আমি খুশি ও গর্বিত যে আমাদের সভ্যতা সাহসের সাথে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে চলছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, এই পদক্ষেপ অনেক আগেই নেওয়ার কথা ছিল। এটা আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। এতে মনে দারুণ তৃপ্তি পাওয়া যায়। ‘ভারত’ (Bharat) আমাদের পরিচয়। এতে আমরা গর্বিত। রাষ্ট্রপতি ভারতকে (Bharat) অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার এটাই সবচেয়ে বড় এজাহার।
বিজেপি নেতারা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পত্র নিয়ে দেশটির বিরোধীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা এই পদক্ষেপকে ২০২৪ সালে বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের ইনডিয়া (INDIA) বা ভারতীয় জাতীয় উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক জোটের নামকে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস নাউ।