হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় দুই বছর বিরতির পর কৌশলগত সংলাপে বসছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবারের সংলাপ হতে যাচ্ছে। সংলাপে দুই দেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত মিলেছে। আলোচনায় লন্ডনের দিক থেকে স্থান পেতে পারে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হতে যাওয়া সংলাপ নিয়ে রোববার (২৭ আগস্ট) পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনর নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সঙ্গে সংলাপের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সংলাপে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টন নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে থাকা ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের চতুর্থ সংলাপ লন্ডনে হয়েছিল। সেসময় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে অপরাধীদের যেন বিচারের আওতায় আনা যায় এ নিয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছিল। দুই দেশ এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি করতে রাজি হয়েছিল। চুক্তিটি করার বিষয়ে সংলাপে তাগিদ দেওয়া হতে পারে।
একাধিক মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীন লন্ডনে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। পলাতক থাকায় তার রায় কার্যকর করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা রাখার মামলায় সাজা হওয়া সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের কথা বলা হচ্ছে।
ঢাকার এক কূটনীতিক সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি নাগরিক দেশবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি করা গেলে এসব অপপ্রচারকারীদের দেশে ফিরিয়ে শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে।
সংলাপে আলোচনার বিষয়ে কূটনীতিকরা বলছেন, উভয়পক্ষ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, রোহিঙ্গা ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনার টেবিলে থাকবে। এছাড়া বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থনের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় থাকতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা চলছে। এমন সময়ে হতে হওয়া সংলাপে লন্ডনের দিক থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা দেবে যুক্তরাজ্য। আর ঢাকার পক্ষ থেকে লন্ডনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া লন্ডন মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শ্রম অধিকার, বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে জোর দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-লন্ডনের চতুর্থ কৌশলগত সংলাপ ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।