শুধু থাইল্যান্ড নয়, এশিয়া এবং বিশ্ব রাজনীতিতে আজকের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে দেশটির নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। ১৭ বছর আগে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। এই সময়টায় তিনি আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থান করেছিলেন।
গত ১৭ বছর প্রায় ২০ এর অধিক সময় থাইল্যান্ডে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু থাইল্যান্ডের সমসাময়িক রাজনীতির প্রেক্ষাপট কখনোই তার পক্ষে ছিল না। তবে কি এমন হলো যে এবার দেশে ফিরতে পারলেন? স্থানীয় জনগণ চলমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমীকরণ, রাজ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতার পাশাপাশি আরো একজনের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করছেন থাকসিনের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সহজাতকরণে।
থাকসিন পরিবার থাইল্যান্ডের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবার। এই ব্যবসায়িক পরিবার থেকে এসেছে এখন পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী। এবং পরিবারটির সবচেয়ে বেশি মানুষ নির্বাসিত হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই ২০২২ সালের মাঝামাঝি রাজনীতিতে আবির্ভূত হন থাকসিনের কনিষ্ঠ কন্যা পাইতংত্রাং সিনাওয়াত্রা, যার পারিবারিক নাম উং ইং, এবং এই নামেই বেশি পরিচিত
গত নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগেই ৩৬ বছর বয়সী উং ইং দ্বিতীয়বারের মতো মা হয়েছেন। দেশটির সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চুলালংকন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষে অন্য দুই ভাইবোনের মতো তিনিও ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। রাজনীতির চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইফ স্টাইল নিয়ে ছবি প্রকাশ করা এবং ভ্রমণের ছবি প্রকাশ করাকেতই পারদর্শিতা দেখা যেত।
সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি পরিবারের ছোট। তাই শৈশব থেকেই নিজেকে ছোট হিসেবেই বিবেচনা করতাম। কিন্তু আমি যখন ব্যাংককের বাইরে ঘুরতে যাই, থাই মানুষের দূরাবস্থা আমাকে ব্যাথিত করে। আমার মনে হয় থাই মানুষের এখন এগিয়ে যেতে হবে। তারা অনেক কঠিন জীবন পার করছে।
২০২২ সালে বাবা থাকসিনের প্রতিষ্ঠিত ফিউওয়া থাই পার্টিতে যোগদান করেন উং ইং। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার রাজনৈতিক উপস্থিতি, বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। সর্বশেষ, নির্বাচনের পূর্বে ফিউওয়া থাই পার্টি থেকে যে তিনজনরে নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করা হয় তার মধ্যেও রয়েছেন উং ইং। তবে অবশ্য পার্টি থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে স্রেথা থাবসিনকে মনোনীত করা হয়েছে
বাবাকে দেশে ফেরানোর জন্যই কি উং ইং রাজনীতিতে থাকসিন পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন? এমন প্রশ্নের জবাব সবসময়ই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। বরং কোন রাজনীতিবিদ দুর্নীতি করলে দেশেই তার শাস্তি হবে, কিন্তু বিদেশে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে কেন? কারন দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা নেই। বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি সুবিচার পাবেন।
বাবাকে নিয়ে উং ইংয়ের এই ধরনের নতুন ধারণা এবং যুক্তি দেশের জনগণকে প্রভাবিত করেছে। সর্বশেষ নির্বাচনে ১৪১ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলটি এখন সরকারও গঠন করতে যাচ্ছে। কারণ সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মিডিয়ায় মালিকানা থাকার অভিযোগে নির্বাচনে জয়ী মুভিং ফরোয়ার্ড পার্টির মনোনীত পিথা এখন আর সরকার গঠন করতে পারছে না।
শুধুমাত্র থাকসিনের কন্যা হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায়ে যে ধরনের বুলিং এবং একচোখা দৃষ্টির শিকার হতে হয়েছে উং ইংকে সেসব ঘটনাও এবারের জনমত গঠনে এনজাইম হিসেবে কাজ করেছে। ভবিষ্যতে থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে উং ইংয়ের সমর্থনও তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
বাবার জন্য রাজনীতিতে আসার যে ব্যখ্যা সবসময় উং ইং অস্বীকার করে এসেছেন, সেটা কিন্তু এখন আর অস্বীকার করার উপায় থাকলো না। এমনকি দেশের জনগণের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করছে, যে এই সবকিছুই করা হয়েছে আসলে থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে দেশে ফেরানোর জন্য। যেটায় সফল হয়েছে উং ইং।