ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান সেনারা এখন দিনমজুর করছেন খনি শ্রমিকের কাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫২:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩
  • ৭৩ বার

আফগানিস্তানের সেনারা এখন দিনমজুর। অপ্রত্যাশিত জীবনের পরিণতি মেনে নিয়ে করছেন খনি শ্রমিকের কাজ। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর চাকরি হারান হাজার হাজার সৈনিক। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঝুঁকে পড়ে তাদের নিয়তি।

বেকারত্বের জীবন থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বেছে নেন রত্নপাথর খননের কাজ। জীবিকার তাগিদে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নুরিস্তান প্রদেশের রাজধানী পারুন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি খনিতে কাজ করে দেশটির সাবেক সেনাদের বড় একটি দল।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির (এনডিএস) সৈনিক আব্দুল কাদের আবিদ বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে খনিতে কাজ করা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স (এএনএসএফ) বা সরকারে কর্মচারী। কেউ পুলিশের সঙ্গে কাজ করতেন। কেউ আবার ছিলেন সেনাবাহিনীতে। এখন তারাই খনিশ্রমিক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বেছে নিতে হয়েছে এ কাজ।

যদিও অনেক সাবেক সেনা খননের কাজটি করতে প্রথম প্রথম দ্বিধাবোধ করতেন। কিন্তু উপায় নেই। রত্ন খনির খাতটি ছোট হলেও আবিদের মতো স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে এমন একটি দেশে যেখানে তালেবান শাসনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় জর্জরিত হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষের জীবন।

আবিদের মতো চাকরিহীন মানুষের সংকট থেকে বাঁচাতে রত্ন খননের কাজ আয়ের পথ তৈরি করে দেয়। নুরিস্তান ও কুনারজুড়ে আফগান সামরিক বাহিনীতে কয়েক বছর অতিবাহিত করার পর এ কাজ আবিদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে।

তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে সাহায্য করে। এখানে যে পাথর দুই রঙের হয় সেগুলো প্রায়ই সবচেয়ে মূল্যবান হয়। নীল ও সবুজ অথবা সবুজ ও গোলাপি রঙের মিশ্রণের পাথরগুলো সবচেয়ে মূল্যবান।

খুব সমৃদ্ধ সবুজ রঙের পাথর বিক্রি হয় ৩ লাখ (প্রায় ৩,৫৩০ ডলার) আফগানিতে। খনি থেকে পাওয়া মুনাফা শুধু খনিশ্রমিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বাইরের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও চলে ভাগবণ্টন। লাভের কিছু অংশ দিতে হয় তালেবানকেও। তালেবনরা সাবেক  এএনএসএফ সদস্যসহ অনেককেই কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে উপার্জনের কিছু অংশ ট্যাক্স হিসাবে দেওয়ার শর্তজুড়ে দেয়।

আফগানিস্তানে রত্ন খনির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সময়কাল থেকে প্রায় ২৩০০ বছর বিস্তৃত। দশ শতকের মধ্যে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের রত্ন খনিগুলো তাজিকিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিখ্যাত ছিল। নামিদামি পাথরের মধ্যে ছিল-রুবি, নীলকান্তমণি, ট্যুরমালাইন, ল্যাপিস, লাজুলি ও পোখরাজ। সম্প্রতি নুরিস্তান, কুনার ও বাদাখশানের উত্তর-পূর্ব প্রদেশে রত্ন খনিগুলো তালেবানের আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে।

রত্ন ব্যবসা আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উৎপাদনের একটি বিশাল অংশে পরিণত হয়। বিশাল আয়ের সঙ্গে এ কাজে ভয়াবহ বিপদ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। টানেল ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ ফিউজের কারণে বিস্ফোরণও ঘটে থাকে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বে শ্রমিকরা ছুটে চলছেন খনির দিকে। কারণ, এটিই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আফগান সেনারা এখন দিনমজুর করছেন খনি শ্রমিকের কাজ

আপডেট টাইম : ০৮:৫২:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩

আফগানিস্তানের সেনারা এখন দিনমজুর। অপ্রত্যাশিত জীবনের পরিণতি মেনে নিয়ে করছেন খনি শ্রমিকের কাজ। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর চাকরি হারান হাজার হাজার সৈনিক। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঝুঁকে পড়ে তাদের নিয়তি।

বেকারত্বের জীবন থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বেছে নেন রত্নপাথর খননের কাজ। জীবিকার তাগিদে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নুরিস্তান প্রদেশের রাজধানী পারুন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি খনিতে কাজ করে দেশটির সাবেক সেনাদের বড় একটি দল।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির (এনডিএস) সৈনিক আব্দুল কাদের আবিদ বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে খনিতে কাজ করা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স (এএনএসএফ) বা সরকারে কর্মচারী। কেউ পুলিশের সঙ্গে কাজ করতেন। কেউ আবার ছিলেন সেনাবাহিনীতে। এখন তারাই খনিশ্রমিক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বেছে নিতে হয়েছে এ কাজ।

যদিও অনেক সাবেক সেনা খননের কাজটি করতে প্রথম প্রথম দ্বিধাবোধ করতেন। কিন্তু উপায় নেই। রত্ন খনির খাতটি ছোট হলেও আবিদের মতো স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে এমন একটি দেশে যেখানে তালেবান শাসনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতায় জর্জরিত হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষের জীবন।

আবিদের মতো চাকরিহীন মানুষের সংকট থেকে বাঁচাতে রত্ন খননের কাজ আয়ের পথ তৈরি করে দেয়। নুরিস্তান ও কুনারজুড়ে আফগান সামরিক বাহিনীতে কয়েক বছর অতিবাহিত করার পর এ কাজ আবিদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে।

তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে সাহায্য করে। এখানে যে পাথর দুই রঙের হয় সেগুলো প্রায়ই সবচেয়ে মূল্যবান হয়। নীল ও সবুজ অথবা সবুজ ও গোলাপি রঙের মিশ্রণের পাথরগুলো সবচেয়ে মূল্যবান।

খুব সমৃদ্ধ সবুজ রঙের পাথর বিক্রি হয় ৩ লাখ (প্রায় ৩,৫৩০ ডলার) আফগানিতে। খনি থেকে পাওয়া মুনাফা শুধু খনিশ্রমিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বাইরের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও চলে ভাগবণ্টন। লাভের কিছু অংশ দিতে হয় তালেবানকেও। তালেবনরা সাবেক  এএনএসএফ সদস্যসহ অনেককেই কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে উপার্জনের কিছু অংশ ট্যাক্স হিসাবে দেওয়ার শর্তজুড়ে দেয়।

আফগানিস্তানে রত্ন খনির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সময়কাল থেকে প্রায় ২৩০০ বছর বিস্তৃত। দশ শতকের মধ্যে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের রত্ন খনিগুলো তাজিকিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিখ্যাত ছিল। নামিদামি পাথরের মধ্যে ছিল-রুবি, নীলকান্তমণি, ট্যুরমালাইন, ল্যাপিস, লাজুলি ও পোখরাজ। সম্প্রতি নুরিস্তান, কুনার ও বাদাখশানের উত্তর-পূর্ব প্রদেশে রত্ন খনিগুলো তালেবানের আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে।

রত্ন ব্যবসা আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উৎপাদনের একটি বিশাল অংশে পরিণত হয়। বিশাল আয়ের সঙ্গে এ কাজে ভয়াবহ বিপদ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। টানেল ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ ফিউজের কারণে বিস্ফোরণও ঘটে থাকে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বে শ্রমিকরা ছুটে চলছেন খনির দিকে। কারণ, এটিই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস।