ঢাকা ১০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাঠে খরায় পুড়ছে বৃষ্টির দেখা নেই, আমন রোপণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
  • ১০৪ বার

বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চললেও গত বছরের তুলনায় এবার আমন রোপণের সময় আশানুরূপ বৃষ্টির পানি পাননি উত্তরের কৃষকরা। পানির অভাবে তাই বেশিরভাগ জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে। অনেক কৃষক চড়া খরচে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন বলে জানা গেছে।  তবে, প্রান্তিক কৃষকরা তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে।

কৃষি বিভাগের দাবি, রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১২-১৫ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল, কল্যানী ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার খাল-বিলে পানি নেই। হাজার হাজার কৃষক পানির অভাবে আমন চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানি না থাকায় সময়ক্ষেপণ না করে শ্যালোমেশিনে টানা ৮-১০ ঘণ্টা জমিতে পানির সেচ দিয়ে এক বিঘার এক খণ্ড জমি হাল-চাষ করে চারা রোপণের উপযোগী করা যায়। এতে সেচের জন্য প্রতি ঘণ্টায় গুনতে হয় ১২০ টাকা। খরচ সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ নির্ভর সেচে লোডশেডিংয়েও আছে চরম বিরম্বনা।

ডিজেল চালিত সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করার সময় কথা হয় কল্যানী ইউনিয়নের বিহারী গ্রামের চাষি জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতি এখন বিরূপ আচারণ করছে। বর্ষা মৌসুমে আমাদের যেসব জমিতে হাটু পানি থাকার কথা সেখানে এখন আমাদের ২৫ শতকের দোনে প্রায় ১৫শ টাকার সেচ খরচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করা লাগছে। গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির আশায় অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আজ জমি প্রস্তুত করছি। এতে বিঘা প্রতি সেচ এবং চাষে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ যাচ্ছে।’

একই গ্রামের অপর কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ডিজেল সেচে খরচ অনেক বেশি। বিদ্যূৎ সেচ দিয়ে জমি ভিজাচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করায় ভেজা জমি পুনরায় শুকিয়ে যাচ্ছে। আকাশের পানি না হলে চরম বিপাকে পড়তে হবে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রংপুরে এবার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সম্পূরক সেচসহ বিভিন্ন উপায়ে চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘আমন মৌসুমের ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই রোপণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। তবে অতিরিক্ত খড়ার কারণে কৃষকের জমি প্রস্তুত করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক সম্পূরক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করে ধানের চারা রোপন করছেন। এতে তাদের খরচ অনেক হচ্ছে। ’ কৃষকদের বিচলিত না হয়ে আরও ২-৪ দিন বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে, রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত জুনের তুলনায় জুলাই মাসে বৃষ্টি অনেক কম হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, টানা বৃষ্টি না হলেও আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে কোথাও কোথাও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মাঠে খরায় পুড়ছে বৃষ্টির দেখা নেই, আমন রোপণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

আপডেট টাইম : ১১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চললেও গত বছরের তুলনায় এবার আমন রোপণের সময় আশানুরূপ বৃষ্টির পানি পাননি উত্তরের কৃষকরা। পানির অভাবে তাই বেশিরভাগ জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে। অনেক কৃষক চড়া খরচে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন বলে জানা গেছে।  তবে, প্রান্তিক কৃষকরা তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে।

কৃষি বিভাগের দাবি, রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১২-১৫ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল, কল্যানী ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার খাল-বিলে পানি নেই। হাজার হাজার কৃষক পানির অভাবে আমন চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানি না থাকায় সময়ক্ষেপণ না করে শ্যালোমেশিনে টানা ৮-১০ ঘণ্টা জমিতে পানির সেচ দিয়ে এক বিঘার এক খণ্ড জমি হাল-চাষ করে চারা রোপণের উপযোগী করা যায়। এতে সেচের জন্য প্রতি ঘণ্টায় গুনতে হয় ১২০ টাকা। খরচ সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ নির্ভর সেচে লোডশেডিংয়েও আছে চরম বিরম্বনা।

ডিজেল চালিত সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করার সময় কথা হয় কল্যানী ইউনিয়নের বিহারী গ্রামের চাষি জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতি এখন বিরূপ আচারণ করছে। বর্ষা মৌসুমে আমাদের যেসব জমিতে হাটু পানি থাকার কথা সেখানে এখন আমাদের ২৫ শতকের দোনে প্রায় ১৫শ টাকার সেচ খরচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করা লাগছে। গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির আশায় অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আজ জমি প্রস্তুত করছি। এতে বিঘা প্রতি সেচ এবং চাষে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ যাচ্ছে।’

একই গ্রামের অপর কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ডিজেল সেচে খরচ অনেক বেশি। বিদ্যূৎ সেচ দিয়ে জমি ভিজাচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করায় ভেজা জমি পুনরায় শুকিয়ে যাচ্ছে। আকাশের পানি না হলে চরম বিপাকে পড়তে হবে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রংপুরে এবার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সম্পূরক সেচসহ বিভিন্ন উপায়ে চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘আমন মৌসুমের ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই রোপণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। তবে অতিরিক্ত খড়ার কারণে কৃষকের জমি প্রস্তুত করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক সম্পূরক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করে ধানের চারা রোপন করছেন। এতে তাদের খরচ অনেক হচ্ছে। ’ কৃষকদের বিচলিত না হয়ে আরও ২-৪ দিন বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে, রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত জুনের তুলনায় জুলাই মাসে বৃষ্টি অনেক কম হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, টানা বৃষ্টি না হলেও আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে কোথাও কোথাও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।