শেষ চার ওভারের অসাধারণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রাখলেন বোলাররা। রান তাড়ায় দায়িত্বশীল ইনিংসে দলকে পথ দেখালেন শামিমা সুলতানা। শেষে খানিকটা শঙ্কা জাগলেও এবার আর ভুল করল না বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল স্বাগতিকরা। মিরপুরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারত নারী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৪ উইকেটে। শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ২০ ওভারে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে করে ১০২ রান। শেষ চার ওভারে স্রফে ১২ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। জবাবে নিগার সুলতানার দল লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ১০ বল হাতে রেখে। ৪৬ বলে ৩ চারে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন শামিমা। দারুণ দুটি ক্যামিও ইনিংসে অবদান রাখেন সুলতানা খাতুন ও নাহিদা আক্তার। সুলতানা বল হাতেও ১৭ রানে নেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার অবশ্য লেগ স্পিনার রাবেয়া খান। ভারতের বিপক্ষে ১৬ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় জয় এটি। আগের দুটিই ছিল ২০১৮ এশিয়া কাপ জয়ের পথে। প্রথম দুই ম্যাচের জয়ে ভারত অবশ্য সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। চিত্রটা ভিন্নও হতে পারত। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৫ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৮ বলে ১০ রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে অবিশ্বাস্যভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার রান তাড়ায় দ্বিতীয় বলে দীপ্তি শর্মাকে চার মেরে শুরু করেন সাথী রানি। তবে পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি ১০ রান করে। সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া দিলারা আক্তার ৭ বল খেলে করতে পারেন স্রফে ১ রান। দলকে এগিয়ে নেন এরপর শামিমা ও নিগার। দুজনে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। দেবিকা বিদ্যার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে আলগা শটে নিগার উইকেট বিলিয়ে আসেন ১৪ রান করে। টিকতে পারেননি স্বর্ণা আক্তার। তিনিও অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লগ সুইপ করে ক্যাচ দেন ডিপ মিডউইকেটে। সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যান শামিমা। ২৪ বলে দরকার যখন আর ১৮ রান, পরপর দুই বলে এই দুজনের বিদায়ে আবার তীরে এসে তরী ডোবার শঙ্কা জাগে বাংলাদেশ শিবিরে। ৮ বলে ১২ রান করে ক্যাচ দেন সুলতানা। শামিমা হন রান আউট। তবে এবার আর তালগোল পাকায়নি দল। রিতু মনিকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন নাহিদা। ৬ বলে একটি চারে ১২ রান করেন নাহিদা। এর আগে ভারত এ দিনও ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস জিতে। দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম বলেই স্মৃতি মান্ধানাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সুলতানা। এই অফ স্পিনার নিজের পরের ওভারে বিদায় করে দেন আরেক ওপেনার শেফালি ভার্মাকেও। ২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ভারতকে এগিয়ে নেন জেমিমা রদ্রিগেস ও হারমানপ্রিত কৌর। দুই জনে গড়েন ৪৫ রানের জুটি। জেমিমাকে (২৬ বলে ২৮) স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ইনিংস সেরা জুটি ভাঙেন স্বর্ণা। এরপর হারমানপ্রিত ও ইয়াস্তিকা ভাটিয়া যেভাবে খেলছিলেন, ভারতের রান ১২০ ছাড়িয়ে যেতে পারত অনায়াসে। তা হতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। সপ্তদশ ওভারে ফাহিমার বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন হারমানপ্রিত। ৪১ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন ভারত অধিনায়ক। ইয়াস্তিকাকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরা রাবেয়া শেষ ওভারে নেন আরও ২টি উইকেট। শেষের আগের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন নাহিদা। যার একটি রান আউট। শেষের দারুণ বোলিংয়ের ওই পথ ধরেই শেষ পর্যন্ত জয়ের উল্লাসে ভাসল বাংলাদেশ। একই মাঠে আগামী রোববার থেকে দুই দল খেলবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১০২/৯ (স্মৃতি ১, শেফালি ১১, জেমিমা ২৮, হারমানপ্রিত ৪০, ইয়াস্তিকা ১২, আমানজত ২, পূজা ২, দীপ্তি ৪, মানি ১, বিদ্দা ১*; মারুফা ৩-০-১৫-০, নাহিদা ৪-০-১৭-২, সুলতানা ৪-০-২৩-১, ফাহিমা ৪-০-২৫-১, রাবেয়া ৪-০-১৬-৩, স্বর্ণা ১-০-৬-১)
বাংলাদেশ: ১৮.২ ওভারে ১০৩/৬ (সাথী ১০, শামিমা ৪২, দিলারা ১, নিগার ১৪, স্বর্ণা ২, সুলতানা ১২, রিতু ৭*, নাহিদা ১০*; দীপ্তি ৩.২-০-১৫-০, মানি ৪-০-২৮-২, রাশি ৪-০-৩১-০, বিদ্যা ৪-০-১৬-২, শেফালি ১-০-৪-০, জেমিমা ২-০-৯-১)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: শামিমা সুলতানা