ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরু কেনার সময় ওজন মাপার সহজ পদ্ধতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
  • ১৩২ বার

ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম কোরবানির পশুর হাটগুলো। সবাই নিজ নিজ পছন্দ এবং চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনছেন। কেনার সময় গরুর ওজন জানা জরুরি। যারা মোটামুটিভাবে প্রতিনিয়ত কিনে থাকেন তারা অবশ্য কিছুটা ধারণা করতে পারেন। কিন্তু অনেকেই গরুর সঠিক ওজন নির্ণয় করতে পারেন না।

ওজন হিসাব করেই গরুর দাম হাঁকাতে হয়। আপনি যত নিখুঁতভাবে ওজন নির্ধারণ করতে পারবেন, তত সহজে সাশ্রয়ী মূল্যে পশু ক্রয় করতে পারবেন। মোট যা ওজন হবে, তার ৬০-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত মাংস হবে। তাই ওজন নেওয়ার উপায় জেনে রাখা ভালো।

ওজন মাপার প্রধানত ২টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রথমটি হলো ডিজিটাল স্কেল বা মিটার। এর মাধ্যমে সহজেই ওজন নেয়া যায়। এটির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। সুবিধা হলো, সবচেয়ে কম সময়ে ওজন মাপা যায় এবং ওজনের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অন্যদিকে অসুবিধা হলো, অপ্রাপ্তি। এই মিটার সব জায়গায় থাকে না। বড় ধরনের স্কেল না হলে গরুর ওজন নেওয়া সম্ভব হয় না।

আরেকটি পদ্ধতি হলো, ফিতা দিয়ে মেপে ওজন নির্ণয় করা। মনে প্রশ্ন আসতে পারে ফিতা দিয়ে ওজন মাপা যায় নাকি? ফিতা তো দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপার জন্য। তবে এই পরিমাপকে নির্দিষ্ট গাণিতিক সূত্রে প্রয়োগ করে কম সময়ে ওজন নির্ধারণ করা যায়।

ফিতা পদ্ধতিতে ওজন মাপতে যা প্রয়োজন

* মাপার ফিতা বা স্কেল টেপ।

* ক্যালকুলেটর।

* একটি সূত্র মনে রাখা।

পদ্ধতি: যে গরুর ওজন নিতে চাচ্ছেন তাকে ভালোভাবে সোজা করে দাঁড় করাতে হবে। তারপর ফিতা দিয়ে প্রথম তার লম্বা দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এজন্য গরুর লেজের গোড়া থেকে শুরু করে সামনের পায়ের জোড়ার গিট পর্যন্ত ফিতা ধরে দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এরপর সামনের দুই পায়ের কাছ দিয়ে ফিতার সাহায্যে বুকের বেড় কত ইঞ্চি তা পরিমাপ করতে হবে। এটি প্রস্থ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তা সঠিকভাবে লিখে রাখতে হবে। এবার সূত্রে প্রয়োগ করে দ্রুত ওজন নির্ধারণ করতে পারবেন।

তবে খুব সর্তকতার সঙ্গে মাপতে হবে। গরুর মালিকের কাছে জেনে নেওয়া ভালো যে, গরু লাথি মারে বা উত্তেজিত হয় কিনা। অবশ্যই গরুর মালিককে দিয়েই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা এবং সঠিক ওজন পাওয়া সহজ হবে।

গরু-ছাগলের ওজন মাপার সূত্র

গরুর মোট ওজন= গরুর দৈর্ঘ্য X বুকের বেড় X বুকের বেড়/৬৬০।

ধরা যাক, গরুটির দৈর্ঘ্য ৭০ ইঞ্চি এবং বেড় ৬০ ইঞ্চি। তাহলে গরুর আনুমানিক ওজন হবে (৭০X৬০X৬০)/৬৬০ = ৩৮১ কেজি (উল্লেখ্য, প্রধান সূত্রে পাউন্ডে হিসাব করা হয়েছে কিন্তু আমরা হিসাবের সুবিধার জন্য কেজিতে রূপান্তর করে ৬৬০ দ্বারা ভাগ করেছি)। এই সূত্রের সাহায্যে যে ওজন পাওয়া যাবে তা হলো গরুর নাড়িভুড়ি সহ সবকিছুর ওজন। ছাগলের ক্ষেত্রে একই সূত্রের ব্যবহার করে ওজন নির্ণয় করা যায়।

মোট ওজন থেকে মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ পদ্ধতি

অল্প সময়ে হাটের মধ্যে আপনি এই সূত্র ব্যবহার করে যা ওজন পেয়েছেন তার ৫৫-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওজনই হবে পশুটির মাংসের ওজন। এটি নির্ভর করবে গরুর শারীরিক গঠনের উপর, পেট খুব বেশি বড় না হলে অধিকাংশ গরুর শতকরা ৬৫ শতাংশ ওজনই মাংস হয়ে থাকে।

এই সূত্রের মাধ্যমে ওজন নির্ধারণ সাধারণত ৯৫-১০০ ভাগই সঠিক হয়ে থাকে। তাই আপনি নিশ্চিন্তে এই সূত্র অনুসরণ করে পশুর ওজন নির্ধারণ করে ক্রয় করতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত দামে।

লেখক: প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গরু কেনার সময় ওজন মাপার সহজ পদ্ধতি

আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩

ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম কোরবানির পশুর হাটগুলো। সবাই নিজ নিজ পছন্দ এবং চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনছেন। কেনার সময় গরুর ওজন জানা জরুরি। যারা মোটামুটিভাবে প্রতিনিয়ত কিনে থাকেন তারা অবশ্য কিছুটা ধারণা করতে পারেন। কিন্তু অনেকেই গরুর সঠিক ওজন নির্ণয় করতে পারেন না।

ওজন হিসাব করেই গরুর দাম হাঁকাতে হয়। আপনি যত নিখুঁতভাবে ওজন নির্ধারণ করতে পারবেন, তত সহজে সাশ্রয়ী মূল্যে পশু ক্রয় করতে পারবেন। মোট যা ওজন হবে, তার ৬০-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত মাংস হবে। তাই ওজন নেওয়ার উপায় জেনে রাখা ভালো।

ওজন মাপার প্রধানত ২টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রথমটি হলো ডিজিটাল স্কেল বা মিটার। এর মাধ্যমে সহজেই ওজন নেয়া যায়। এটির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। সুবিধা হলো, সবচেয়ে কম সময়ে ওজন মাপা যায় এবং ওজনের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অন্যদিকে অসুবিধা হলো, অপ্রাপ্তি। এই মিটার সব জায়গায় থাকে না। বড় ধরনের স্কেল না হলে গরুর ওজন নেওয়া সম্ভব হয় না।

আরেকটি পদ্ধতি হলো, ফিতা দিয়ে মেপে ওজন নির্ণয় করা। মনে প্রশ্ন আসতে পারে ফিতা দিয়ে ওজন মাপা যায় নাকি? ফিতা তো দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপার জন্য। তবে এই পরিমাপকে নির্দিষ্ট গাণিতিক সূত্রে প্রয়োগ করে কম সময়ে ওজন নির্ধারণ করা যায়।

ফিতা পদ্ধতিতে ওজন মাপতে যা প্রয়োজন

* মাপার ফিতা বা স্কেল টেপ।

* ক্যালকুলেটর।

* একটি সূত্র মনে রাখা।

পদ্ধতি: যে গরুর ওজন নিতে চাচ্ছেন তাকে ভালোভাবে সোজা করে দাঁড় করাতে হবে। তারপর ফিতা দিয়ে প্রথম তার লম্বা দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এজন্য গরুর লেজের গোড়া থেকে শুরু করে সামনের পায়ের জোড়ার গিট পর্যন্ত ফিতা ধরে দৈর্ঘ্য বের করতে হবে। এরপর সামনের দুই পায়ের কাছ দিয়ে ফিতার সাহায্যে বুকের বেড় কত ইঞ্চি তা পরিমাপ করতে হবে। এটি প্রস্থ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তা সঠিকভাবে লিখে রাখতে হবে। এবার সূত্রে প্রয়োগ করে দ্রুত ওজন নির্ধারণ করতে পারবেন।

তবে খুব সর্তকতার সঙ্গে মাপতে হবে। গরুর মালিকের কাছে জেনে নেওয়া ভালো যে, গরু লাথি মারে বা উত্তেজিত হয় কিনা। অবশ্যই গরুর মালিককে দিয়েই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা এবং সঠিক ওজন পাওয়া সহজ হবে।

গরু-ছাগলের ওজন মাপার সূত্র

গরুর মোট ওজন= গরুর দৈর্ঘ্য X বুকের বেড় X বুকের বেড়/৬৬০।

ধরা যাক, গরুটির দৈর্ঘ্য ৭০ ইঞ্চি এবং বেড় ৬০ ইঞ্চি। তাহলে গরুর আনুমানিক ওজন হবে (৭০X৬০X৬০)/৬৬০ = ৩৮১ কেজি (উল্লেখ্য, প্রধান সূত্রে পাউন্ডে হিসাব করা হয়েছে কিন্তু আমরা হিসাবের সুবিধার জন্য কেজিতে রূপান্তর করে ৬৬০ দ্বারা ভাগ করেছি)। এই সূত্রের সাহায্যে যে ওজন পাওয়া যাবে তা হলো গরুর নাড়িভুড়ি সহ সবকিছুর ওজন। ছাগলের ক্ষেত্রে একই সূত্রের ব্যবহার করে ওজন নির্ণয় করা যায়।

মোট ওজন থেকে মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ পদ্ধতি

অল্প সময়ে হাটের মধ্যে আপনি এই সূত্র ব্যবহার করে যা ওজন পেয়েছেন তার ৫৫-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওজনই হবে পশুটির মাংসের ওজন। এটি নির্ভর করবে গরুর শারীরিক গঠনের উপর, পেট খুব বেশি বড় না হলে অধিকাংশ গরুর শতকরা ৬৫ শতাংশ ওজনই মাংস হয়ে থাকে।

এই সূত্রের মাধ্যমে ওজন নির্ধারণ সাধারণত ৯৫-১০০ ভাগই সঠিক হয়ে থাকে। তাই আপনি নিশ্চিন্তে এই সূত্র অনুসরণ করে পশুর ওজন নির্ধারণ করে ক্রয় করতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত দামে।

লেখক: প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।