বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘বিদ্যুতের চলমান সংকট খুব সাময়িক।’ তিনি বলে, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি সমস্যা সবকিছু এককভাবে সমাধান সম্ভব নয়। কী করতে পারিনি, কী করা উচিত ছিল, অনেক কিছু হয়েছে, অনেক কিছু হয়নি। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের সামর্থ্য যতটুকু ছিল, আমরা করার চেষ্টা করেছি। আর এসব কিছু করতে সময় লাগে, অর্থ লাগে, পরিকল্পনা লাগে।’
শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং অতঃপর?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজ্জামেল বাবু।
বৈঠকে নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘মাঝের এই তিনটা বছরে খারাপ পরিস্থিতি না এলে আমরা একটা ভালো পরিকল্পনার মধ্যে ছিলাম। এখন যে সংকটা দেখা যাচ্ছে, তা খুব সাময়িক। এত নিরাশ হওয়ার বিষয় নয়, ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে। পরিস্থিতি আমরা নিয়ে আসছি দখলে। এখন কয়লা, গ্যাসও আসতেছে, বিদ্যুৎও ঠিক হবে। তবে আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে, আশাবাদী হতে হবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুৎ করলাম একেবারে কোভিডের সময়, তারপর চাহিদা বেড়ে গেল কিন্তু কোভিড তো ছিল। সব আমদানি বন্ধ ছিল। দুই-তিনটা বছর এ সেক্টরে কাজ বন্ধ ছিল। আমাদের পাইপলাইনগুলো আসেনি, ট্রান্সমিটারগুলো আসেনি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার পিছিয়ে গেছে, সেই কারণে আমাদের গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট, কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট সবকিছু পিছিয়ে গেছে। এরপর আমরা যখন কোভিড থেকে বের হলাম, এলো ইউক্রেন যুদ্ধ। এর কারণে সব ইউরোপে ঝাঁপিয়ে পড়ল; আমরা যে সোর্স থেকে গ্যাস নিতাম, সেই সোর্সের ওপর। গ্যাসের দাম ৭০ ডলার হয়েছিল। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হয়েছে। এমন অনেক কিছু ফেস করতে হয়েছে; যেমন এখন ফেস করছি। এ রকম যুদ্ধের মতো আমার ওপর দিয়েও যুদ্ধ গেছে।’
সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক মো. শাহারিয়ার আহমেদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের টার্গেট দেশের জনগণকে রিলাইভেল এবং অ্যাফোর্ডভল এনার্জি সরবরাহ করা। এটার জন্য আমাদের শুধু ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করলেই হবে না, এনার্জি সিকিউরিটির কথা চিন্তা করতে হবে। যেটা না থাকায় আজ এই সংকট। পাশাপাশি আমাদের পরিবেশটার দিকেও দেখতে হবে। তাই বিদ্যুতের ক্ষেত্রে রিনিউয়েবল এনার্জি (নবীকরণযোগ্য শক্তি) যতটা নেওয়া যায়, আমাদের ততখানি যাওয়া উচিত। কেননা সূর্য আর বাতাস পৃথিবী যতদিন আছে, ততদিন থাকবে। আর এই রিনিউয়েবল এনার্জি একবার বসানো হলে ২০ বছরের জন্য নিশ্চিত থাকা যায় এবং এর ব্যয় একবারই। কিন্তু জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের দাম বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের উঠানামার ওপর নির্ভর করে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে যে বিদ্যুৎ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা পুরো অর্থনীতি ম্যানেজমেন্টের সমস্যার কারণে। একটা সরকারের আয় রাজস্ব, অথচ সেই রাজস্বই বাড়াতে পারিনি গত ১০ থেকে ১৫ বছরে। প্রতিবছরই ট্যাক্স টু জিডিপি ফেল করেছে। কারণ প্রক্রিয়াগত পদ্ধতিগত ওই জায়গাগুলোয় হাত দেয়নি। হাত না দিলে তো কাজ হবে না।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, সরকার যদি সবার থেকে সঠিক ইনকাম ট্যাক্স পেত, তাহলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতো না, এই ক্রাইসিসে পড়তে হতো না। এই জায়গাগুলোতে যদি হাত না দেওয়া হয়, শুধু জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা স্বীকার করি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় কষ্ট করে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির ক্ষত জায়গাটায় হাত দিতে হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের ভেতর যে গ্যাস উৎসগুলো রয়েছে, সেগুলোকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে প্রতিটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে যে জ্বালানি উত্তোলন হবে, তা সব মিলিয়ে একটা লম্বা সময় জ্বালানি নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে না।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির সম্পাদক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন।