দেশের চার স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে ৭১ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ। সোমবার (৫ জুন) দুপুরের পর থেকে রাত ৮টার ভেতর বেনাপোল, ভোমরা, হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে এসব পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা হয়।
রাইজিংবিডি ডটকম-এর জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৫৭টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। এসব পেঁয়াজের পরিমাণ ১০৯৭ মেট্রিক টন। এর আগে, সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছিল।
এ ছাড়া, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৮ ট্রাক পেঁয়াজ। এই বন্দর দিয়ে আজ রাতে আরও ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ভোমরা শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, প্রতি টন পেঁয়াজ ২২০-২৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রায় দুই মাস পর ভারত থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে দিয়ে এন আলম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। সোমবার পেঁয়াজ বোঝায় ৩টি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশ করে।
এন আলম ট্রেডার্সের প্রতিনিধি শুকুমার সরকার বলেন, আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৩টি ট্রাকে করে হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মোট ৫টি ট্রাকে ১১০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা থাকলেও ৩টি ট্রাক বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আশা করছি মঙ্গলবার (৬ জুন) বাকি দুটি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করবে।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রাত ৮টার দিকে পেঁয়াজ বোঝাই তিনটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। প্রতি মেট্রিক টন ১৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি হলেও শুল্কায়ন করা হয়েছে ৩২০ ডলারে। আমদানি পেঁয়াজ ছাড় করাতে ব্যবসায়ীদের শুল্কায়ন মূল্যের ওপর শতকরা ১০ ভাগ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সিএন্ডএফ রয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারকের ৭৫ মেট্রিক টন (৩ ট্রাক) পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছাড় করে এই পেঁয়াজ ঢাকায় পাঠানো হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৩২০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন ও সরকারি শুল্ক পরিশোধ করে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য পড়ছে ৩৯ টাকা। এর ওপর বন্দর চার্জ, ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা পড়বে।
বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশনা এসেছে। রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিএন্ডএফ এজেন্ট তাদের আমদানিকারকের পক্ষে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে আবেদন করেছেন। ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে আমদানির খবরে দিনাজপুরের হিলি ও বিরামপুরের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তারা জানিয়েছেন, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমতে পারে। এ কারণে গুদামে থাকা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা লোকসানে বিক্রি করছেন।
সোমবার ১৫ মণ পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯–১০ টাকা লোকসানে বিক্রি করেছেন জানিয়ে বিরামপুরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন বলেন, রোববার সকালে বিরামপুর নতুন বাজারে ভালো মানের দেশি প্রজাতির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ (প্রতি কেজি ৯০ টাকা) দরে। আর আমদানির খবরে সেই পেঁয়াজ ওই দিন সন্ধ্যায় বিক্রি হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা মণে (প্রতি কেজি ৬৩ টাকা)। এতে করে সকাল থেকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা থেকে নেমে গেছে ৭০ টাকায়।
উল্লেখ্য, দেশি পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সোমবার (৫ জুন) থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনুমতি দেওয়ার কথা জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।