যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানিসহ ১১ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১০৫২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

বুধবার (২৪ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, আজকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। অনুমোদিত ১১টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১০৫২ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬৩ টাকা।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিসিবি’র মোট চাহিদার অংশ হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র ১টি জমা পড়ে। দরপত্রটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অ্যাকসেনচুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশনের (স্থানীয় এজেন্ট: ওএমসি লিমিটেড ঢাকা) কাছ থেকে ২ লিটার পেটজাত বোতলে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সর্বমোট ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১১৭.৯০ টাকা।

সাঈদ মাহবুব বলেন, ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-০৩.৫ এর আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) ডিওএইচডব্লিউএ; (২) এসটিইউপি; (৩) ডেভ কন; (৪) ডিডিসি এবং (৫) আইডব্লিউএম কে ২৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৮ টাকায় নিয়োগের ক্রয়ের চুক্তি করা হয় যার মেয়াদ ৩১/১২/২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। পূর্ত কাজ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০.৫০ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা- (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) হাসকোনিং ডিএইচভি নেদারল্যান্ড বিভি, নেদারল্যান্ড এবং (২) ডেভ কনসালট্যান্টস লিমিটেড, বাংলাদেশকে ৭৯ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৩ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়; যার মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মে.টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশটির সঙ্গে সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে মরক্কো থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার (+১০%) মে. টন টিএসপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট ১ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি মে. টন টিএসপি সারের দাম পরবে ৩৬৮ মার্কিন ডলার।

সাঈদ মাহবুব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা থেকে ৫ম লটে ৫০ হাজার মে.টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ব্যয় হবে ২ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৬ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। প্রতি মে. টন এমওপি সার ৪১৮ মা. ডলার।

তিনি বলেন, সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর উন্নয়ন’ প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় পরামর্শক সেবা ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইসু্যু করা হলে ৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ৪টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) কোরিয়ার সিইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড; (২) ইয়োসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন; এবং (৩) যুক্তরাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্টসকে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকায় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর উন্নয়ন’ প্রকল্পের ১০.৭০ কি.মি. রাস্তা এবং ১৬.৫৫৭ কি.মি. ড্রেইনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি যৌথভাবে (১)সিসিইসিসি, চায়না এবং (২) সিআরসিসি, চায়না বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৩৭ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৮ টাকা।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর উন্নয়ন’ প্রকল্পের ১২.১০ কি.মি. রাস্তা এবং ১২.৮৬১ কি.মি. ড্রেইনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ কাজের আরও একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৫ টাকা।

সভায় টেবিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে ১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। এর মধ্যে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ১২ হাজার মে.টন চিনি সরবরাহ করবে ট্রেডিং করপোরেশন। এতে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রতিকেজি চিনির দাম পড়বে ১০৫ টাকা।

তিনি বলেন, এ ছাড়া স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ৭০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সংগ্রহ করা হবে। সিটি এডিবল অয়েল এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি, তাতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর