ঢাকা ১১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩
  • ৯১ বার

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার হোমনা এলাকার শাহজালাল বলী।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটের দিকে তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তিনি পাবেন ২৫ হাজার টাকা এবং রানার্স আপ জীবন বলী পাবেন ২০ হাজার টাকা।

এবারের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন সৃজন চাকমা এবং আবনুর নুর চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। পুরস্কার হিসেবে সৃজন চাকমা পাবেন ৮ হাজার এবং আবদুর নুর পাবেন ৬ হাজার।

এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। এর উদ্বোধন করেন নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শক উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেন।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জহর লাল হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাঁশের ওপর উঁচু করে বালি দিয়ে মঞ্চ করা হয়েছে। যাতে সবাই দেখতে পারে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ১০০ বলী আবেদন করে। যাচাই-বাছাই শেষে ৬০ জনকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে আসছে জব্বারের বলী খেলা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আর মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে যে সাংস্কৃতিক সংকট তা রুখতে এবং তা থেকে আমাদের ঐতিহ্য বাঁচাতে জব্বারের বলি খেলা আর বৈশাখী মেলার মতো সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে বাঁচাতে হবে।

‘করোনার অভিঘাত পেরিয়ে এ বছর আমরা লালদীঘি ময়দানে বলী খেলার আয়োজন ফেরাতে পেরেছি। আমি যতদিন মেয়রের দায়িত্বে আছি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এই বলী খেলা আর মেলার আয়োজনকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাব।’

তিনি আরো বলেন, আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে কাজ করছি তাদের মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আসবে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল না, এ যুদ্ধ ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার যুদ্ধও। আজও এ যুদ্ধ চলমান আর এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।

এদিকে, বলী খেলা উপলক্ষ্যে গতকাল (সোমবার) থেকে বসেছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। লালদিঘী মাঠের আশপাশের প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই মেলা বসেছে। মেলায় আসা দোকানে মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি নানা আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, শীতল পাটি, দা-বটি, ছুরিসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে বক্সিরহাট এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা সময়ের পরিক্রমায় জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত। বৈশাখের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে বলী খেলা হয়। এ উপলক্ষ্যে তিনদিন ধরে চলে মেলা।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে জব্বারের বলী খেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। সে হিসেবে তিন বছর পর লালদিঘীর মাঠে ফিরছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল

আপডেট টাইম : ০৭:৪১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার হোমনা এলাকার শাহজালাল বলী।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটের দিকে তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তিনি পাবেন ২৫ হাজার টাকা এবং রানার্স আপ জীবন বলী পাবেন ২০ হাজার টাকা।

এবারের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন সৃজন চাকমা এবং আবনুর নুর চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। পুরস্কার হিসেবে সৃজন চাকমা পাবেন ৮ হাজার এবং আবদুর নুর পাবেন ৬ হাজার।

এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। এর উদ্বোধন করেন নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শক উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেন।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু জহর লাল হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাঁশের ওপর উঁচু করে বালি দিয়ে মঞ্চ করা হয়েছে। যাতে সবাই দেখতে পারে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ১০০ বলী আবেদন করে। যাচাই-বাছাই শেষে ৬০ জনকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে আসছে জব্বারের বলী খেলা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আর মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে যে সাংস্কৃতিক সংকট তা রুখতে এবং তা থেকে আমাদের ঐতিহ্য বাঁচাতে জব্বারের বলি খেলা আর বৈশাখী মেলার মতো সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে বাঁচাতে হবে।

‘করোনার অভিঘাত পেরিয়ে এ বছর আমরা লালদীঘি ময়দানে বলী খেলার আয়োজন ফেরাতে পেরেছি। আমি যতদিন মেয়রের দায়িত্বে আছি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এই বলী খেলা আর মেলার আয়োজনকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাব।’

তিনি আরো বলেন, আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে কাজ করছি তাদের মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আসবে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল না, এ যুদ্ধ ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার যুদ্ধও। আজও এ যুদ্ধ চলমান আর এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।

এদিকে, বলী খেলা উপলক্ষ্যে গতকাল (সোমবার) থেকে বসেছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। লালদিঘী মাঠের আশপাশের প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই মেলা বসেছে। মেলায় আসা দোকানে মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি নানা আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, শীতল পাটি, দা-বটি, ছুরিসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে বক্সিরহাট এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা সময়ের পরিক্রমায় জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত। বৈশাখের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে বলী খেলা হয়। এ উপলক্ষ্যে তিনদিন ধরে চলে মেলা।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে জব্বারের বলী খেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। সে হিসেবে তিন বছর পর লালদিঘীর মাঠে ফিরছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা।