ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের ঋণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০১৬
  • ৯৬৯ বার

মায়ের বুকের ধন আসাদ। জন্মের দেড় বছর পর আসাদের বাবা মারা যায়। দুঃখীনি মা খুব কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আসাদকে কোলে পিঠে করে মানুষ করছে। আসাদকে কোনদিনও তার মা, বাবার কষ্ট বুঝতে দেয়নি। আসাদের সংসারে লোকসংখ্যা ৩ জন। মা, আসাদ আর তার আদরের ছোট বোন রুমি। আসাদের স্বপ্ন তার মায়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকা বৃথা যেতে দেবে না। সে একদিন না একদিন তার মায়ের দুর্গম কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে। আসাদ এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আজ তার ফল প্রকাশ হবে।

বিকালে স্কুল মাঠে গিয়ে আসাদ শুনল, তার এ-প্লাস রেজাল্ট হয়েছে। আসাদ হতবাক। সে মনে মনে ভাবতে লাগল কিছুটা হলেও আজ তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। এদিকে বাড়িতে মা ও ছোট বোন রুমি আসাদের রেজাল্ট শুনে আনন্দে মেতে উঠলো। আর সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো তৃপ্তি ভরা এক ঝিলিক হাসি।

দেখতে দেখতে দু’বছর পেরিয়ে গেল। গ্রামের কলেজের লেখাপড়া শেষ করল আসাদ। এবার সে মেডিকেলে পড়ার জন্য শহরে যাবে। আসাদ তার মাকে বলল, মা আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য শহরে লেখাপড়া করতে যাব। তখন মা বলল, কিন্তু খোকা শহরে লেখাপড়া করতে হলে তো বহু টাকার প্রয়োজন। আসাদ বলল মা তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি টিউশুনি করে লেখাপড়ার খরচ বের করবো। তখন রুমি বলল, মা তুমি ভাইয়াকে যেতে দাও। তাছাড়া তোমার পাশে সর্বক্ষণ আমি তো আছি।

মায়ের স্বপ্ন আসাদকে লেখাপড়া শেখাবে। মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে। তাই মা অনেক ভেবে বললেনÑ আমার গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতে তোর লেখাপড়া বন্ধ করবো না খোকা। তুই লেখাপড়া শিখবি। অনেক বড় হবি। আসাদ আজ বাদে কাল শহরে যাচ্ছে লেখাপড়া করার জন্য। তার মায়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।

পরের দিন সকালে আসাদ তার মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল, মা আমি এবার আসি। তুমি আমাকে দোয়া করো। মা আসাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, যাও বাবা ভালো করে পড়াশুনা করো। তারপর ছোট বোন রুমি বললো, ভাইয়া, তুমি যেন শহরে গিয়ে আমাকে ভুলে যেয়ো না। আর বাসার ফেরার পথে আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়ে আসবে।

এক অশ্রুসিক্ত মুহুর্তে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসাদ শহরে চলে গেল। শহরে পৌঁছে আসাদ রীতিমত লেখাপড়া করছে। আর এদিকে তার মা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। অসুস্থ থাকলেও সেই শরীর নিয়ে লোকের ক্ষেতে-খামারে কামলা খাটছে, শুধু আসাদের জন্য। সে বড় হলে তার কষ্ট লাঘব হবে।

আসাদ তার দুঃখিনী মায়ের মুখের দিকে চেয়ে লেখাপড়া করছে। ক্যাম্পাসে তার তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই। বিশেষ করে মেয়েদের সাথে সে দূরত্ব রেখেই চলে। কারণ আসাদকে যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যে চায় না তার এই সংগ্রামী জীবনে কেউ এসে তার সংগ্রামটা স্থবির হয়ে যাক। পড়াশুনায় আসাদ খুবই ভাল। এজন্য ক্যাম্পাসের অনেকেরই দৃষ্টি থাকে আসাদের দিকে। তবে বিশেষ করে মেয়েদের দৃষ্টিটা একটু বেশি।

একদিন তার ক্যাম্পাসের অপূর্ব সুন্দরী ঝিনুক নামের একটি মেয়ে তার কাছে এসে বললোÑ আসাদ ভাই আজ তো মেডিকেল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। দেখছি সবাই আনন্দ ফূর্তি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আপনি এখানে একাকী বসে আছেন যে; তখন আসাদ বললো, আমার দুঃখিনী মা কত কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে। যদি আমার রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে মায়ের কষ্টার্জিত পয়সাগুলো সব বৃথা হয়ে যাবে। সে কারণে আমার মনটা একটু খারাপ। তারপর ঝিনুক বললো, আসাদ ভাই আমি সব জানি। এটাও জানি যে, আপনি এতিম। তা আসাদ ভাই আপনার জন্য একটা সুখবর আছে। তখন আসাদ মুচকি হাসি দিয়ে বললো কি এমন সুখবর? ঝিনুক বললো আমি এইমাত্র শুনে এলাম, আপনি মেডিকেল পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়েছেন। একথা শুনে আসাদের বুকটা আনন্দে ভরে গেল। মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো এক পশলা হাসি। তারপর ঝিনুক আবারো বললো, আসাদ ভাই আমি আপনার কাছে একটা কথা বলতে এসেছি। আসাদ বললো, কি এমন কথা ঝিনুক? তুমি তো এই দেড় বছর ধরে আমার কাছে একটা কথা বলতে চাচ্ছো। কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে বলো না। আজ

তোমাকে বলতেই হবে। আজ আমার এই খুশির দিনে আমি তোমার সব কথাই মানবো। তখন ঝিনুক একটু হাসি নিয়ে বললো, আসাদ ভাই আমি আপনাকে খুব ভালবাসি। বহুদিন ধরে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু বলতে পারি না। আমি আপনার জীবন সঙ্গিনী হতে চাই। তখন আসাদ বিস্মিত হয়ে বললো, এ তুমি কি বলছ ঝিনুক! অসম্ভব এটা কখনোই হতে পারে না। আমার মায়ের অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে জীবন সঙ্গিনী করতে পারবো না। তারপর ঝিনুক কাঁদতে কাঁদতে ভিজা কন্ঠে বললো, আমি আপনাকে বিয়ে করার পর আপনার মাকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার। তাছাড়া আপনার মা মানেই তো আমার মা। মা নিশ্চয় আমাদের কথা ফেলতে পারবেন না। প্লিজ আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। এরপর আসাদ একটু নরম সুরে বলে উঠল, ঝিনুক আমি কখনো ব্রাহ্মণ হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখি না। তুমি কোটিপতি বাবার একমাত্র মেয়ে, সোনার চামুক মুখে নিয়ে তোমার জন্ম। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক, এটা আকাশ কুসুম ব্যাপার। আসাদের কথাগুলো শুনে ঝিনুক তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে বলল- আসাদ ভাই, সত্যি আমি আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালবাসি। আমার বিশ্বাস আমাদের সম্পর্ক সবাই মেনে নিবে। কথাগুলো বলে অঝরে শুধু কাঁদতে লাগলো ঝিনুক। ঝিনুকের হৃদয়স্পর্শী কান্না আর মায়াবী চাহুনী যেন আসাদকে দূর্বল করে ফেলে। একটি সময় সে ঝিনুককে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল।

আসাদ গ্রামের বাড়িতে খবর দিল যে, সে মেডিকেল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাড়ি ফিরবে। এ খবর শোনা মাত্রই মায়ের বুকটা গর্বে ভরে উঠলো। মা ভাবতে লাগলো দিনরাত পরিশ্রম করেও আমার শ্রমের টাকা বৃথা যায়নি। আজ আমার কত আনন্দের দিন। আমার আসাদ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আজ যদি তার বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে সেও খুব খুশি হতো। এদিকে ছোট বোন রুমি মনে মনে ভাবতে লাগলোÑ আমার ভাইয়া না জানি এতদিন কত বড় হয়েছে। দেখতে ঠিক রাজপুত্রের মতো হবে।

মা এবার আসাদের বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে লাগলো। মা তার বাড়ির পাশের সাইদ হুজুরের মেয়ে ঝর্ণাকে পছন্দ করে রেখেছে তার পুত্রবধূ করার জন্য।

এদিকে আসাদ তার বউকে নিয়ে আজ বাড়ি এসেছে। মা আসাদকে দেখে তার কপালে চুমু খেয়ে বললো, খোকা তুই কেমন আছিস বাপ? তোকে কতদিন দেখিনি, তোর জন্য বুকটা আমার ছটফট করে। আমার বুকে আয় বাপ। তারপর ছোট বোন রুমি ভাইয়ার হাত ধরে বললো, ভাইয়া তুমি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছো? ঠিক সেই মূহুর্তে আসাদ বললোÑ রুমি তোর জন্য দেখ সুন্দর একটা টুকটুকি ভাবি নিয়ে এসেছি। একথা শুনে মা চমকে উঠল, তারপর বললোÑ আসাদ তুই কি বলছিস বাপ? তুই বিয়ে করেছিস? তারপর মা যেন কিছুক্ষণ বাগরুদ্ধ হয়ে গেল। এরপর বলল, তুই বিয়ে করেছিস এটা একবার কেন আমাকে জানালি না? এখন আমি কী করবো? এদিকে আমি সাইদ হুজুরের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি। তখন আসাদ বললো, কিন্তু মা তুমি আমার বিয়ে ঠিক করেছো, তা আমাকে বলোনি কেন? তাছাড়া আমি বিয়ে করেছি হঠাৎ করেই। তোমাকে বলার মত আর সময় পায়নি। একথা বলে আসাদ তার বউকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। তারপর মা কাঁদতে কাঁদতে রুমিকে বললোÑ দেখলে রুমি তোর ভাই আজ আমাকে কি বলে গেল। আমি নিজে না খেয়ে ওকে খাইয়েছি। ও আজ আমার কলিজায় ছুরি মারলো! তখন রুমি বললোÑ মা তুমি শান্ত হও, সব ঠিক হয়ে যাবে।

পরের দিন সকালে আসাদের বউ আসাদকে বললোÑআমি এই গেয়ো গ্রামের মাটির ঘরে থাকতে পারবো না। চলো আসাদ আমরা শহরে গিয়ে বাপের বাড়ি থাকি, দেখবে সেখানে আমরা অনেক শান্তিতে থাকতে পারবো। তখন আসাদ বললোÑ কিন্তু মাকে এখানে একা রেখে গেলে তো মা কষ্ট পাবে। তাছাড়া মনে হয় গতকাল মা আমার কথায় ব্যাথা পেয়েছে। তুমি তো জানো ঝিনুক, মা শৈশবে আমার জন্য কতই না কষ্ট করেছে। আমি কখনই মায়ের এত বড় ঋণ শোধ করতে পারব না।

তারপর ঝিনুক বললোÑশোন আসাদ তোমার মা বুড়ি হয়ে গেছে, তার গা দিয়ে দেখছো না কী দুর্গন্ধ ছোটে। এখানে থাকলে আমি দু’দিনেই মারা যাবো। ঝিনুকের মুখের কথা শেষ না হতেই আসাদ বললোÑ না ঝিনুক তুমি মরলে আমি বাঁচবো না। তারপর আবারাও ঝিনুক বললো, তুমি তোমার মাকে কিছু টাকা দিয়ে শৈশবের ঋণ শোধ করে দাও। তাহলে দেখবে তোমার মা আর মনে কষ্ট নিবে না। আস্তে আস্তে এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে।

আসাদ বউয়ের কথা মতো ব্যাগ গুছিয়ে ঘর থেকে বাহিরে এলে, মা আসাদকে বললোÑ আসাদ তুই কোথায় যাচ্ছিস বাপ? তখন আসাদ বললোÑমা আমি তোমার এই কুঁড়েঘরে আর থাকতে পারছি না। তাই শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি। কথাগুলো শুনা মাত্রই যেন মায়ের বুকে করাঘাত পড়ল। টলটল করে চোখে অশ্রু এসে গেল। তারপর আসাদ মাকে বললো- মা আমাকে বল, কত টাকা হলে তোমার সব কষ্ট নিবারণ হবে? আজ আমি তোমাকে দু’হাত ভরে টাকা দিব। একথা শুনে ছোট বোন রুমি উত্তেজিত হয়ে আসাদকে বললোÑভাইয়া জীবনে কখনো তোমার মুখের উপর কথা বলিনি। কিন্তু আজ তোমার ব্যবহার দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি। শোন ভাইয়া, তুমি যদি তোমার বুকের চামড়া দিয়ে মায়ের পায়ের জুতা বানিয়ে দাও, তাহলে এক ফোটা দুধের ঋণ শোধ করতে পারবে না। তুমি এসেছো আজ সেই মায়ের ঋণ শোধ করতে? তুমি কি পারবে মায়ের এক ফোটা দুধের দাম দিতে? তুমি কি পারবে দুঃখিনী মায়ের অতীতের সুখ ফিরিয়ে দিতে? তুমি কি পারবে ভাইয়া মায়ের একফোটা চোখের পানির দাম দিতে? তুমি কি পারবে মায়ের বুক ভরা স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে? তুমি কি পারবে মায়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার উপার্জিত টাকার ফসল ফিরিয়ে দিতে? যে মা নিজে না খেয়ে তোমার আমার খাওয়ায়েছে। লেখাপড়া শিখিয়েছে। শুধু মানুষের মতো মানুষ করার জন্য। কিন্তু আজ তুমি তোমার বউয়ের প্রলোভনে পড়ে নিজের গর্ভধারিণী মাকে ভুলে যাচ্ছ? ছিঃ ভাইয়া ছিঃ, আমার ভাবতেও লজ্জা করছে। আমি আজ স্পষ্ট বুঝতে পারছি ভাইয়া তুমি মানুষ হওনি, হয়েছো মানুষ রূপী জানোয়ার। এ কথা বলা মাত্রই আসাদ রুমির গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। তারপর কিছু টাকা মায়ের মুখে ছুড়ে মেরে বউকে নিয়ে চলে গেলো। এরপর মা কাঁদতে কাঁদতে রুমিকে বললো, রুমি শুনলি তোর ভাই আমাকে কি বলে গেলো। আমি এতো কষ্ট পরিশ্রম করে ওকে বড় করেছি একথা শোনার জন্য? রুমি বললো, মা তুমি চুপ করো, শান্ত হও। কেঁদো না, ভাইয়া তার বউয়ের প্রলোভনে পড়ে সবকিছু ভুলে গেছে।

আজ ৬ মাস যাবৎ আসাদ বাড়ি ছাড়া। গ্রামের বাড়ি ছেড়ে বউয়ের সাথে শহরে শ্বশুর বাড়ি এসেছে। আসাদ একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলো, তার মা আর পৃথিবীর বুকে নেই। চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে। তার মা মৃত্যুকালে শুধু বলছে আসাদ, ও আমার আসাদ তুই কোথায় বাপ? তুই একবার আমাকে মা বলে ডাক। এ স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ আসাদের ঘুম ভেঙে গেল।

আসাদ সকালে উঠে তার বউকে বললোÑ ঝিনুক চলো আমরা দু’জন গ্রামের বাড়ি থেকে মাকে একবার দেখে আসি। আমি গত রাতে মাকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। মনটা বিচলিত হয়ে পড়েছে মাকে দেখার জন্য। একথা শুনে ঝিনুক রাগান্বিত কন্ঠে বললোÑ শোন আসাদ তুমি যদি তোমার মাকে দেখতে যাও, তাহলে এই অট্টালিকায় তোমার আর স্থান নেই। এটাও শোন যে, তুমি যদি তোমার মায়ের কাছে ফিরে যাও, তাহলে আমি তোমার মতো স্বামীর সংসার করবো না। আসাদ ঝিনুকের মুখে কথাগুলো শুনে বজ্র কন্ঠে বললোÑ আমি তোমার প্রেমে আটকা পড়েছিলাম, আমার দুচোখে পর্দা পড়েছিলো। আমি তোমার জন্য আমার গর্ভধারিনী মাকে হারিয়েছি। আজ আমার চোখ ফুটেছে। আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাবো। এজন্য আমি শুধু তোমাকে কেন, সবকিছু ছেড়ে যেতে রাজি।

একথা বলে আসাদ গ্রামে আসলো তার মায়ের কাছে। এসে শুনলো সত্যি তার মা মারা গেছে। আসাদ মায়ের কবরের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো মা….মাগো…. আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার প্রতি জুলুম করেছি। তুমি ক্ষমা না করলে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না। এ কথা বলে আসাদ তার মায়ের কবরের কাছে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। ঠিক সেই মুহূর্তে রুমি দেখলো তার ভাইয়া মায়ের কবরের কাছে কাঁদছে। রুমি তখন ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো, ভাইয়া তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন তুমি কি করবে? শেষ পর্যন্ত ভাইয়া তুমি মায়ের কাছে ক্ষমা টুকুও চাইতে পারলে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মায়ের ঋণ

আপডেট টাইম : ১১:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০১৬

মায়ের বুকের ধন আসাদ। জন্মের দেড় বছর পর আসাদের বাবা মারা যায়। দুঃখীনি মা খুব কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আসাদকে কোলে পিঠে করে মানুষ করছে। আসাদকে কোনদিনও তার মা, বাবার কষ্ট বুঝতে দেয়নি। আসাদের সংসারে লোকসংখ্যা ৩ জন। মা, আসাদ আর তার আদরের ছোট বোন রুমি। আসাদের স্বপ্ন তার মায়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকা বৃথা যেতে দেবে না। সে একদিন না একদিন তার মায়ের দুর্গম কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে। আসাদ এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আজ তার ফল প্রকাশ হবে।

বিকালে স্কুল মাঠে গিয়ে আসাদ শুনল, তার এ-প্লাস রেজাল্ট হয়েছে। আসাদ হতবাক। সে মনে মনে ভাবতে লাগল কিছুটা হলেও আজ তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। এদিকে বাড়িতে মা ও ছোট বোন রুমি আসাদের রেজাল্ট শুনে আনন্দে মেতে উঠলো। আর সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো তৃপ্তি ভরা এক ঝিলিক হাসি।

দেখতে দেখতে দু’বছর পেরিয়ে গেল। গ্রামের কলেজের লেখাপড়া শেষ করল আসাদ। এবার সে মেডিকেলে পড়ার জন্য শহরে যাবে। আসাদ তার মাকে বলল, মা আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য শহরে লেখাপড়া করতে যাব। তখন মা বলল, কিন্তু খোকা শহরে লেখাপড়া করতে হলে তো বহু টাকার প্রয়োজন। আসাদ বলল মা তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি টিউশুনি করে লেখাপড়ার খরচ বের করবো। তখন রুমি বলল, মা তুমি ভাইয়াকে যেতে দাও। তাছাড়া তোমার পাশে সর্বক্ষণ আমি তো আছি।

মায়ের স্বপ্ন আসাদকে লেখাপড়া শেখাবে। মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে। তাই মা অনেক ভেবে বললেনÑ আমার গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতে তোর লেখাপড়া বন্ধ করবো না খোকা। তুই লেখাপড়া শিখবি। অনেক বড় হবি। আসাদ আজ বাদে কাল শহরে যাচ্ছে লেখাপড়া করার জন্য। তার মায়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।

পরের দিন সকালে আসাদ তার মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল, মা আমি এবার আসি। তুমি আমাকে দোয়া করো। মা আসাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, যাও বাবা ভালো করে পড়াশুনা করো। তারপর ছোট বোন রুমি বললো, ভাইয়া, তুমি যেন শহরে গিয়ে আমাকে ভুলে যেয়ো না। আর বাসার ফেরার পথে আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে শাড়ি নিয়ে আসবে।

এক অশ্রুসিক্ত মুহুর্তে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসাদ শহরে চলে গেল। শহরে পৌঁছে আসাদ রীতিমত লেখাপড়া করছে। আর এদিকে তার মা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। অসুস্থ থাকলেও সেই শরীর নিয়ে লোকের ক্ষেতে-খামারে কামলা খাটছে, শুধু আসাদের জন্য। সে বড় হলে তার কষ্ট লাঘব হবে।

আসাদ তার দুঃখিনী মায়ের মুখের দিকে চেয়ে লেখাপড়া করছে। ক্যাম্পাসে তার তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধব নেই। বিশেষ করে মেয়েদের সাথে সে দূরত্ব রেখেই চলে। কারণ আসাদকে যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যে চায় না তার এই সংগ্রামী জীবনে কেউ এসে তার সংগ্রামটা স্থবির হয়ে যাক। পড়াশুনায় আসাদ খুবই ভাল। এজন্য ক্যাম্পাসের অনেকেরই দৃষ্টি থাকে আসাদের দিকে। তবে বিশেষ করে মেয়েদের দৃষ্টিটা একটু বেশি।

একদিন তার ক্যাম্পাসের অপূর্ব সুন্দরী ঝিনুক নামের একটি মেয়ে তার কাছে এসে বললোÑ আসাদ ভাই আজ তো মেডিকেল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। দেখছি সবাই আনন্দ ফূর্তি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আপনি এখানে একাকী বসে আছেন যে; তখন আসাদ বললো, আমার দুঃখিনী মা কত কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে। যদি আমার রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে মায়ের কষ্টার্জিত পয়সাগুলো সব বৃথা হয়ে যাবে। সে কারণে আমার মনটা একটু খারাপ। তারপর ঝিনুক বললো, আসাদ ভাই আমি সব জানি। এটাও জানি যে, আপনি এতিম। তা আসাদ ভাই আপনার জন্য একটা সুখবর আছে। তখন আসাদ মুচকি হাসি দিয়ে বললো কি এমন সুখবর? ঝিনুক বললো আমি এইমাত্র শুনে এলাম, আপনি মেডিকেল পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়েছেন। একথা শুনে আসাদের বুকটা আনন্দে ভরে গেল। মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো এক পশলা হাসি। তারপর ঝিনুক আবারো বললো, আসাদ ভাই আমি আপনার কাছে একটা কথা বলতে এসেছি। আসাদ বললো, কি এমন কথা ঝিনুক? তুমি তো এই দেড় বছর ধরে আমার কাছে একটা কথা বলতে চাচ্ছো। কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে বলো না। আজ

তোমাকে বলতেই হবে। আজ আমার এই খুশির দিনে আমি তোমার সব কথাই মানবো। তখন ঝিনুক একটু হাসি নিয়ে বললো, আসাদ ভাই আমি আপনাকে খুব ভালবাসি। বহুদিন ধরে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু বলতে পারি না। আমি আপনার জীবন সঙ্গিনী হতে চাই। তখন আসাদ বিস্মিত হয়ে বললো, এ তুমি কি বলছ ঝিনুক! অসম্ভব এটা কখনোই হতে পারে না। আমার মায়ের অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে জীবন সঙ্গিনী করতে পারবো না। তারপর ঝিনুক কাঁদতে কাঁদতে ভিজা কন্ঠে বললো, আমি আপনাকে বিয়ে করার পর আপনার মাকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার। তাছাড়া আপনার মা মানেই তো আমার মা। মা নিশ্চয় আমাদের কথা ফেলতে পারবেন না। প্লিজ আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। এরপর আসাদ একটু নরম সুরে বলে উঠল, ঝিনুক আমি কখনো ব্রাহ্মণ হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখি না। তুমি কোটিপতি বাবার একমাত্র মেয়ে, সোনার চামুক মুখে নিয়ে তোমার জন্ম। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক, এটা আকাশ কুসুম ব্যাপার। আসাদের কথাগুলো শুনে ঝিনুক তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে বলল- আসাদ ভাই, সত্যি আমি আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালবাসি। আমার বিশ্বাস আমাদের সম্পর্ক সবাই মেনে নিবে। কথাগুলো বলে অঝরে শুধু কাঁদতে লাগলো ঝিনুক। ঝিনুকের হৃদয়স্পর্শী কান্না আর মায়াবী চাহুনী যেন আসাদকে দূর্বল করে ফেলে। একটি সময় সে ঝিনুককে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল।

আসাদ গ্রামের বাড়িতে খবর দিল যে, সে মেডিকেল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাড়ি ফিরবে। এ খবর শোনা মাত্রই মায়ের বুকটা গর্বে ভরে উঠলো। মা ভাবতে লাগলো দিনরাত পরিশ্রম করেও আমার শ্রমের টাকা বৃথা যায়নি। আজ আমার কত আনন্দের দিন। আমার আসাদ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আজ যদি তার বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে সেও খুব খুশি হতো। এদিকে ছোট বোন রুমি মনে মনে ভাবতে লাগলোÑ আমার ভাইয়া না জানি এতদিন কত বড় হয়েছে। দেখতে ঠিক রাজপুত্রের মতো হবে।

মা এবার আসাদের বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে লাগলো। মা তার বাড়ির পাশের সাইদ হুজুরের মেয়ে ঝর্ণাকে পছন্দ করে রেখেছে তার পুত্রবধূ করার জন্য।

এদিকে আসাদ তার বউকে নিয়ে আজ বাড়ি এসেছে। মা আসাদকে দেখে তার কপালে চুমু খেয়ে বললো, খোকা তুই কেমন আছিস বাপ? তোকে কতদিন দেখিনি, তোর জন্য বুকটা আমার ছটফট করে। আমার বুকে আয় বাপ। তারপর ছোট বোন রুমি ভাইয়ার হাত ধরে বললো, ভাইয়া তুমি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছো? ঠিক সেই মূহুর্তে আসাদ বললোÑ রুমি তোর জন্য দেখ সুন্দর একটা টুকটুকি ভাবি নিয়ে এসেছি। একথা শুনে মা চমকে উঠল, তারপর বললোÑ আসাদ তুই কি বলছিস বাপ? তুই বিয়ে করেছিস? তারপর মা যেন কিছুক্ষণ বাগরুদ্ধ হয়ে গেল। এরপর বলল, তুই বিয়ে করেছিস এটা একবার কেন আমাকে জানালি না? এখন আমি কী করবো? এদিকে আমি সাইদ হুজুরের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি। তখন আসাদ বললো, কিন্তু মা তুমি আমার বিয়ে ঠিক করেছো, তা আমাকে বলোনি কেন? তাছাড়া আমি বিয়ে করেছি হঠাৎ করেই। তোমাকে বলার মত আর সময় পায়নি। একথা বলে আসাদ তার বউকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। তারপর মা কাঁদতে কাঁদতে রুমিকে বললোÑ দেখলে রুমি তোর ভাই আজ আমাকে কি বলে গেল। আমি নিজে না খেয়ে ওকে খাইয়েছি। ও আজ আমার কলিজায় ছুরি মারলো! তখন রুমি বললোÑ মা তুমি শান্ত হও, সব ঠিক হয়ে যাবে।

পরের দিন সকালে আসাদের বউ আসাদকে বললোÑআমি এই গেয়ো গ্রামের মাটির ঘরে থাকতে পারবো না। চলো আসাদ আমরা শহরে গিয়ে বাপের বাড়ি থাকি, দেখবে সেখানে আমরা অনেক শান্তিতে থাকতে পারবো। তখন আসাদ বললোÑ কিন্তু মাকে এখানে একা রেখে গেলে তো মা কষ্ট পাবে। তাছাড়া মনে হয় গতকাল মা আমার কথায় ব্যাথা পেয়েছে। তুমি তো জানো ঝিনুক, মা শৈশবে আমার জন্য কতই না কষ্ট করেছে। আমি কখনই মায়ের এত বড় ঋণ শোধ করতে পারব না।

তারপর ঝিনুক বললোÑশোন আসাদ তোমার মা বুড়ি হয়ে গেছে, তার গা দিয়ে দেখছো না কী দুর্গন্ধ ছোটে। এখানে থাকলে আমি দু’দিনেই মারা যাবো। ঝিনুকের মুখের কথা শেষ না হতেই আসাদ বললোÑ না ঝিনুক তুমি মরলে আমি বাঁচবো না। তারপর আবারাও ঝিনুক বললো, তুমি তোমার মাকে কিছু টাকা দিয়ে শৈশবের ঋণ শোধ করে দাও। তাহলে দেখবে তোমার মা আর মনে কষ্ট নিবে না। আস্তে আস্তে এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে।

আসাদ বউয়ের কথা মতো ব্যাগ গুছিয়ে ঘর থেকে বাহিরে এলে, মা আসাদকে বললোÑ আসাদ তুই কোথায় যাচ্ছিস বাপ? তখন আসাদ বললোÑমা আমি তোমার এই কুঁড়েঘরে আর থাকতে পারছি না। তাই শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি। কথাগুলো শুনা মাত্রই যেন মায়ের বুকে করাঘাত পড়ল। টলটল করে চোখে অশ্রু এসে গেল। তারপর আসাদ মাকে বললো- মা আমাকে বল, কত টাকা হলে তোমার সব কষ্ট নিবারণ হবে? আজ আমি তোমাকে দু’হাত ভরে টাকা দিব। একথা শুনে ছোট বোন রুমি উত্তেজিত হয়ে আসাদকে বললোÑভাইয়া জীবনে কখনো তোমার মুখের উপর কথা বলিনি। কিন্তু আজ তোমার ব্যবহার দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি। শোন ভাইয়া, তুমি যদি তোমার বুকের চামড়া দিয়ে মায়ের পায়ের জুতা বানিয়ে দাও, তাহলে এক ফোটা দুধের ঋণ শোধ করতে পারবে না। তুমি এসেছো আজ সেই মায়ের ঋণ শোধ করতে? তুমি কি পারবে মায়ের এক ফোটা দুধের দাম দিতে? তুমি কি পারবে দুঃখিনী মায়ের অতীতের সুখ ফিরিয়ে দিতে? তুমি কি পারবে ভাইয়া মায়ের একফোটা চোখের পানির দাম দিতে? তুমি কি পারবে মায়ের বুক ভরা স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে? তুমি কি পারবে মায়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার উপার্জিত টাকার ফসল ফিরিয়ে দিতে? যে মা নিজে না খেয়ে তোমার আমার খাওয়ায়েছে। লেখাপড়া শিখিয়েছে। শুধু মানুষের মতো মানুষ করার জন্য। কিন্তু আজ তুমি তোমার বউয়ের প্রলোভনে পড়ে নিজের গর্ভধারিণী মাকে ভুলে যাচ্ছ? ছিঃ ভাইয়া ছিঃ, আমার ভাবতেও লজ্জা করছে। আমি আজ স্পষ্ট বুঝতে পারছি ভাইয়া তুমি মানুষ হওনি, হয়েছো মানুষ রূপী জানোয়ার। এ কথা বলা মাত্রই আসাদ রুমির গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। তারপর কিছু টাকা মায়ের মুখে ছুড়ে মেরে বউকে নিয়ে চলে গেলো। এরপর মা কাঁদতে কাঁদতে রুমিকে বললো, রুমি শুনলি তোর ভাই আমাকে কি বলে গেলো। আমি এতো কষ্ট পরিশ্রম করে ওকে বড় করেছি একথা শোনার জন্য? রুমি বললো, মা তুমি চুপ করো, শান্ত হও। কেঁদো না, ভাইয়া তার বউয়ের প্রলোভনে পড়ে সবকিছু ভুলে গেছে।

আজ ৬ মাস যাবৎ আসাদ বাড়ি ছাড়া। গ্রামের বাড়ি ছেড়ে বউয়ের সাথে শহরে শ্বশুর বাড়ি এসেছে। আসাদ একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলো, তার মা আর পৃথিবীর বুকে নেই। চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে। তার মা মৃত্যুকালে শুধু বলছে আসাদ, ও আমার আসাদ তুই কোথায় বাপ? তুই একবার আমাকে মা বলে ডাক। এ স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ আসাদের ঘুম ভেঙে গেল।

আসাদ সকালে উঠে তার বউকে বললোÑ ঝিনুক চলো আমরা দু’জন গ্রামের বাড়ি থেকে মাকে একবার দেখে আসি। আমি গত রাতে মাকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। মনটা বিচলিত হয়ে পড়েছে মাকে দেখার জন্য। একথা শুনে ঝিনুক রাগান্বিত কন্ঠে বললোÑ শোন আসাদ তুমি যদি তোমার মাকে দেখতে যাও, তাহলে এই অট্টালিকায় তোমার আর স্থান নেই। এটাও শোন যে, তুমি যদি তোমার মায়ের কাছে ফিরে যাও, তাহলে আমি তোমার মতো স্বামীর সংসার করবো না। আসাদ ঝিনুকের মুখে কথাগুলো শুনে বজ্র কন্ঠে বললোÑ আমি তোমার প্রেমে আটকা পড়েছিলাম, আমার দুচোখে পর্দা পড়েছিলো। আমি তোমার জন্য আমার গর্ভধারিনী মাকে হারিয়েছি। আজ আমার চোখ ফুটেছে। আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাবো। এজন্য আমি শুধু তোমাকে কেন, সবকিছু ছেড়ে যেতে রাজি।

একথা বলে আসাদ গ্রামে আসলো তার মায়ের কাছে। এসে শুনলো সত্যি তার মা মারা গেছে। আসাদ মায়ের কবরের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো মা….মাগো…. আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার প্রতি জুলুম করেছি। তুমি ক্ষমা না করলে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না। এ কথা বলে আসাদ তার মায়ের কবরের কাছে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। ঠিক সেই মুহূর্তে রুমি দেখলো তার ভাইয়া মায়ের কবরের কাছে কাঁদছে। রুমি তখন ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো, ভাইয়া তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন তুমি কি করবে? শেষ পর্যন্ত ভাইয়া তুমি মায়ের কাছে ক্ষমা টুকুও চাইতে পারলে না।