শত কোটি টাকা লোকসানের মুখে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা

উত্তরের বাণিজ্যিক শহর নীলফামারীর সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দর থেকে প্রতি শীত মৌসুমে অন্তত ১২০ কোটি টাকার পুঁটি মাছের শুঁটকি রপ্তানি হয় ভারতে। কিন্তু এই মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়াসহ নানা কারণে সংকট দেখা দিয়েছে পুঁটি শুঁটকির। ১৫০ ট্রাকের বদলে এখন পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে মাত্র ১২ ট্রাক শুঁটকি। এর ফলে শত কোটি টাকার লোকসানের মুখে সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরা। এ বছর শ্রমিক খরচ ওঠানো নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

শীত মৌসুমে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুরসহ পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে রপ্তানি হয় পুঁটি মাছের শুঁটকি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি অঞ্চলে এই সময় মশাবাহিত এক ধরনের রোগ দেখা দেয়, যা পুঁটি মাছের শুঁটকি খেলে সেরে যায়। তাই সৈয়দপুর, সুনামগঞ্জ, ফরিদুপর, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি আড়ৎ থেকে প্রচুর পুঁটি শুঁটকি রপ্তানি হয়। তবে চলনবিল থেকে সৈয়দপুরে আসা পুঁটি শুঁটকির চাহিদা বেশি।

ব্যবসায়ীদের হিসাবে, সৈয়দপুর থেকে প্রতি বছর অন্তত ১৫০ ট্রাক শুঁটকি রপ্তানি হয়। একেকটি ট্রাকে গড়ে ১৬ টন শুঁটকি পাঠানো হয়। সেই হিসাবে অন্তত দুই হাজার ৪০০ টন শুঁটকি যায় সৈয়দপুর থেকে। আকার ভেদে শুঁটকির দাম হয় একেক রকম। গড়ে ৫০০ টাকা কেজিতে এক টনের দাম ৫ লাখ টাকা। একেকটি ট্রাকে ৮০ লাখ এবং সব মিলিয়ে অন্তত ১২০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি হয়। অথচ এই মৌসুমে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ১০-১২ ট্রাক। যার ফলে বড় অংকের লোকসানের মুখে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দর উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় আড়ৎ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঁটকি আসে এখানে। ভারত এবং মায়ানমার থেকেও আসে শুঁটকি। মে-জুন মাসের দিকে শুঁটকির চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ এই সময় তাজা মাছের সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি ধান কাটার শ্রমিকদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে স্বল্প খরচে শুঁটকির রান্না হয় গৃহস্থ বাড়িতে।

সৈয়দপুরের এই বন্দরে মাসে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার শুঁটকি কেনাবেচা হয়। সামুদ্রিক এবং অন্যান্য দেশি মাছের শুঁটকির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এ বছর প্রকৃতির বিরুপ খেয়ালের কারণে পুঁটি মাছের শুঁটকির সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। যার ফলে শত কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্যে এক প্রকার ধস নেমেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সৈয়দপুরের শুঁটকি আড়তে এসেছেন ব্যবসায়ী মো. রাসেল। উদ্দেশ্য পুঁটি মাছের শুঁটকি কিনে ভারতে রপ্তানি করবেন। তিনি বলেন, আশানুরুপ শুঁটকি পাইনি, এ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে। যার ফলে পুঁটি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে।

দেশি আড়তদার মিল্টন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁটি মাছের শুঁটকি আসে মূলত চলনবিল এলাকা থেকে। বিলেই এবার মাছ কম তাই শুঁটকিও কম এসেছে।

সৈয়দপুরের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, এ বছর রপ্তানি করতে না পারায় ব্যাংক লোন শোধ করা নিয়ে চিন্তায় আছি। অনেক ব্যবসায়ী সংকটে পড়েছেন। এই মৌসুমে রপ্তানি বাজারকে কেন্দ্র করে অনেকেই ব্যাংক লোনের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন।

সৈয়দপুর শুকনা মাছ আড়ৎ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী আবুল বাশার ঢাকা পোস্ট বলেন, বর্তমানে ১৩টি আড়ৎ ও ৬৪টি খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সৈয়দপুরের শুঁটকি বন্দরে। এখানে কাজ করেন হাজার খানেক শ্রমিক। ৫০-৬০ প্রকারের মাছের শুঁটকি পাওয়া যায় এখানে। এবার খরচ তোলায় কঠিন হয়ে যাবে। ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর