ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার বহু এলাকায় গ্যাসের চুলা না জ্বালালেও মাস শেষে বিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • ২৪২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিলুরোডে গত দুই মাস ধরে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। একই অবস্থা মিরপুর-১২, গ্রিনরোড (মোস্তফা সড়ক), মালিবাগসহ রাজধানীর অনেক এলাকার।

এসব এলাকায় দুই থেকে তিন মাস হলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ফলে বাধ্য হয়ে হোটেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে দিন কাটাচ্ছেন এসব মানুষ।

দিলু রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আতিকুল ইসলাম জানান, গত তিন মাস ধরে এই এলাকায় গ্যাসই থাকছে না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকেই না। ফলে একরকম দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। হোটেল নির্ভরতার কারণে পেটের নানা অসুখে ভুগছেন এলাকাবাসী।

একই অবস্থা গ্রিনরোডের গ্রিন সুপার মার্কেটের পেছনের এলাকায়ও (মোস্তফা সড়ক)। এই এলাকার বাসিন্দারা গত দুই মাস ধরে গ্যাস প্রায় পাচ্ছেনই না বলে অভিযোগ।

ক্ষুব্ধ নাসির উদ্দিন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। বাধ্যতামূলকভাবে সেই বিল কিন্তু আমাদের দিতেই হচ্ছে। অথচ গ্যাস পাচ্ছি না।

মালিবাগের অবস্থাও খারাপ। তবে গ্রিন রোড বা দিলুরোডের মতো এত নয়। মালিবাগে গ্যাস থাকে না সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। ফলে হোটেলগুলোতে খাবারের লাইন পড়ে যায়।

মালিবাগের বাসিন্দা বেসরকারি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অনুপ কুমার বলেন, সকালে অফিসে যেতে হয় হোটেলের খাবার খেয়ে। দুপুরেও পরিবারের খাবার হোটেল থেকেই আসে। এই অবস্থা চলছে দুই মাস ধরে।

অনুপ অভিযোগ করে বলেন, তিতাসে অভিযোগ করলে বলা হয়, দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। শীতকাল, তাই গ্যাসের চাপ কম। এটি বলেই তারা খালাস। অথচ মাসে মাসে ঠিকই ১১০০ টাকা বিল দিতে হয়।

গ্যাসের প্রিপেইড গ্রাহকরা পড়েছেন আরেক ধরনের যন্ত্রণায়। তাদের সমস্যা হলো তারা গ্যাসও ঠিকমতো পাচ্ছেন না আবার খরচও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

মিরপুর-১২ এ গ্রাহক সিরাজুস সালেকীন বলেন, আজ দুই মাস হলো গ্যাস ঠিকমতো থাকে না। পুরো শীতের এই দুই মাস সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গ্যাসই থাকে না।

তিনি আরও জানান, একদিকে গ্যাস পাই না অন্যদিকে খরচও বেড়েছে অনেক। গত জুনে দাম বাড়ার আগে ৫০০ টাকায় ২৮ ইউনিট পেতাম। এতে পুরো মাস চলে যেত। এখন এক হাজার টাকায় পাই ৩৩ ইউনিট। কিন্তু পুরো মাস চলে না।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ মিলিয়নের মতো। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে।

আরেকটা কারণ হিসেবে তিতাসের এই পরিচালক বলেন, এ ছাড়া শীতের কারণে গ্যাস জমে যাওয়ায় পাইপলাইনের একেবারে শেষ প্রান্তের গ্রাহকের গ্যাসের সরবরাহ কম থাকে।

খিলগাঁও, বাসাবো, মানিকনগর, পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকা, রামপুরার উলন, ওয়াপদা, মধুবাগসহ আরও কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ।

তিতাস সূত্র জানায়, শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার আশপাশের এলাকা সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার শিল্প কারখানাগুলোর।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শেষের দিকে সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি না করা পর্যন্ত চলমান গ্যাস সংকট কাটানো কঠিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঢাকার বহু এলাকায় গ্যাসের চুলা না জ্বালালেও মাস শেষে বিল

আপডেট টাইম : ০৬:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিলুরোডে গত দুই মাস ধরে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। একই অবস্থা মিরপুর-১২, গ্রিনরোড (মোস্তফা সড়ক), মালিবাগসহ রাজধানীর অনেক এলাকার।

এসব এলাকায় দুই থেকে তিন মাস হলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ফলে বাধ্য হয়ে হোটেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে দিন কাটাচ্ছেন এসব মানুষ।

দিলু রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আতিকুল ইসলাম জানান, গত তিন মাস ধরে এই এলাকায় গ্যাসই থাকছে না। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকেই না। ফলে একরকম দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। হোটেল নির্ভরতার কারণে পেটের নানা অসুখে ভুগছেন এলাকাবাসী।

একই অবস্থা গ্রিনরোডের গ্রিন সুপার মার্কেটের পেছনের এলাকায়ও (মোস্তফা সড়ক)। এই এলাকার বাসিন্দারা গত দুই মাস ধরে গ্যাস প্রায় পাচ্ছেনই না বলে অভিযোগ।

ক্ষুব্ধ নাসির উদ্দিন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। বাধ্যতামূলকভাবে সেই বিল কিন্তু আমাদের দিতেই হচ্ছে। অথচ গ্যাস পাচ্ছি না।

মালিবাগের অবস্থাও খারাপ। তবে গ্রিন রোড বা দিলুরোডের মতো এত নয়। মালিবাগে গ্যাস থাকে না সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। ফলে হোটেলগুলোতে খাবারের লাইন পড়ে যায়।

মালিবাগের বাসিন্দা বেসরকারি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অনুপ কুমার বলেন, সকালে অফিসে যেতে হয় হোটেলের খাবার খেয়ে। দুপুরেও পরিবারের খাবার হোটেল থেকেই আসে। এই অবস্থা চলছে দুই মাস ধরে।

অনুপ অভিযোগ করে বলেন, তিতাসে অভিযোগ করলে বলা হয়, দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। শীতকাল, তাই গ্যাসের চাপ কম। এটি বলেই তারা খালাস। অথচ মাসে মাসে ঠিকই ১১০০ টাকা বিল দিতে হয়।

গ্যাসের প্রিপেইড গ্রাহকরা পড়েছেন আরেক ধরনের যন্ত্রণায়। তাদের সমস্যা হলো তারা গ্যাসও ঠিকমতো পাচ্ছেন না আবার খরচও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

মিরপুর-১২ এ গ্রাহক সিরাজুস সালেকীন বলেন, আজ দুই মাস হলো গ্যাস ঠিকমতো থাকে না। পুরো শীতের এই দুই মাস সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গ্যাসই থাকে না।

তিনি আরও জানান, একদিকে গ্যাস পাই না অন্যদিকে খরচও বেড়েছে অনেক। গত জুনে দাম বাড়ার আগে ৫০০ টাকায় ২৮ ইউনিট পেতাম। এতে পুরো মাস চলে যেত। এখন এক হাজার টাকায় পাই ৩৩ ইউনিট। কিন্তু পুরো মাস চলে না।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ মিলিয়নের মতো। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে।

আরেকটা কারণ হিসেবে তিতাসের এই পরিচালক বলেন, এ ছাড়া শীতের কারণে গ্যাস জমে যাওয়ায় পাইপলাইনের একেবারে শেষ প্রান্তের গ্রাহকের গ্যাসের সরবরাহ কম থাকে।

খিলগাঁও, বাসাবো, মানিকনগর, পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকা, রামপুরার উলন, ওয়াপদা, মধুবাগসহ আরও কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ।

তিতাস সূত্র জানায়, শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার আশপাশের এলাকা সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার শিল্প কারখানাগুলোর।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শেষের দিকে সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি না করা পর্যন্ত চলমান গ্যাস সংকট কাটানো কঠিন।