ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তুরস্কের জনপ্রিয় নেতা এরদোগান লেবু বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০১৬
  • ২৬১ বার

অতীতে এরদোগান কোনো নায়ক বা মহানায়ক ছিলেন না। জীবন-জীবিকার তাগিদে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় রাস্তায় লেবু বিক্রি করতেন। বাবা ছিলেন তুর্কি কোস্টগার্ডের সদস্য। এমনই সাধারণ জীবনের পথচলা থেকে মহাকাব্যিক উত্থান, যা ইতিহাসে সচরাচর দেখা যায় না। তুরস্কের জনপ্রিয় নেতা এরদোগান। দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক মেয়র ও প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে তিনি শক্তিশালী তুরস্কের অধিপতি রাষ্ট্রপতি। তুরস্কের সাধারণ মানুষের রক্ষাকর্তা। ৬২ বছর বয়সী এই নেতা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। একটি সাধারণ পরিবার থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্পটাও ক্যারিশমাটিক। লিখেছেন— আবদুল কাদের

‘মসজিদ আমাদের ক্যান্টনমেন্ট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাসীরা আমাদের সৈনিক’, এটি কোনো সাধারণ কবিতা বা পঙ্কজ নয়, শক্তিশালী তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগানের মহাকাব্যিক লেখা, অপরাজেয় এক সৈনিকের তেজস্বী উচ্চারণ। যার জন্য গোটা বিশ্বে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। খেটেছেন চার বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু তবুও থামেননি এই নেতা। তুরস্কের মুসলমানদের রক্ষাকর্তা এরদোগান পরবর্তীকালে নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠেন।

এই মহানায়কের পুরো নাম রেসিপ তাইয়িপ এরদোগান। ১৯৫৪ সালে তুরস্কের কাসিমপাসায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব কেটেছে কৃষ্ণসাগরের পাড়ে। মহান এই নেতার ছেলেবেলা ছিল খুবই সাধারণ। বাবা ছিলেন একজন কোস্টগার্ডের সদস্য। ছেলেবেলা থেকেই কষ্ট, ত্যাগ আর জীবনে বেঁচে থাকার নৈমিত্তিক সংগ্রামী লড়াই করে বড় হয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলে আসেন। জীবিকার তাগিদে সেখানে রাস্তায় বিক্রি করতেন লেবু, তিল ও ঝুটি। থেমে থাকেননি তিনি। পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জড়িয়ে পড়েন ইসলামী আন্দোলনে। রাজনীতিতে আসার আগে এরদোগান ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। পাশাপাশি তিনি একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে খেলা করে এগিয়ে যেতে হয় এই নেতাকে। তার লক্ষ্য ছিল অবিচল-বিরামহীন। এক সময়ের রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে লেবু বিক্রেতা সময়ের বিবর্তনে হয়ে ওঠেন তুরস্কের ত্রাণকর্তা। তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, মেধা, যোগ্যতা, প্রত্যুত্পন্ন্নমতিত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে ক্রমেই মহীরুহে পরিণত হন, যা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

এরদোগান যেমন একজন রাজনৈতিক নেতা, তেমনি তার ক্যারিশমারও শেষ নেই। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে। ছাত্র রাজনীতি শুরু করে এরদোগান এক সময় রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৫ সালে তুরস্কের রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান দিয়ে শুরু হয় তার উত্থানের সিঁড়ি। কয়েক বছর পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৪ সালে তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। দেড় কোটি মানুষের আবাদি শহর ইস্তাম্বুলকে নিয়ে আসেন অনন্য উচ্চতায়। মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবহার শুরু করেন। গোটা শহরকে বিশ্বের মধ্যে এক আধুনিক শহরে রূপান্তর করেন। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শহরে যানজট আর বায়ুদূষণ ছিল প্রকট। নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পাল্টে দেন নগরীর চেহারা। তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি গোটা রাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন, সমালোচকদের চোখে তিনি শত্রু। তুরস্কে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে গোটা তুরস্ক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই বিক্ষোভে তিনি অংশগ্রহণ করেন। জনপ্রিয় এই মহানায়ক তখন হয়ে ওঠেন সবার চোখে বিষের কাঁটা। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। মহাকাব্যিক সেই কবিতার লাইনের জন্য তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। এই কাব্যিক রচনার কারণে চার বছরের জেলও খাটতে হয় এই নেতাকে। ভিন্ন মেরুর এই জনপ্রিয় নেতার দিন কাটতে থাকে অনেক কষ্ট আর লঞ্ছনায়। মেয়র থাকা অবস্থায় বিদ্রোহী কবিতার জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে দীর্ঘদিনের মিত্র আবদুল্লাহ গুল ও অন্যদের সঙ্গে মিলে ২০০১ সালে একেপি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১১ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। লম্বা স্লিম মধ্যবয়স্ক এরদোগান রাজনীতিতে এক ভিন্নধর্মী আকর্ষণ রয়েছে তার। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা যখন কোনো মুসলিম দেশে প্রেসিডেন্সিয়াল সফরে গেলেন, তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম পাঁচ মিত্র দেশের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯২৩ সালে তুরস্কের প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে ১২তম রাষ্ট্রপতি এরদোগান।

তুর্কিদের একাংশ এরদোগানকে ‘বুয়ুক উস্তা’ বা ‘বড় মাস্টার’ বলে থাকেন। তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘এরদোগান দ্য লাস্ট ডিক্টেটর’। তার বিচক্ষণতা ও সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে জনগণ তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পেরেছে। মূলত এরদোগানের এখানেই বড় সাফল্য। হয়তো আগামী দিনে আরও বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তুরস্কের জনপ্রিয় নেতা এরদোগান লেবু বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ০৩:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০১৬

অতীতে এরদোগান কোনো নায়ক বা মহানায়ক ছিলেন না। জীবন-জীবিকার তাগিদে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় রাস্তায় লেবু বিক্রি করতেন। বাবা ছিলেন তুর্কি কোস্টগার্ডের সদস্য। এমনই সাধারণ জীবনের পথচলা থেকে মহাকাব্যিক উত্থান, যা ইতিহাসে সচরাচর দেখা যায় না। তুরস্কের জনপ্রিয় নেতা এরদোগান। দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক মেয়র ও প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে তিনি শক্তিশালী তুরস্কের অধিপতি রাষ্ট্রপতি। তুরস্কের সাধারণ মানুষের রক্ষাকর্তা। ৬২ বছর বয়সী এই নেতা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। একটি সাধারণ পরিবার থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্পটাও ক্যারিশমাটিক। লিখেছেন— আবদুল কাদের

‘মসজিদ আমাদের ক্যান্টনমেন্ট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাসীরা আমাদের সৈনিক’, এটি কোনো সাধারণ কবিতা বা পঙ্কজ নয়, শক্তিশালী তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগানের মহাকাব্যিক লেখা, অপরাজেয় এক সৈনিকের তেজস্বী উচ্চারণ। যার জন্য গোটা বিশ্বে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। খেটেছেন চার বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু তবুও থামেননি এই নেতা। তুরস্কের মুসলমানদের রক্ষাকর্তা এরদোগান পরবর্তীকালে নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠেন।

এই মহানায়কের পুরো নাম রেসিপ তাইয়িপ এরদোগান। ১৯৫৪ সালে তুরস্কের কাসিমপাসায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব কেটেছে কৃষ্ণসাগরের পাড়ে। মহান এই নেতার ছেলেবেলা ছিল খুবই সাধারণ। বাবা ছিলেন একজন কোস্টগার্ডের সদস্য। ছেলেবেলা থেকেই কষ্ট, ত্যাগ আর জীবনে বেঁচে থাকার নৈমিত্তিক সংগ্রামী লড়াই করে বড় হয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলে আসেন। জীবিকার তাগিদে সেখানে রাস্তায় বিক্রি করতেন লেবু, তিল ও ঝুটি। থেমে থাকেননি তিনি। পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জড়িয়ে পড়েন ইসলামী আন্দোলনে। রাজনীতিতে আসার আগে এরদোগান ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। পাশাপাশি তিনি একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে খেলা করে এগিয়ে যেতে হয় এই নেতাকে। তার লক্ষ্য ছিল অবিচল-বিরামহীন। এক সময়ের রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে লেবু বিক্রেতা সময়ের বিবর্তনে হয়ে ওঠেন তুরস্কের ত্রাণকর্তা। তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, মেধা, যোগ্যতা, প্রত্যুত্পন্ন্নমতিত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে ক্রমেই মহীরুহে পরিণত হন, যা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

এরদোগান যেমন একজন রাজনৈতিক নেতা, তেমনি তার ক্যারিশমারও শেষ নেই। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে। ছাত্র রাজনীতি শুরু করে এরদোগান এক সময় রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৫ সালে তুরস্কের রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান দিয়ে শুরু হয় তার উত্থানের সিঁড়ি। কয়েক বছর পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৪ সালে তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। দেড় কোটি মানুষের আবাদি শহর ইস্তাম্বুলকে নিয়ে আসেন অনন্য উচ্চতায়। মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রযুক্তিগত ব্যবহার শুরু করেন। গোটা শহরকে বিশ্বের মধ্যে এক আধুনিক শহরে রূপান্তর করেন। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শহরে যানজট আর বায়ুদূষণ ছিল প্রকট। নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পাল্টে দেন নগরীর চেহারা। তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি গোটা রাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন, সমালোচকদের চোখে তিনি শত্রু। তুরস্কে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে গোটা তুরস্ক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই বিক্ষোভে তিনি অংশগ্রহণ করেন। জনপ্রিয় এই মহানায়ক তখন হয়ে ওঠেন সবার চোখে বিষের কাঁটা। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। মহাকাব্যিক সেই কবিতার লাইনের জন্য তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। এই কাব্যিক রচনার কারণে চার বছরের জেলও খাটতে হয় এই নেতাকে। ভিন্ন মেরুর এই জনপ্রিয় নেতার দিন কাটতে থাকে অনেক কষ্ট আর লঞ্ছনায়। মেয়র থাকা অবস্থায় বিদ্রোহী কবিতার জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে দীর্ঘদিনের মিত্র আবদুল্লাহ গুল ও অন্যদের সঙ্গে মিলে ২০০১ সালে একেপি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১১ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। লম্বা স্লিম মধ্যবয়স্ক এরদোগান রাজনীতিতে এক ভিন্নধর্মী আকর্ষণ রয়েছে তার। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা যখন কোনো মুসলিম দেশে প্রেসিডেন্সিয়াল সফরে গেলেন, তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম পাঁচ মিত্র দেশের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯২৩ সালে তুরস্কের প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে ১২তম রাষ্ট্রপতি এরদোগান।

তুর্কিদের একাংশ এরদোগানকে ‘বুয়ুক উস্তা’ বা ‘বড় মাস্টার’ বলে থাকেন। তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘এরদোগান দ্য লাস্ট ডিক্টেটর’। তার বিচক্ষণতা ও সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে জনগণ তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পেরেছে। মূলত এরদোগানের এখানেই বড় সাফল্য। হয়তো আগামী দিনে আরও বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে।