হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সারাদেশে ৪০ হাজারের মতো। বেসরকারি এমপিওভূক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সংখ্যা সাড়ে ৫ লক্ষাধিক। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৫ ভাগ বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি মাত্র ৫ ভাগ। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কাজ একই, দায়িত্ব একই। যোগ্যতাও এক। রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা ছিলো।
বর্তমানে এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে পিএসসি’র আদলে শিক্ষক রিক্রুটমেন্ট হচ্ছে।
অতএব বেসরকারি শিক্ষকদের কোয়ালিটি খারাপ কিংবা পাঠদান কোয়ালিটি নিম্নমানের– এ দোষ দিয়ে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বঞ্চিত করার দিন ফুরিয়ে এসেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য বর্তমান সরকারের সময়ে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীগণ শুধু বাড়িভাড়া ও উৎসব ভাতা পুরোটা পাচ্ছেন না। মেডিকেল ভাতা সামান্য বাকি। বাড়িভাড়া, উৎসব ভাতা আর মেডিকেল ভাতা সামান্য বাড়ালেই তো সরকারি।
কাজেই আমরা সরকারি হতেও খুব দূরে নেই।
অবসরের পরে আমরা পেনসন সুবিধা পাচ্ছি না,পাচ্ছি এককালিন অবসর সুবিধা। টাকার অংকে তাও একেবার ফেলনা নয়। আমার বাবাও বেসরকারি একটা স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। তিনি রিটায়ার করার পর সহকর্মী শিক্ষকগণের এবং শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত চাঁদায় জায়নামাজ,টুপি, তজবি,লাঠি,পাঞ্জাবী,ঘড়ি পেয়েছেন। অন্যরা না হয় আরোকিছু বেশি পেয়েছেন। আমার বড় ভাই ফজলে এলাহী সাহেবও প্রভাষক, ভাইস-প্রিন্সিপাল পদে দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন শূণ্যহাতে।
আমার আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাব্বির আহমেদ মোস্তফা (স্বাধীনতার আগে কিশোরগঞ্জ জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতার পর সভাপতি) তিনি যখন বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে রিটায়ার করলেন তখন এই অবসর সুবিধা ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। ফলে আমার এই ভাই অবসর ভাতা পেয়েছেন। আমিও পাবো। একেবারে খারাপ না। প্রায় অর্ধ-কোটি।
কিন্তু সমস্যা হলো, শিক্ষক কর্মচারীদগণ অবসরে গিয়ে আবেদন করে সময়মতো টাকাটা পাচ্ছেন না। আমি যখন এখানে প্রথম দায়িত্বে আসি তখন একজন শিক্ষক ৫/৬ বছর পর তাদের পাওনা টাকা পেতেন। এখন সেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে, এখন ৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু এও তো খুব দুঃসহ পীড়ন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, শিক্ষা সচিব আবু বকর সিদ্দিক, ডিজি মাউশির অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দকে নিয়ে আমাদের বোর্ডের কয়েকবার বৈঠক হয়েছে।
সেই বৈঠকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর ভাতা প্রদানের দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় তার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত শুধু অবসর বোর্ডের জন্য মোট ১৫শ ৫৭ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন। চলতি অর্থ বছর ২০২২-২৩ এ ১শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই বরাদ্দের চেক গত পরশুদিন ৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ হাতে পেলাম।
প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, ডিজি মাউশিকে লক্ষ লক্ষ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন, যাঁর নেতৃত্বে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবেই। যাঁর নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
লেখকঃ শরিফ সাদী অধ্যক্ষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজ ও সদস্য সচিব, অবসর কল্যাণ বোর্ড।