ঢাকার এসে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে বহনকারী ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’ বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সাড়ে ১০টায় বিমান থেকে নেমে আসেন মোদি। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিশুরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিমানবন্দরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা ছাড়াও সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয় বিভিন্ন বাহিনীর সুসজ্জিত দল। ৩৬ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফরকালে নরেন্দ্র মোদি সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করবেন।
আজ সকালে যাত্রা শুরুর সময়ে একই টুইট বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই সফর দুই দেশের বন্ধনকে মজবুত করবে। একই সঙ্গে দুই দেশ ও এ অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ নিয়ে আসবে।
নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে রাজধানীকে। প্রস্তুত হয়ে আছে দুই দেশের প্রায় দেড় ডজন চুক্তির খসড়া। প্রস্তুত দুই দেশের আলোচনার সব বিষয়বস্তু। দেশের সব রাজনৈতিক দলও স্বাগত জানিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে। বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে মোদির দুই দিনের সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছে ঢাকা এবং দিল্লির কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহল। এ সফরেই প্রতিবেশী দুই দেশের ৪১ বছর ধরে আটকে থাকা সীমান্ত চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ঘোষণা আসছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলেও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পেতে যাচ্ছে এক নতুন মাত্রা। এ ছাড়া প্রতিটি সফরেই মোদি সে দেশের জন্য বিশেষ চমকের ঘোষণা দেন। এখন দেখার বিষয়, ক্যারিশম্যাটিক নেতা মোদি নতুন কী চমক নিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। তবে এটা নিশ্চিত যে মোদির সফরের পর বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের যোগাযোগ বেড়ে যাবে বহুলাংশে।
বিমানবন্দর থেকে মোদি বেলা পৌঁনে ১১টার দিকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে গাছের চারা রোপণ এবং পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করবেন। পরে যাবেন তার থাকার জন্য নির্ধারিত হোটেল সোনারগাঁওয়ের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটে। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিকালে মোদি যাবেন তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠক শেষে স্বাক্ষর হবে বেশকিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও বিনিময়পত্র। রাতে মোদির জন্য হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশেষ নৈশভোজ আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল রবিবার সকালে মোদি যাবেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন মন্দিরের প্রধান সেবায়েত। ঘুরে দেখবেন মূল মন্দির প্রাঙ্গণের শিব ও কালী মন্দির। পূজা ও পুরোহিতের আশীর্বাদ গ্রহণ শেষে কয়েকজন হিন্দু নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে মোদি যাবেন রামকৃষ্ণ মিশনের মঠ ও মন্দির পরিদর্শনে। এরপর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যানসারি ভবনে অনুদানের প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। পরে যাবেন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেখানে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা গ্রহণ করবেন মোদি। সেখানেই সারবেন মধ্যাহ্ন ভোজ। এরপর হোটেলে ফিরে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে নরেন্দ্র মোদির। সন্ধ্যায় মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুধীসমাজের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এটাই হবে ঢাকায় তার শেষ কর্মসূচি। এরপর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রাত ৮টার দিকে ভারতীয় বিশেষ বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি। তাকে বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।