ঢাকা ১২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ফুটবলারদের সঙ্গিনীদের জন্য বিলাসবহুল প্রমোদতরী! কী আছে সেখানে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৩৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২
  • ১৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিলাসবহুল প্রমোদতরী। ৯৭০৫ কোটি টাকার প্রমোদতরী দোহার বন্দরে ভেড়ার আগেই তৈরি হয়েছে বিরাট বিতর্ক।

দামের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হলেও এই প্রমোদতরীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শ্রমিকদের ঘাম-রক্ত। জানা গিয়েছে, সেই প্রমোদতরী তৈরি করতে যে সব শ্রমিকরা পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ক্রীতদাসদের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি, কম মাইনেয় দিনের পর দিন খাটতে হয়েছে।

স্পেনের একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, কিউবার প্রায় হাজার খানেক শ্রমিকের সঙ্গে অত্যাচার করা হয়েছে। তাঁদের থাকতে হয়েছে অস্বাস্থ্যকর জায়গায়। নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয় পাসপোর্টও।

শুধু কম বেতনই দেওয়া হয়নি, পুরো বেতনের টাকাও মেটানো হয়নি। জানা গিয়েছে, ভারতীয় মুদ্রায় মাসে হাজার দশেক টাকাও বেতন ছিল না ওই শ্রমিকদের। অনেকেই একে মধ্যযুগীর ক্রীতদাস প্রথার সঙ্গে তুলনা করছেন।

অনেকে টেনে এনেছেন কাতার সরকারের প্রসঙ্গ, যারা একই ভাবে এশীয় শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যবহার করেছে এবং তাঁদের দিয়ে স্টেডিয়াম, রাস্তা, রেলপথ এবং আরও বিভিন্ন জিনিস তৈরি করিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা কাতারে পৌঁছে গিয়েছেন। তাদের স্ত্রী-বান্ধবীরাও ধীরে ধীরে এসে পৌঁছবেন। তবে ফুটবলারদের সঙ্গে তারা থাকবেন না। ইংরেজ ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে।

কাতারের রাজধানী দোহার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সেই প্রমোদতরী থাকবে। সেখানে আধুনিক যা ব্যবস্থা রয়েছে, তা হতবাক করার জন্যে যথেষ্ট।

জানা গিয়েছে, সেই ক্রুজে শপিং মল, সালঁ, স্পা-র মতো বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়া যাবে। আমোদ-প্রমোদ এবং বিনোদনের আরও হাজার রকম উপাদান থাকছে সেই ক্রুজে।

এটি বিশ্বের অন্যতম দামি প্রমোদতরী। একটি রাতের জন্য খরচ হতে পারে ২,৪৩৪ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা)। ফলে ধনী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এখানে থাকতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে না।

২০১৬ থেকে এই প্রমোদতরী বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ইটালির সংস্থা এমএসসি ক্রুজেস এটি তৈরি করেছে। মোট চারটি প্রমোদতরী তৈরি করা হয়েছে ৪০০ কোটি ইউরোয় (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩,৮৩২ কোটি)।

সুয়েজ খাল থেকে ইতিমধ্যেই এই প্রমোদতরী কাতারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ইংল্যান্ডের ২৬ জন ফুটবলারের বেশির ভাগেরই স্ত্রী-বান্ধবীরা ওই প্রমোদতরীতে থাকবেন।

এ বার দেখে নেওয়া যাক কী কী থাকবে সেই প্রমোদতরীতে। সূত্রের খবর, একাধিক সাঁল, বুটিক, বাচ্চাদের গাড়ি নিয়ে খেলার জায়গা ছাড়াও ছ’টি সুইমিং পুল, ১৪টি সমুদ্রমুখী জাকুজ়ি এবং একটি ড্রাই-স্লাইড থাকবে।

প্রমোদতরীর স্পোর্টসপ্লেক্স এলাকায় বাস্কেটবল, বাম্পার কার, রোলার ডিস্কো রিঙ্ক থাকছে। ফলে মজা করার কোনও উপাদানই বাকি রাখা হচ্ছে না।

১৩টি রেস্তোরাঁ এবং পানশালা ছাড়াও প্রমোদতরীতে মাইক্রো-ব্রিউয়ারি থাকছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের বিভিন্ন মদ পাওয়া যাবে।

এই প্রমোদতরী লম্বায় ১০৯৪ ফুট, উচ্চতা ২২৩ ফুট এবং প্রস্থে ১৫৪ ফুট। এর গতি ২২.৭ নট। মোট ৬,৭৬২ জন যাত্রী থাকতে পারবেন। তাঁদের জন্য কর্মী থাকবেন ২,১৩৮ জন। প্রমোদতরীর ২১টি ডেক রয়েছে।

কাতারের বাকি জায়গায় মদ্যপান নিয়ে প্রচুর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই প্রমোদতরী যেহেতু জলভাগে থাকবে, তাই মদ্যপান করতে কোনও অসুবিধা নেই।

ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে। বিলাসে থাকার জন্যে তাতেও অবশ্য প্রচুর গাঁটের কড়ি খসাতে হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, এরিক ডায়ারের বান্ধবী তথা মডেল আনা মডলার সেখানে থাকবেন।

কলকাতায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলে যাওয়া ফুটবলার ফিল ফডেনের বান্ধবী রেবেকা কুক এই প্রমোদতরীতে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।

প্রমোদতরীর সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী বলেছেন, “এই প্রমোদতরীতে থাকা অসাধারণ ব্যাপার। বিশ্বকাপ দেখতে এলে এর থেকে ভাল জায়গা আর হয় না। মদ্যপানেও কোনও অসুবিধা নেই। দোহার অনেক হোটেলে রৌদ্রস্নান করা যাবে না। এখানে সেই সুবিধাও রয়েছে।”

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ফুটবলাররা নিজেরাই হয়তো স্ত্রী-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। আল ওয়াকরার হোটেলে কড়া কোভিডবিধির মধ্যে থাকবেন তারা। অন্য দিকে, স্ত্রী-বান্ধবীরা কোভিডবিধির বাইরে থাকবেন।

কাতারে আরও অনেক কড়া নিয়ম রয়েছে। যেমন, প্রকাশ্যে থুতু ফেলা যাবে না। ৬০০০ পাউন্ড (৫ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা) জরিমানা হতে পারে। সরকারি বাড়ির আশেপাশে নিজস্বী তোলা যাবে না।

ইংল্যান্ড সরকারের তরফেও বলে দেওয়া হয়েছে, কাতার যে নিজের দেশের মতো নয়, এটা বুঝতে হবে। তাই নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করা চলবে না।

সূত্র: আনন্দবাজার

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এক সপ্তাহে কমিটি গঠন

ফুটবলারদের সঙ্গিনীদের জন্য বিলাসবহুল প্রমোদতরী! কী আছে সেখানে

আপডেট টাইম : ০১:৩৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিলাসবহুল প্রমোদতরী। ৯৭০৫ কোটি টাকার প্রমোদতরী দোহার বন্দরে ভেড়ার আগেই তৈরি হয়েছে বিরাট বিতর্ক।

দামের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হলেও এই প্রমোদতরীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শ্রমিকদের ঘাম-রক্ত। জানা গিয়েছে, সেই প্রমোদতরী তৈরি করতে যে সব শ্রমিকরা পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ক্রীতদাসদের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি, কম মাইনেয় দিনের পর দিন খাটতে হয়েছে।

স্পেনের একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, কিউবার প্রায় হাজার খানেক শ্রমিকের সঙ্গে অত্যাচার করা হয়েছে। তাঁদের থাকতে হয়েছে অস্বাস্থ্যকর জায়গায়। নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয় পাসপোর্টও।

শুধু কম বেতনই দেওয়া হয়নি, পুরো বেতনের টাকাও মেটানো হয়নি। জানা গিয়েছে, ভারতীয় মুদ্রায় মাসে হাজার দশেক টাকাও বেতন ছিল না ওই শ্রমিকদের। অনেকেই একে মধ্যযুগীর ক্রীতদাস প্রথার সঙ্গে তুলনা করছেন।

অনেকে টেনে এনেছেন কাতার সরকারের প্রসঙ্গ, যারা একই ভাবে এশীয় শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যবহার করেছে এবং তাঁদের দিয়ে স্টেডিয়াম, রাস্তা, রেলপথ এবং আরও বিভিন্ন জিনিস তৈরি করিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা কাতারে পৌঁছে গিয়েছেন। তাদের স্ত্রী-বান্ধবীরাও ধীরে ধীরে এসে পৌঁছবেন। তবে ফুটবলারদের সঙ্গে তারা থাকবেন না। ইংরেজ ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে।

কাতারের রাজধানী দোহার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সেই প্রমোদতরী থাকবে। সেখানে আধুনিক যা ব্যবস্থা রয়েছে, তা হতবাক করার জন্যে যথেষ্ট।

জানা গিয়েছে, সেই ক্রুজে শপিং মল, সালঁ, স্পা-র মতো বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়া যাবে। আমোদ-প্রমোদ এবং বিনোদনের আরও হাজার রকম উপাদান থাকছে সেই ক্রুজে।

এটি বিশ্বের অন্যতম দামি প্রমোদতরী। একটি রাতের জন্য খরচ হতে পারে ২,৪৩৪ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা)। ফলে ধনী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এখানে থাকতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে না।

২০১৬ থেকে এই প্রমোদতরী বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ইটালির সংস্থা এমএসসি ক্রুজেস এটি তৈরি করেছে। মোট চারটি প্রমোদতরী তৈরি করা হয়েছে ৪০০ কোটি ইউরোয় (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩,৮৩২ কোটি)।

সুয়েজ খাল থেকে ইতিমধ্যেই এই প্রমোদতরী কাতারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ইংল্যান্ডের ২৬ জন ফুটবলারের বেশির ভাগেরই স্ত্রী-বান্ধবীরা ওই প্রমোদতরীতে থাকবেন।

এ বার দেখে নেওয়া যাক কী কী থাকবে সেই প্রমোদতরীতে। সূত্রের খবর, একাধিক সাঁল, বুটিক, বাচ্চাদের গাড়ি নিয়ে খেলার জায়গা ছাড়াও ছ’টি সুইমিং পুল, ১৪টি সমুদ্রমুখী জাকুজ়ি এবং একটি ড্রাই-স্লাইড থাকবে।

প্রমোদতরীর স্পোর্টসপ্লেক্স এলাকায় বাস্কেটবল, বাম্পার কার, রোলার ডিস্কো রিঙ্ক থাকছে। ফলে মজা করার কোনও উপাদানই বাকি রাখা হচ্ছে না।

১৩টি রেস্তোরাঁ এবং পানশালা ছাড়াও প্রমোদতরীতে মাইক্রো-ব্রিউয়ারি থাকছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের বিভিন্ন মদ পাওয়া যাবে।

এই প্রমোদতরী লম্বায় ১০৯৪ ফুট, উচ্চতা ২২৩ ফুট এবং প্রস্থে ১৫৪ ফুট। এর গতি ২২.৭ নট। মোট ৬,৭৬২ জন যাত্রী থাকতে পারবেন। তাঁদের জন্য কর্মী থাকবেন ২,১৩৮ জন। প্রমোদতরীর ২১টি ডেক রয়েছে।

কাতারের বাকি জায়গায় মদ্যপান নিয়ে প্রচুর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই প্রমোদতরী যেহেতু জলভাগে থাকবে, তাই মদ্যপান করতে কোনও অসুবিধা নেই।

ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে। বিলাসে থাকার জন্যে তাতেও অবশ্য প্রচুর গাঁটের কড়ি খসাতে হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, এরিক ডায়ারের বান্ধবী তথা মডেল আনা মডলার সেখানে থাকবেন।

কলকাতায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলে যাওয়া ফুটবলার ফিল ফডেনের বান্ধবী রেবেকা কুক এই প্রমোদতরীতে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।

প্রমোদতরীর সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী বলেছেন, “এই প্রমোদতরীতে থাকা অসাধারণ ব্যাপার। বিশ্বকাপ দেখতে এলে এর থেকে ভাল জায়গা আর হয় না। মদ্যপানেও কোনও অসুবিধা নেই। দোহার অনেক হোটেলে রৌদ্রস্নান করা যাবে না। এখানে সেই সুবিধাও রয়েছে।”

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ফুটবলাররা নিজেরাই হয়তো স্ত্রী-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। আল ওয়াকরার হোটেলে কড়া কোভিডবিধির মধ্যে থাকবেন তারা। অন্য দিকে, স্ত্রী-বান্ধবীরা কোভিডবিধির বাইরে থাকবেন।

কাতারে আরও অনেক কড়া নিয়ম রয়েছে। যেমন, প্রকাশ্যে থুতু ফেলা যাবে না। ৬০০০ পাউন্ড (৫ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা) জরিমানা হতে পারে। সরকারি বাড়ির আশেপাশে নিজস্বী তোলা যাবে না।

ইংল্যান্ড সরকারের তরফেও বলে দেওয়া হয়েছে, কাতার যে নিজের দেশের মতো নয়, এটা বুঝতে হবে। তাই নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করা চলবে না।

সূত্র: আনন্দবাজার